কুল ও পেয়ারা চাষে সফল শামসুর
৬ বিঘা জমিতে কাশ্মীরি বেবি সুন্দরী কুল এবং ৪৯ বিঘা জমিতে থাই পেয়ার বাগান গড়ে তুলেছেন শামসুর রহমান। তার পুরো বাগানজুড়ে এখন কুল ও পেয়ারার লাল-সবুজের সমারোহ। পেয়ারার মতো বেবি সুন্দরী কাশ্মীরি কুলেও লাভের আশায় শামসুরের মুখে দেখা দিয়েছে হাসিক ঝিলিক।
শামসুর রহমানের বাড়ি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার গনেশপুর গ্রামে। বার্তা২৪.কমকে তিনি জানান, ৬ মাস আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বেবি সুন্দরী কাশ্মীরি কুলের চারা আনেন তিনি। আনা-নেওয়াসহ চারা প্রতি তার খরচ পড়ে ৫০ টাকা। ৬ বিঘা জমিতে প্রায় ৭শ’ চারা রোপণ করেন। এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ লাখ টাকার মতো। প্রথম বছর হলেও প্রতিটি গাছেই প্রচুর পরিমাণে কুল ধরেছে।
চলতি বছর গাছ প্রতি গড়ে ৩০ কেজি করে কুল হতে পারে বলে ধারণা করছেন শামসুর রহমান। দ্বিতীয় বছর থেকে এর পরিমাণ দ্বিগুণ হবে বলে তার প্রত্যাশা।
শামসুর বলেন, এসব গাছ থেকে টানা ৫-৭ বছর পর্যন্ত ফল বিক্রি করা যাবে। ঢাকা শহরে এ কুল প্রায় ১শ’ টাকা কেজি। তিনি এখনও বিক্রি শুরু করেননি তবে সপ্তাহ খানেক পর থেকে শুরু করবেন। সব মিলিয়ে এ বছর তিনি ৭-৮ লাখ টাকার কুল বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় মাস্টার্স সম্পন্ন করে কৃষি কাজ শুরু করেন সামসুর রহমান। ২০০২ সালে অন্যের ১৭ বিঘা জমি লিজ নিয়ে প্রথমে শুরু করেন শবরি কলার আবাদ। এরপর সাগর কলা এবং সবশেষে চিনিচম্পা কলার চাষ করেও ভালো মুনাফা করেছেন তিনি।
ছেলেবেলা থেকেই কৃষির প্রতি বিশেষ ভালোলাগা ছিল শামসুরের। ২০০২ সালে পড়াশোনার পাশাপাশি ১৭ বিঘা জমিতে শবরি কলা চাষের মাধ্যমে তার কৃষিতে হাতেখড়ি। প্রথম দিকে কলা থেকে বেশ লাভ করলেও পরবর্তীতে অজ্ঞাত একটি রোগের জন্য শবরি কলা চাষ বাদ দিয়ে শুরু করেন চিনিচম্পা এবং সাগর কলা চাষ।
এরপর লেখাপড়া শেষ করে পার্শ্ববর্তী আরও কিছু জমি লিজ নিয়ে বড়ো পরিসরে শুরু করেছেন ফলের বাগান। এখন ৪৯ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন পেয়ারার বাগান এবং ৬ বিঘা জমিতে করেছেন বেবি সুন্দরী কাশ্মীরি কুলের বাগান। পেয়ারার মতো কুলেও সফল হয়েছেন বলে জানান শমসুর রহমান।
বেকার যুবকদের উদ্দেশে শমসুর বলেন, চাকরির পিছনে অবৈধ বিনিয়োগ না করে বিঘা প্রতি ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ১ বিঘা জমিতে কুল বাগান করে বছরে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। কুল চাষেই ঘুরে যেতে পারে একজন বেকার যুবকের ভাগ্যের চাকা।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, পানি সেচের সুবিধাসহ রৌদ্রজ্জ্বল ও উচুঁ জমিতে কুলের বাগান ভালো হয়। তবে বাগানে যত বেশি রোদের আলো লাগবে সেই জমির কুল বেশি মিষ্টি হবে।
তিনি বলেন, ৫-৬ হাত দূরত্বে গাছের চারা রোপণ করতে হয়। এ গাছে তুলানামূলক রোগ-বালাই কম। নতুন করে কেউ যদি কাশ্মীরি কুলের বাগান করতে চান তবে তাকে অবশ্যই সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।