পীরগাছায় নাব্য সংকটে মাছ নেই: জেলেদের দুর্দিন

  • আমিনুল ইসলাম জুয়েল, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পীরগাছা (রংপুর)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

তিস্তায় পানির দেখা নেই/ছবি: বার্তা২৪.কম

তিস্তায় পানির দেখা নেই/ছবি: বার্তা২৪.কম

রংপুরের পীরগাছায় নদ-নদী ও খালবিলে নাব্য সংকটের কারণে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। ফলে জেলে পরিবারগুলোতে দুর্দিন চলছে। নদীতে পানি না থাকায় জেলেরা সারাদিন পরিশ্রম করেও মাছ পাচ্ছে না। এতে উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার জেলে বেকার হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

শনিবার (৭ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার তিস্তা নদীতে নাব্য সংকটে পানি শুকিয়ে বিশাল বালুচর জেগে উঠেছে। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় শুধু তিস্তা নদী নয়, তিস্তা নির্ভর রংপুরের পীরগাছার চার নদের একই অবস্থা। পানি না থাকায় মাছও আগের মতো ধরা পড়ছে না। সামান্য পানিতে জেলেরা দল বেঁধে মাছ ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের জালে তেমন মাছ ধরা পড়ছে না। তিস্তার মূল নদী থেকে একাধিক শাখা-প্রশাখা তৈরি হয়েছে। তাতে সামান্য পানিতে চলছে জেলেদের মাছ ধরার ব্যর্থ চেষ্টা। সারা দিন জেলেরা নদীতে জাল ফেলে মাছ না পেয়ে শূন্য হাতে ফিরছে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিস্তায় পানি প্রবাহ না থাকায় এর প্রভাব পড়েছে অন্যান্য নদ-নদীতে। নাব্যতা সঙ্কট ও দখলের কারণে আলাই কুমারী ও মাষাণ কুড়া মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। অস্তিত্ব হুমকিতে রয়েছে বুড়াইল ও ঘাঘট নদ। দখল হয়ে যাওয়ায় ৫০ ফুট প্রশস্ত ঘাঘট নদ এখন ১০ ফুটে এসে ঠেকেছে।

জেলেরা সারাদিন পরিশ্রম করেও মাছ পাচ্ছে না

জেলেরা জানান, বর্ষা মৌসুমে জেলেরা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করলেও শুষ্ক মৌসুমে চরম বিপাকে পড়ে। বছরের ছয় মাস মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চলে। বাকি ছয় মাস ধার দেনা করে চলতে হয়। এনজিও থেকেও ঋণ নিয়ে অনেকে কিস্তি দিতে পারছে না। দেনার দায়ে অনেকে এখন এলাকা ছাড়া। নদ-নদী, খাল ও পুকুর পানিশূন্য হয়ে পড়ায় মাছ শিকার করতে পারছেন না। অনেকে এ পেশা ছেড়ে বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন।

বিজ্ঞাপন

তাম্বুলপুর ইউনিয়নের ঘগোয়া গ্রামের সুভাষ চন্দ্র বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘তিস্তাসহ তাম্বুলপুর ছাড়ায় পর্যাপ্ত পানি নেই। অন্য কোনো কাজ পারি না। বেকার বসে আছি।’

কান্দি ইউনিয়নের মাঝিপাড়ার হরিপদ ও পেমো বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আগে মাষাণ কুড়া নদে জাল ফেলে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এখন তেমন পানি নেই। জাল ফেলার জায়গাও সংকুচিত হয়েছে। তাই বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরি, অন্য সময় দিনমজুরি করি।’

পীরগাছা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নদী, খাল-বিলে এখন তেমন পানি নেই। মাছও ধরা পড়ছে না। জেলেরা এখন অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন’।

পীরগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মাহবুবার রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এই অঞ্চলের জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। বর্ষা মৌসুমে জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে পারলেও শুষ্ক মৌসুমে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়।’