ধান সংগ্রহ অভিযান: ভোলায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অনিশ্চয়তা

  • মোকাম্মেল মিশু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ভোলা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ক্রয় করা ধান উঠানো হচ্ছে ট্রাকে/ ছবি: বার্তা২৪.কম

ক্রয় করা ধান উঠানো হচ্ছে ট্রাকে/ ছবি: বার্তা২৪.কম

সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযানের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৯ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু ভোলায় নির্ধারিত পরিমাণ ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। জেলার ৭ উপজেলায় ২০ হাজার মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করার কথা থাকলেও ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংগৃহীত ধানের পরিমাণ মাত্র ৮ হাজার মেট্রিকটন।

খাদ্য গুদামে পর্যাপ্ত জায়গার অভাব ও মানসম্মত ধান না পাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে না। কৃষকদের দাবি, ঘুষ না দিলে খাদ্য বিভাগ ধান নিচ্ছে না। ফড়িয়ারা কৃষিকার্ড সংগ্রহ করে কিংবা ভুয়া কার্ড দেখিয়ে ধান বিক্রি করছে বলেও অভিযোগ তাদের।

বিজ্ঞাপন

কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান বিক্রি করে অনেক সময়ই খরচ তুলতে পারে না। যে কারণে সরকার বাড়তি দামে ধান কিনে থাকে, যাতে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে। এরই অংশ হিসাবে দেশের অন্যান্য জেলার মতো ভোলায়ও চলছে ধান সংগ্রহ অভিযান।

ধান নেওয়া হচ্ছে গুদামে/ছবি: বার্তা২৪.কম

ভোলার ৭ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের খাদ্য কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকদের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য জানা যায়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ভোলা থেকে ১৯ হাজার ৯ শত ৪৮ মেট্রিকটন ধান এবং ১ হাজার ৯ শত ৮০ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই পরিমাণ ধান সংগ্রহ করা সম্ভব নয় বলে জেলা খাদ্য বিভাগ ১৬ হাজার মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়। তাও খাদ্য বিভাগের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ছে। কারণ গুদামগুলোতে ধান রাখার প্রয়োজনীয় জায়গা নেই। জেলার ৮টি খাদ্য গুদামের ধারণ ক্ষমতা ১৫ হাজার ৭ শত ৫০ মেট্রিকটন। এসব গুদামে বর্তমানে ধান এবং চাল মিলিয়ে মজুদ আছে প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিকটন। খালি আছে ৭ শত ৫০ মেট্রিকটন।

বিজ্ঞাপন

খাদ্য বিভাগ গুদামে মজুদ ধান-চাল দ্রুত খরচ করে গুদামের জায়গা বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবুও নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে ভোলার কৃষকরা সরকারি দামে ধান বিক্রি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হচ্ছে বলে দাবি করছেন কৃষকরা। ।

কৃষকদের দাবি, ধানের ন্যায্যমূল্য তারা পান না। ধান বেচতে গেলে অপমানিত হতে হয়। এছাড়া কার্ড থাকলেও দালালদের টাকা দিতে হয়, অফিসে ঘুষ দিতে হয়।

সরকারি দামে কেনা হচ্ছে ধান/ছবি: বার্তা২৪.কম

দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলা থেকে। কৃষকদের এ অভিযোগ মানতে রাজি নন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। কৃষি বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন ধান বিক্রি করতে আগ্রহী ২৬ হাজার ৮ শত ১৬ জন কৃষক থেকে লটারির মাধ্যমে ১১ হাজার ৩ শত ৬৪ জন কৃষককে নির্বাচিত করে যে তালিকা দিয়েছে তাদের কাছ থেকেই ধান ক্রয় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে খাদ্য বিভাগ।

ভোলার দৌলতখান খাদ্য সংরক্ষণাগারের অফিসার ইনচার্জ শান্তি রঞ্জন দাস বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রণয়নকৃত কৃষক তালিকা অনুযায়ী আমরা প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় শুরু করেছি। এখানে মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হয় না। যে অভিযোগটি এসেছে ঘুষ লেনদেন সেটি আদৌ সত্য নয়।

এদিকে ২০ নভেম্বর থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩ মাসে জেলায় ধান সংগ্রহ হয়েছে ৮ হাজার মেট্রিকটন। সংগ্রহ অভিযান শেষ হতে বাকি মাত্র ১২ দিন। এ সময়ে নির্ধারিত ধান সংগ্রহ অনেকটাই অনিশ্চিত। তবুও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং কাঙ্ক্ষিত ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন।

গুদামে রাখা হচ্ছে ধান/ছবি: বার্তা২৪.কম

ভোলার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রিয়াজুর রহমান রাজু বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ৮ হাজার মেট্রিকটন ধান ক্রয় করেছি। বাকি ৮ হাজার মেট্রিকটন ধান আমরা আশা করছি খুব দ্রুত ক্রয় করতে পারবো। স্থান সংকট বিবেচনায় নিয়ে আমরা কিছু ধান মিলে প্রেরণ করেছি এবং কিছু চাল জেলার বাইরে প্রেরণ করেছি। যার জন্য আমাদের গুদামে যে স্থান সংকট ছিলো সেক্ষেত্রে কিছু জায়গা সৃষ্টি হয়েছে। সে জায়গাটিতে আমরা আশা করছি আগামী দশ থেকে বারো দিনের মধ্যে ধান সংগ্রহ করতে পারবো।

চলতি মৌসুমে জেলার ৭ উপজেলায় ১ লাখ ৭৯ হাজার ২শত ৮০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়। উৎপাদিত হয় ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৮ শত ৫৩ মেট্রিকটন। নিজেদের ১ বছরের খাবার এবং বীজ ধানের জন্য প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিকটন মজুদ রেখে বাকি সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিকটন ধান কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে ভোলার ৪ লাখ ১৭ হাজার ২ শত ২১ জন কৃষক।