দাম না পেয়ে হতাশ লবণ চাষিরা

  • নুরুল হক,  উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, টেকনাফ (কক্সবাজার)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কক্সবাজারের টেকনাফে লবণ চাষ

কক্সবাজারের টেকনাফে লবণ চাষ

কম দামের কারণে হতাশ হয়ে পড়েছে কক্সবাজারের টেকনাফের লবণ চাষিরা। ফলে উৎপাদিত হাজার হাজার মণ লবণ মাঠে পড়ে রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, একটি চক্র লবণ নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা লবণ আমদানি করতে লবণ শিল্পের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। ফলে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগী চাষিরা।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে কক্সবাজারের অন্য উপজেলার ন্যায় টেকনাফেও লবণ উৎপাদন শুরু হয়। এই উপজেলায় তিন হাজার একর জমিতে উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন হাজার হাজার চাষি ও শ্রমিক। তবে গত বছর শুধু টেকনাফ উপজেলায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৫ শত টন উৎপাদন করে চাহিদা পূরণ করেছেন। তবে সরকার সারা দেশে ভোক্তা ও শিল্প খাতের এ চাহিদার বিপরীতে বিসিক লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ১৮ লাখ ৫০ হাজার টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যে ৩৪ হাজার টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সীমান্তের নাফ নদের কিনারায় সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ ও হ্নীলায় দেড় হাজার একর জমিতে লবণ চাষাবাদে অসংখ্য সাদা সাদা লবণের স্তুপ পড়ে আছে। প্রতিটি স্তুপে ৪০-৫০ মণ করে লবণ। এছাড়া টেকনাফ উপজেলায় সদর, হোয়াইক্যং ও শামলাপুর ইউনিয়নে আরও দেড় হাজার একর জমিতে লবণের উৎপাদিত হয়েছে। ইতিমধ্যে পুরো উপজেলায় চলতি মৌসুমে উৎপাদিত ৫’শ মণ লবণ মাঠে ও গর্তে পড়ে আছে। সেই লবণের মূল্য পড়ে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন লবণ চাষিরা। ইতিমধ্যে মো. শরীফ হোসেনের ৭০ হাজার মণ, মো. সালামের ৫০ হাজার মণ, মো. শফিক মিয়ার ৩০ হাজার মণ, হাফেজ উল্লাহ ২৫ হাজার মণ, মো. সেলিমের ২০ হাজার মণ লবণ উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া আরও ৫ শ শতাধিক চাষিদের উৎপাদন হাজার হাজার মণ লবণ মাঠের গর্তে পড়ে আছে।

কক্সবাজারের টেকনাফে লবণের স্তুপ

এ প্রসঙ্গে সাবরাংয়ের লবণ চাষি মোহাম্মদ শরীফ হোসেন বলেন, ‘মিল মালিক তথা বড় বড় কোম্পানিগুলো লবণের দাম কমিয়ে দেওয়ায় মাঠ পর্যায়ের চাষিরা দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ধারদেনা করে লবণ চাষ করে চাষিরা বিনিয়োগও ওঠাতে পারছেন না। বলতে গেলে পানির দামেও বিক্রি করা যাচ্ছে না লবণ। উৎপাদন যত বেশি হচ্ছে, লবণের দামও তত কমে যাচ্ছে। তার উৎপাদিত ৭০ হাজার মণ লবণ মাঠের গর্তেই পড়ে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘প্রতি একরে লবণ মাঠে খরচ পড়েছে ৫০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে লবণ বিক্রি করে একর প্রতি ১০ হাজার টাকাও পাওয়া যায়নি। চলমান দরে লবণ বিক্রি করা যাচ্ছে না। লবণ বিক্রি করলে এখন বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হবেন। যার ফলে অবিক্রিত লবণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।’

কক্সবাজারের টেকনাফে লবণ চাষ

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফিক মিয়া জানান, বর্তমানে মাঠ জুড়ে বড় বড় গর্তে স্তুপ করে পলিথিন মুড়িয়ে রাখা হয়েছে উৎপাদিত লবণ। তাদের হাজারো মণ লবণ মাঠে পড়ে রয়েছে। সিন্ডিকেট করে মধ্যস্বত্বভোগীরা লবণের দাম কমিয়ে দেওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। কিন্তু লবণের ন্যায্যমূল্য নিয়ে কেউ ভাবছেন না। লোকসান দিয়ে লবণ বিক্রি করে দাদনের টাকাও পরিশোধ করতে পাচ্ছেনা অনেকে।’

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) টেকনাফের ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, ‘ইতিমধ্যে এই সীমান্তে ৩৪ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। তবে গত বছর তুলনায় লবণ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু লবণের দাম কম হওয়ায় চাষিদের মাঝে হতাশ দেখা গেছে। এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।