ধর্ষণের প্রতিশোধ নিতে স্বামীকে খুন

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাজীপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার সামিরা আক্তার

র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার সামিরা আক্তার

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিম খণ্ড (প্রশিকার মোড়) এলাকায় এক ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যার ১৪ দিন পর নিহতের চতুর্থ স্ত্রী ও শ্বশুরকে গ্রেফতার করে খুনের রহস্য উন্মোচন করেছে র‌্যাব।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে র‌্যাব-১ পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের একটি দল ঢাকার দক্ষিণ খান থেকে সামিরা আক্তার (২৬) ও তার বাবা আলী হোসেনকে (৫৫) গ্রেফতার করে। আলী হোসেন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার মৃত ফজলুল হকের ছেলে। তিনি জয়দেবপুর এলাকার ছামিদুলের বাড়ির ভাড়াটিয়া।

বিজ্ঞাপন

আর নিহত আব্দুর রহমান (৫২) শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর উত্তরপাড়া গ্রামের নাছিম উদ্দিনের ছেলে।

র‌্যাব-১ এর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, চতুর্থ স্ত্রী সামিরাকে নিয়ে শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিম খণ্ড (প্রশিকার মোড়) এলাকার একটি বাসার তিনতলার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন জমি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান।

বিজ্ঞাপন

গত ১০ ফেব্রুয়ারি আব্দুর রহমানের ব্যবসায়িক অংশীদার রতনের সঙ্গে স্ত্রী সামিরাকে যৌন কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করান আব্দুর রহমান। এই ক্ষোভে ঘটনার দিন রাত ৩টার দিকে ধারালো দা দিয়ে স্বামীকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলা কেটে হত্যার পর মরদেহ অ্যাসিড দিয়ে ঝলসে তোশকে মুড়িয়ে রাখেন সামিরা। হত্যার পর তিনদিন সামিরা মরদেহ নিয়ে একই বাসায় অবস্থান করেন। এরপর মরদেহ সরিয়ে ফেলতে ব্যর্থ হয়ে মা-বাবার সহায়তায় বাসা থেকে পালিয়ে যান সামিরা।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, ঘটনার পর কালিয়াকৈর থানার ফুলবাড়ী এলাকার এক বান্ধবীর বাসায় দুদিন আত্মগোপন করার পর ১৫ ফেব্রুয়ারি নওগাঁয় মামার বাসায় যান সামিরা। সেখানে কিছুদিন অবস্থান করে ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দক্ষিণখান এলাকায় চাচার বাসায় আত্মগোপন করেন তিনি।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সামিরা খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন।

র‌্যাবের তথ্য মতে, আব্দুর রহমান ও সামিরার বাড়ি একই এলাকায়। ২০১৬ সালে আব্দুর রহমান দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীতে বসবাস করতেন। সামিরা টঙ্গী সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পরীক্ষার্থী ছিলেন। দুজন পূর্বপরিচিত হওয়ায় আব্দুর রহমানের বাসায় থেকে পরীক্ষা দিতেন সামিরা। তখনই বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন আব্দুর রহমান। এরপর খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অচেতন করে সামিরাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন আব্দুর রহমান। একই সঙ্গে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেন। পরে ধর্ষণের ভিডিও এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন চলে ধর্ষণ।

এক পর্যায়ে ধর্ষণের ভিডিও প্রকাশ হলে সামিরাকে তালাক দেন স্বামী। পরে সামিরা শ্রীপুরের নয়নপুর এলাকায় একটি ফার্মেসি পরিচালনা করতেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সামিরাকে বিয়ে করে কেওয়া পশ্চিম খণ্ড এলাকায় ভাড়া বাসায় সংসার শুরু করেন আব্দুর রহমান।

তাদের বিয়ের পর থেকে ঘটনার দিন পর্যন্ত আব্দুর রহমান তার ব্যবসায়িক স্বার্থে ও টাকার বিনিময়ে ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে স্ত্রী সামিরাকে যৌন কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করতেন। যৌন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ডিভোর্স চাইলে সামিরাসহ তার মা-ভাইকে হত্যার হুমকি দেন। মূলত যৌন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আব্দুর রহমানকে খুন করেন সামিরা।

উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৩টার দিকে শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিম খণ্ড (প্রশিকা মোড়) এলাকার তিন তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ, ক্রাইমসিন ইউনিট এবং সিআইডির উপস্থিতিতে এক ব্যক্তির ঝলসানো গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এক মাস আগে ওই ভবনটির দ্বিতীয় তলা ভাড়া নিয়ে সামিরা ও আব্দুর রহমান বসবাস করে আসছিল।