সাভারে ফুটপাত দখল করে মাছের ব্যবসায় মানিকগঞ্জের দারোগা
সাভারে ফুটপাতে দখল করে সেখানে মাছের বাজারে ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জে কর্মরত এক দারোগার বিরুদ্ধে। তার নাম ইলিয়াস হোসেন। তিনি মানিকগঞ্জ জেলায় কোর্টে কর্মরত।
ফুটপাত দখল করে দারোগার মাছ ব্যবসার কারণে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে এস আই ইলিয়াস হোসেনের এ ধরনের তৎপরতার বিষয়ে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ ও সাভার থানা পুলিশ এবং হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা বিব্রত। সেখানে থাকা কর্মচারীরা জানান, ফুটপাতে এই মাছের দোকানের মালিক ডিবির এস আই ইলিয়াস। কোনো কিছু বলার থাকলে তাকে বলতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাইওয়ে থানার একজন কর্মকর্তা জানান, আমরা উচ্ছেদ করতে গেলেই প্রথমেই জানানো হয়, দোকানটি বসিয়েছেন এসআই ইলিয়াস। অন্যগুলো উচ্ছেদ করতে গেলেই দোকানটি দেখিয়ে বলা হয়, দারোগার দোকান উচ্ছেদ না করে নিরীহ মানুষদের দোকান উচ্ছেদ করেন। এটা কোন বিচার। এসব কারণে আমরা বিব্রত।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন সাভার ঢাকা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশে কর্মরত থাকার সুবাদে রিপন নামে এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে নিয়ে উলাইল এলাকায় অভিনেতা ডিপজলের মাছের আড়তে মাছ ব্যবসা শুরু করেন এস আই ইলিয়াস।
গত ডিসেম্বরে ঢাকা জেলা থেকে তাকে বদলি করা হয় মানিকগঞ্জে। সাভারে রাজ্জাক মার্কেটের মাছের ব্যবসায়ী নুরু মিয়া বার্তা২৪.কম-কে জানান, আমরা রাজ্জাক মার্কেটে মোটা অঙ্কের অগ্রিম জামানত ও ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করি। সম্প্রতি ডিবির গাড়ি নিয়ে ইলিয়াস সাহেব সেখানে আসেন। তার দাপটে কয়েকজন রাতারাতি মার্কেটের সামনে চৌকি বসিয়ে শুরু করেন মাছের ব্যবসা। এতে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া কিছু করার নেই আমাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মার্কেটের ঠিক সামনের ফুটপাতে দারোগার নামে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করার বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ করলে উল্টো আমাদের হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়।
মনে করিয়ে দেওয়া হয়, এটা ডিবির ইলিয়াস সাহেবের দোকান। যাদের তিনি ফুটপাতে বসিয়েছেন তাদের দাপটেই আমরা যেখানে তটস্থ সেখানে পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ করবো কিভাবে?
এসআই ইলিয়াসের মাছের ব্যবসা পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজ্জাক মার্কেটের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রাজ্জাক বার্তা২৪.কম-কে জানান, সম্প্রতি এসআই ইলিয়াস নিজেই আমার মার্কেটে আসেন দোকান ভাড়া নিতে। সামনের দিকে একটি দোকান দেখিয়ে সেটি তার নামে বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ করেন আমাকে।
তিনি আমাকে জানান, উলাইলে তার মাছের আড়ত আছে। সেখানে অবিক্রিত মাছগুলো খুচরা বাজারে বিক্রির জন্যে তার দোকানটি জরুরি দরকার।
জবাবে আমি জানাই, একজনের নামে বরাদ্দ ওই দোকানটির চুক্তির মেয়াদ শেষ না হওয়ার আগে আপনার নামে বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ নেই। তারপর রাতারাতি দারোগার পক্ষে আমার মার্কেটের ঠিক সামনে চৌকি বসিয়ে মাছ ব্যবসা পরিচালনা করতে দেখা যায়।
ব্যবসায়ীরা আমার কাছে প্রতিকারের জন্যে এলেও পুলিশের ভয়ে কিছু বলতে পারিনি।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে জানান, ফুটপাতের সামনে দারোগা ইলিয়াস দোকান বসানোর পর থেকে ফুটপাত মুক্ত রাখার বিষয়ে পুলিশের অভিযান থেমে গেছে।
মূলত তাকে ঘিরেই আবারও ফুটপাত দখলের মহোৎসব শুরু হয়েছে সাভারে।
সাভার মডেল থানার ওসি এ এফ এম সায়েদ বার্তা২৪.কম-কে জানান, ফুটপাত দখলকারীদের ফুটপাতে কোন ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেখানে পুলিশের কারো বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আসলে তা গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হবে।
ঢাকা উত্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান জানান, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এসআই ইলিয়াস মানিকগঞ্জে থেকে সাভারে কি কাজ করেন তা আমাদের দেখার বিষয় না। তার জবাবদিহিতা মানিকগঞ্জে জেলা পুলিশের কাছে। তবে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা পরিচালনার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানিকগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, মানিকগঞ্জে কর্মরত থেকে জেলার বাইরের কেউ কোনো অনৈতিক কাজে লিপ্ত হলে সেটা দেখবে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ। তবে জেলা পুলিশের কারো বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম বা অনৈতিক কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগ পেলে সেটি খতিয়ে দেখা হবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে এসআই ইলিয়াস বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এক আত্মীয়ের পক্ষে দোকান বরাদ্দের বিষয়ে রাজ্জাক মার্কেটে গিয়েছিলাম এটা সত্যি। দোকান বরাদ্দ পাইনি। তিনি জানান, আমার আত্মীয়-স্বজন ব্যবসা করতেই পারে।
ফুটপাত দখল করে চৌকি বসিয়ে মাছের ব্যবসা শুরু করলেন কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আপনি কি আমাকে সেখানে দেখেছেন? আপনি কোথায় আছেন। আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। জানেনই তো, আমি দারোগা। আমি তো আর ব্যবসা করতে পারি না। নিশ্চয়ই আমার নাম ভাঙিয়ে কেউ ব্যবসা করছে। যাই হোক নিউজটিউজ করার দরকার নেই। আমি বলে দিচ্ছি ফুটপাত থেকে তারা দোকান সরিয়ে নেবে।’