চা-বাগানে অবারিত সবুজের বুকে পাখির মঞ্জিল
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফিনলে টি কোম্পানির চা-বাগানের রাজঘাট লেকের জলাধারের আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির ওড়াউড়ি। পুরো লেকেই যেনো বসেছে অতিথি পাখির মেলা। লেকের চারপাশজুড়ে রয়েছে টিলায় টিলায় সবুজ চায়ের বাগান। আর মধ্যখানের সমতলে এই লেক। লেকের স্বচ্ছ নীল জলে ফুটেছে অসংখ্য লাল শাপলা। সঙ্গে রয়েছে কচুরিপানা। উঁচু-নিচু টিলা থেকে লেকের পার পর্যন্ত নেমে এসেছে চায়ের বাগান। এ যেন এক অনন্য সৌন্দর্য্য।
শহর থেকে এই লেকের দূরত্ব প্রায় ১৯ কিলোমিটার। আর বাগানের চা কারখানা থেকে আধা কিলোমিটার এগোলেই রাস্তার বাম পাশে এই লেক। সারাদিন পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে নীরব-নির্জন চা বাগানে এক অন্য রকমের আবহের সৃষ্টি করে তুলেছে। স্থানীয়রা এ স্থানটিকে পাখির ‘মঞ্জিল’ বলে ডাকেন। বাগানের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা রাস্তার পাশে পথচারীরা পাখিদের এই ডানা ঝাপটানো জলখেলি মনের আনন্দে উপভোগ করছেন। চা-বাগানের সবুজের সমারোহে পাখিদের অবারিত সৌন্দর্য্য এক নজর দেখতে দূর-দুরান্ত থেকে আসতে শুরু করেছেন পাখি প্রেমীরা। পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়ে চলা, খাবারের সন্ধানে লেকের এক পাশ থেকে আরেক পাশে অবাধ বিচরণ দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।
পাখির এ মঞ্জিলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার পাখির মেলা বসেছে যেনো এ লেকে। একটু পরপরই পাখিরা ডানা মেলে একসঙ্গে দলে দলে উড়ছে লেকের ওপর। আকাশে কয়েকবার ওড়াওড়ি করে আবার ফিরে এসে বসছে লেকে শাপলাজুড়ে থাকা পানিতে। সুনসান নীরব চা-বাগানের ভেতরে সবুজে ঘেরা লেকে পরিযায়ী এসব পাখির জলকেলি- খুনসুটিতে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। অনেক দূর থেকে পাখিদের ডানা ঝাপটানোর শব্দ শোনা যায়। এখানে রয়েছে পানকৌড়ি, লালচে বক, রাজ সরালি, কালো লেজ জৌরালিসহ নানা পরিযায়ী পাখি। এসব পাখি দেখতে অনেক জায়গা থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা।
ওই বাগানের ৯, ১০ ও ১১ নং সেকশনের টিলায় চারদিকে সবুজ চায়ের বাগান। তিন টিলার মধ্যখানে প্রাকৃতিকভাবেই প্রায় ১০ একর আয়তনের একটি লেক। এই লেকে ফুটেছে লাল শাপলা। থোকায় থোকায় কচুরিপানা এই কচুরিপানা আর শাপলার লতায় পাতায় বসে খেলায় মেতে উঠছে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি। তারা কখনো ঝাঁকে ঝাঁকে নীল আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে, কখনোবা জলাশয়ের নীল জলে এসে খুনসুটি করছে। জলশায় ঘিরে হাজার পাখির কলরবে এক মধুময় সুরের আবহ বিরাজ করছে।
ঘুরতে আসা শিক্ষক এহসানবিন মুজাহির বলেন, চা-বাগানের মাঝখানে লেক। লেকের স্বচ্ছ পানিতে ফুটে আছে অসংখ্য লাল শাপলা। আর নীল আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। পরিযায়ী এসব পাখিদের কিচিরমিচিরে মুখর পুরো এলাকা। এখানে পাখিদের আনন্দে মেতে উঠার সৌন্দর্য্য খুব কাছে থেকে দেখা যায়।
পাখি বিশেষজ্ঞরা জানান, শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের বাইক্কা বিলে প্রতিবছর প্রচুর পাখি দেখা গেলেও এবার এর সংখ্যা কমেছে। বাইক্কা বিলের সেই পাখিগুলো নিরাপদ স্থান মনে করে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। রাজঘাট লেক এর অন্যতম। এখানে অনেক ধরনের পরিযায়ী পাখি রয়েছে। খুব কাছ থেকে এদের ছবি নেওয়া যায়। এখানে সারাদিনই পাখির কলকাকলিতে মুখর করে থাকে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, পরিযায়ী পাখিগুলো যেন নিরাপদে থাকতে পারে, সে জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ পাখি শিকারের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।