চারুকলা উৎসবে জলিল মন্ডলের 'বায়োস্কোপ'
মুড়ির টিনের মতো একটা বাক্স। যার গায়ে রয়েছে একাধিক গোলাকার জানালার মতো জায়গা। সেখানে চোখ রাখলেই বাক্সের ভেতর দেখা যাবে- হাজার মাইল দূরের দিল্লি, মক্কা-মদিনা নগরী, রাম-লক্ষণের যুদ্ধ, ক্ষুদিরামের ফাঁসি, আফগানের যুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসহ অনেক ঘটনাবহুল রঙিন ছবি। এই বিস্ময় বাক্সের নাম বায়োস্কোপ।
ছোট বেলায় শিশুদের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল বায়োস্কোপ। হাতে খঞ্জনি আর গানের তালে তালে পাল্টে যায় বাক্সের ভেতরের রঙিন ছবি। আর তা দেখে যেন গল্পের জগতে হারিয়ে যায় ছেলে বুড়ো সবাই।
এমন দৃশ্য এখন নীলফামারীর পর্যটন কেন্দ্র নীলসাগরে। এই পর্যটনকেন্দ্রে চলছে আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব-২০২০। রাজশাহী থেকে জাদুর বাক্স বায়োস্কোপ নিয়ে উৎসব মাতাতে এসেছেন আব্দুল জলিল। তার সেই বায়োস্কোপ নতুন প্রজন্মের চোখে এক ঝলকে তুলে ধরছে রঙিন বিশ্ব।
দর্শনীয় এই বায়োস্কোপে আকৃষ্ট করতে আব্দুল জলিল এক হাতে খঞ্জনি, অন্য হাতে লাল কাপড় নিয়ে ছন্দভরা বাক্যে অবিরাম বলে যাচ্ছেন- ‘এই বারেতে দেখা গেল, জরিনা সুন্দরী এলো, কোমরেতে বিছা ছিল, কানে তাহার দুল ছিল আহা কি চমৎকার দেখা গেল, আরও কিছু রইয়া গেল, তারা জ্যোতি চইলা গেছে, দেখতে কত বাহার আছে, এইবারেতে দেখেন ভাল, আপন রাজা সামনে আছে, তীর-ধনুক হাতে আছে, কত সৈন্য শহীদ হলো, পরিস্থানের পরি আছে, দেখতে কত বাহার আছে, ডানে বামে নজর করো, মদিনারই শহর আছে, নবী সাহেবের পাগড়ি আছে, নবী সাহেবের লাঠি আছে, আরবি দিয়ে লেখা আছে।
এইবারেতে দেখেন ভাল মক্কা শরিফ সামনে আছে, কত হাজী হজ করিতে দেশ থেকে রওনা দিছে, আরও আছে দার্জিলিংয়ের পাহাড়, সুন্দরবনের বাঘ-ভাল্লুক। বাস্তবে সুন্দরবনে ভাল্লুক না থাকলেও গল্পকথায় বাঘের সঙ্গে ভাল্লুক থাকবেই। অবশেষে ‘কি চমৎকার দেখা গেল, তারা জ্যোতি চইলা গেল, অন্ধকার পইড়া রইল।’
রাজশাহী জেলার বাগমারার আব্দুল জলিলের সুর ছন্দে বারবার ভাসছে 'এই দ্যাখেন ভাই ঢাকা শহর, এই দ্যাখেন ভাই দিল্লি'।
রাজশাহী থেকে বায়োস্কোপ নিয়ে মেলায় অংশ নেয়া আব্দুল জলিল বার্তা২৪.কম-কে জানান, গানের মাধ্যমে মানুষকে বায়োস্কোপ দেখাই। দুই যুগ আগে এ পেশায় নিয়োজিত হয়েছি। এখন আর কেউ বায়োস্কোপ দেখতে চায় না। তারপরও প্রতিবছর মেলায় আসতে হয় কেবলমাত্র মানুষের ভালবাসার টানে।