মানুষ ভজার মন্ত্রে ছেঁউড়িয়ায় লালন স্মরণোৎসব
ছেঁউড়িয়া থেকে: মানুষ ছাড়া খ্যাপারে তুই কুল হারাবি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি/ সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন, সত্য সুপথ না চিনিলে পাবিনে মানুষের দর্শন — লালন সাঁইয়ের গানে গানে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ।
মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি— এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে লালনের মাজারের আশপাশে ও মরা কালী নদীর তীর ধরে বাউলরা ছোট ছোট আস্তানা গেড়ে সাঁইজিকে স্মরণ করছেন তারই গান গেয়ে। বাউল-ফকিরদের সঙ্গে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন ভক্তসহ দর্শনার্থীরাও।
রোববার (৮ মার্চ) সন্ধ্যায় লালন উন্মুক্ত মঞ্চে তিন দিনব্যাপী এ স্মরণোৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগ থেকেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজারো মানুষ দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন লালন স্মরণোৎসবে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং লালন একাডেমির উদ্যোগে লালন স্মরলোৎসব চলবে আগামী মঙ্গলবার (১০ মার্চ) পর্যন্ত।
ইতোমধ্যেই বাউল, সাধু, ভক্ত আর শিষ্যদের পদভারে মুখর হয়ে উঠেছে আখড়াবাড়ি। এর পাশেই বিশাল খোলা মাঠে গুরু-শিষ্যের মিলনমেলায় মনের মানুষের সন্ধানে আকুল ভক্তদের চলছে নাচে-গানে দিনরাত ভাবের খেলা। ভাবগান আর বাউল আচারের যজ্ঞ পালন ছাড়াও বাউল পথ ও মতের দীক্ষাও নিচ্ছেন অনেকে। স্মরণোৎসব বা দোল উৎসব মানেই বাউল ফকিরদের মহাসম্মেলন।
বগুড়া থেকে আসা বাউল রতন শাহ বলেন, আমাদের কাছে দোলপূর্ণিমা মানে ভালোবাসার আলো। মানুষের মাঝে ভালোবাসা আর প্রেমের আলো ছড়িয়ে দেওয়া আমাদের দোল উৎসবের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, এ আলো সবার মধ্যেই ছড়িয়ে দিতে পারলে দূর হবে সমাজের সব অন্ধকার, হিংসা, হানাহানি।
দৌলতপুর থেকে আসা বাউল ফকির ফরিদুল শাহ বলেন, ৪০ বছর ধরে এ ধামে আসা-যাওয়া। আমরা অপেক্ষায় থাকি দোল উৎসব আর তিরোধান দিবসের।
তিনি বলেন, সহজ মানুষ খোঁজা আর ভজার কাজে দীক্ষা নিয়েছি। এ পথেই সারাজীবন কাটাতে চাই।
আখড়াবাড়িতে কথা হয় ফকির সালাম শাহয়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে এলে মনে প্রশান্তি আসে। তাই তো এখানেই ছুটে আসি। এখানে এলে মানুষের আলাদা একটা রূপ চোখে পড়ে। মানুষকে ভালোবাসার মন্ত্র শেখা যায়।
বাউল সাধক ফকির লালন শাহর জীবদ্দশায় দোলপূর্ণিমা উপলক্ষে পালন করা হতো দোল উৎসব। আর দোলপূর্ণিমাকে ঘিরেই বসতো সাধু সংঘ। লালনের সেই স্মৃতির ধারাবাহিকতায় লালন একাডেমিও প্রতিবছর উৎসবটিকে লালন স্মরণোৎসব হিসেবে পালন করে আসছে।
আরও পড়ুন: লালন উৎসবে কুষ্টিয়ায় হোটেল ভাড়া তিনগুণ