নেই সাক্ষী, ঝুলে আছে মানব পাচারের ৬৩৭ মামলা

  • মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, কক্সবাজার
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

সাগরপথে মানব পাচার আর প্রাণহানিকে ঘিরে আবারও আলোচনায় এসেছে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকা। বিভিন্ন সংস্থার পদক্ষেপের কারণে ২০১৪ সালের শেষের দিকে অনেকটাই বন্ধ ছিল সাগরপথে মানব পাচার।

কিন্তু ২০১৭ সালের পর মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালাল চক্রগুলো। এ পর্যন্ত কক্সবাজারে মানব পাচারের ৬৩৭ মামলা হলেও নানা জটিলতায় তার বিচার হয়নি এখনো।

বিজ্ঞাপন

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্য মতে, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজার উপকূলে মানব পাচারের ঘটনা ঘটেছে ২৮টি। যেখানে ৭১৩ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধারের পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয় ৬৯ জনকে। এরমধ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও জানুয়ারিতে মালয়েশিয়া পাচারকালে উদ্ধার করা হয় ২৩৯ জন রোহিঙ্গাকে। ট্রলার ডুবে নিহত হন ২১ জন, মানব পাচারের ১৬ মামলায় গ্রেফতার করা হয় ৪১ জনকে।

আইন কর্মকর্তাদের দাবি, এসব মামলায় সাক্ষী পাওয়া কঠিন, তাই সহজে বিচার কাজ শেষ করাও কঠিন। তবে শুধু মামলা নয়, দালাল নিয়ন্ত্রণ ও মানব পাচার রোধে সমন্বিতভাবে কাজ করার কথা বলছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত কক্সবাজারে মানব পাচার আইনে ৬৩৭টি মামলা হলেও তার একটিরও বিচারকার্য শেষ হয়নি। মামলাগুলোর কিছু কিছু চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হলেও সাক্ষী নিয়ে জটিলতা থাকায় এসব মামলা আলোরমুখ দেখছে না। তবুও রাষ্ট্রপক্ষ চেষ্টা চালাচ্ছে এসব মামলা দ্রুত শেষ করতে।

অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অরুপ বড়ুয়া অপু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কোন সাক্ষী বিজ্ঞ আদালতে এসে সাক্ষ্য প্রদান করছে না। যার কারণে বিজ্ঞ আদালত সেই মানব পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারছে না।’

কক্সবাজার জেলা জজ আদালত

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘মামলার বিচার না হওয়ার পাশাপাশি মানবপাচার প্রতিরোধে বিভিন্ন সময়ে নেওয়া নানা উদ্যোগও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে আবারও সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে দালালচক্র।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কক্সবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘যখন দুর্ঘটনা হয় বা মানুষ ডুবে মারা যায় তখন আমরা তৎপর হয়ে যাই। কক্সবাজারে এখন পর্যন্ত ৬৩৭টি মামলা হলেও বিচার হয়নি একটিরও। মানব পাচার আইনে দায়ের হওয়া মামলার বিচার না হওয়ায় ক্রমাগত বাড়ছে পাচারের ঘটনা।’

ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ্দৌজা নয়ন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘মানব পাচার বিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধিতে উখিয়া-টেকনাফের প্রত্যেক ক্যাম্পের ইনচার্জের নির্দেশনা দেওয়া আছে। তারা প্রতিদিন রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন নেতা, মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে মানব পাচার বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে।’

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত দালালচক্র শনাক্ত হয়েছে। এখন তাদের আটকের চেষ্টা চলছে। বিকাশের মাধ্যমে মানব পাচারের টাকা লেনদেনকারীও শনাক্ত করেছে পুলিশ। অচিরেই এসব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

উল্লেখ্য, গত ১১ ফেব্রুয়ারি অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় ১৩৮ যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার সেন্টমার্টিনের দক্ষিণে পাথরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায়। এতে ২১ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। একই ঘটনায় ৭৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ১৯ দালালকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা করে কোস্টগার্ড। মামলায় এ পর্যন্ত নয়জনকে আটক করে পুলিশ।