প্রাণ ও প্রকৃতিতে ফুলের আবির নিয়ে দুয়ারে বসন্ত
জীর্ণতা কাটিয়ে গাছে গাছে কচি পাতায় নব প্রজন্মের ডাক। ফুলের রস আহরণে মাতোয়ারা কীটপতঙ্গ আর পাখিকুল। দখিনা হাওয়ায় পুলকিত শিহরণে মানুষের মন। সুরেলা কণ্ঠে প্রিয়াকে ডেকে আকুল কোকিল। প্রাণ ও প্রকৃতিতে এমনই আবির নিয়ে আজ দুয়ারে ঋতুরাজ বসন্ত।
বসন্ত নিয়ে অনেক কবি লিখেছেন গান, গল্প, উপন্যাস ও কবিতা। বিভিন্ন বয়সী মানুষের মাঝে বসন্ত নিয়ে উচ্ছাস ও উদ্দীপনার শেষ নেই। নিজের মতো করেই বসন্ত উদযাপন করে প্রকৃতি ও মানুষ। এদিনে ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেতে দূর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসে প্রেমিক অথবা প্রেমিকা। নানান বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে গোলাপসহ নানা না জানা ফুলে নিয়ে জানায় অভিবাদন ও ভালোবাসা।
ফাগুনে আগুন নিয়ে আসে কৃঞ্চচুড়া আর শিমুল। পাখ পাখালি ঋতুরাজ বসন্তে পায় নতুন ছোঁয়া। বিশেষ করে গাছে গাছে ফুলের সমারোহ পাখিকুলকে ব্যস্ত করে রাখে।
মেহেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব একেএম শফিকুল আলম ফাগুন সম্পর্কে বলেন, মানুষের শরীর মন ও প্রকৃতিতের প্রভাব ফেলে। পুষ্প পল্লবে ভরে উঠে বসন্তের ছোঁয়ায়। মানুষের মধ্যে শীতের জড়তা কাটিয়ে সৃষ্টিশীল ভাব আসে। প্রকৃতির সাথে মানুষের খুবই নিবিড় সম্পর্ক। যেমন বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে মানুষকে উদাস করে দেয় তেমনি বসন্তের ফুলের বাহার ও সৌরভ মানুষকে উচ্ছল করে। তার মানের ভেতর কাজের ও সৃষ্টির প্রেরণা জোগায়। সেজন্য বসন্তনকে বলা হয় ঋতুরাজ।
সাহিত্যে বসন্ত নিয়ে আমাদের সব কবি সহিত্যিক এতো মাতামাতি করেছেন যে অন্য কোন ঋতুকে নিয়ে এতো মাতামাতি হয়নি। এবারের বসন্ত আসার আগেই আমাদের যুবক ক্রিকেটাররা বসন্তের সুবাতাস বইয়ে দিয়েছে।
গাছগাছালির ছায়াঘেরা মেহেরপুর জেলায় বসন্তের আগমনী বার্তা সারা দেশের মতই ভিন্ন কিছু নয়। প্রকৃতিতে ফুলের নানা আবির মনের গহীনের সুপ্ত বাসনায় প্রাণের দোলা দেয়। এমনই অনুভূতি প্রকাশ করলেন অনেকে।
বসন্ত নিয়ে ভিন্ন মতও রয়েছে অনের মনে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চাকরিজীবী নারী বলেন, ছোটবেলায় যখন স্কুল কলেজে পড়তাম তখন বাসন্তি শাড়ী পরে যেতাম তখন অনেক সুখ অনুভূত হতো। এখন কর্মজীবন বসন্ত নিয়ে আমার কোন অনুভূতি নেই। বসন্তে নতুন কিছু হয় না। কর্মজীবনের প্রতিটি দিনই ব্যস্তময় আর ঝামেলাপূর্ণ। তারপরেও বাঙালি বলে কথা। বসন্ত সবার জীবনে নতুন ছোঁয়া দিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করি।
কবি ফররুখ আহম্মেদ কবিতায় লিখেছেন- ‘‘ফাগুনে শুরু হয় গুনগুনানি, ভোমরটা গায় গান ঘুম ভাঙানি।” সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘‘ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত” বহুল প্রচলিত এই বাক্যের সাথেই একাত্ব হয়ে বসন্ত উদযাপন হোক মানুষের কল্যাণে এমনই প্রত্যাশা সকলের।