ভূঞাপুরে বাধ্য হয়ে নিষিদ্ধ গাইড কিনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের

  • অভিজিৎ ঘোষ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, টাঙ্গাইল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভূঞাপুরে বিক্রি হচ্ছে গাইড বই/ছবি: বার্তা২৪.কম

ভূঞাপুরে বিক্রি হচ্ছে গাইড বই/ছবি: বার্তা২৪.কম

সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মিতুর বাবা ভ্যান চালিয়ে কোনো রকমে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বছর মিতু ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ভূঞাপুর উপজেলার ধুবলিয়া মোবারক মাহমুদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে। গাইড বই কেনার কোনো সামর্থ্য নেই তার বাবার।

মিতুর মত নবম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী হাবিবা আক্তার লিজার বাবাও একজন ভ্যানচালক। লিজার তিন বোন। এরমধ্যে দুই বোন পড়াশুনা করে। তাদের পড়াশুনা চালানোর খরচ বহন করতে ধারদেনা করতে হয় বাবাকে। এ অবস্থায় স্থানীয় সেচ্ছাসেবী প্রতিভা ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই দুই শিক্ষার্থীকে গাইড বই কিনে দেয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শুধু মিতু ও লিজা-ই নয়, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার সকল শিক্ষার্থী গাইড বই কিনতে বাধ্য হচ্ছে। প্রকাশ্যে গাইড বিক্রি হলেও জানে না স্থানীয় প্রশাসন। তবে গাইড বই বিক্রির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার কথা বলেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. নাসরীন পারভীন।

জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি থেকে অনুপম প্রকাশনী ও গ্রামারের জন্য অক্সফোর্ড এবং মাদরাসা সমিতি লেকচার পাবলিকেশনের গাইড নির্ধারণ করেছে। এরপর প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওই দুইটি পাবলিকেশনের গাইড কিনতে অলিখিতভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর গাইড কিনতে খরচ হচ্ছে ১২৪০ টাকা, সপ্তম শ্রেণির ১৩০০ টাকা, অষ্টম শ্রেণির ১৭০০ টাকা ও নবম শ্রেণির ৩৫০০ টাকা।

বিজ্ঞাপন

উপজেলায় মাধ্যমিক স্কুল ও মাদরাসার ১৮৪৪২ জন শিক্ষার্থীকে প্রায় ৫ কোটি টাকার নোট গাইড কিনতে হচ্ছে। গাইড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও উপজেলায় দেদারসে গাইড বিক্রি হচ্ছে। যদিও প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক সমিতিকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে গাইডগুলো বাজারজাত করছে লেকচার ও অনুপম পাবলিকেশন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ হতে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫ হাজার ১৩২ ও মাদরাসায় ৩ হাজার ৩১০। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলক গাইড কিনতে হচ্ছে।

ভারই গ্রামের আবুল কাশেম নামক এক অভিভাবক জানান, ভ্যান চালিয়ে দুই মেয়েকে স্কুলে পড়িয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। এর মধ্যে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় অনেক টাকার মূল্যের গাইড বই কিনতে হবে। সংসার চালাবো নাকি মেয়ের পড়াশুনার জন্য গাইড কিনবো।

ধুবলিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদ নামের আরেকজন অভিভাবক জানান, গাইড বই সরকার নিষিদ্ধ করেছে, কিন্তু বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীরা গাইড কিনছে।

উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী জহুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী গাইড কিনছে। এতে শিক্ষক সমিতি থেকে নির্দিষ্ট কোনো গাইড নির্ধারণ করা হয়নি।

উপজেলা মাদরাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুছ সোবহান জানান, শুধু লেকচার গাইড নয় অন্য কোম্পানির গাইডও ক্রয় করছে শিক্ষার্থীরা।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহীনুর ইসলাম বলেন, নোট গাইড বিক্রি ও বাজারজাত নিষিদ্ধ সারাদেশেই। উপজেলায় যদি গাইড বিক্রি ও বাজারজাত করা হয়, তবে আইনগত ব্যবস্থাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বরাবর লিখিতভাবে জানানো হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. নাসরীন পারভীন বলেন, গাইড বই বিক্রি নিষিদ্ধ। যদি গাইড বই বিক্রির খবর পাই তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।