হাজারীবাগ মাদ্রাসাছাত্র হত্যা
প্রেমিকাকে উপহার দিতে অপহরণ, মামীর প্রতি ক্ষোভে খুন
নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পর ঢাকার হাজারীবাগের মাদ্রাসাছাত্র মো. ইব্রাহিমের (১০) মরদেহ গাজীপুর থেকে উদ্ধারের ১৫ ঘণ্টায় হত্যায় জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে খুনের রহস্য উন্মোচন করেছে র্যাব।
রোববার (৮ মার্চ) দুপুরে গাজীপুর নগরীর পোড়াবাড়ীতে র্যাব-১ এর ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন।
গ্রেফতার মো. বনি আমিন (২১) বরগুনা সদরের মাইঠা এলাকার মো. আবুল কালাম আজাদের ছেলে। তিনি নিহত ইব্রাহিমের আপন ফুফাত ভাই।
এর আগে শনিবার (৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে গাজীপুর নগরীর সালনা মীরেরগাঁও এলাকা থেকে শিশু ইব্রাহিমের মরদেহ উদ্ধার করে গাজীপুর সদর থানা পুলিশ।
ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে ইব্রাহিমের মরদেহ হস্তান্তরের পর শনিবার (৭ মার্চ) ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
মরদেহ উদ্ধারের পরপরই অপহরণকারী খুনিকে ধরতে ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব। রোববার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে হাজারীবাগের মামার বাসা থেকেই বনি আমিনকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ফুফাত ভাই ইব্রাহিমকে হত্যার কথা স্বীকার করে র্যাবকে বর্ণনা দেয় বনি আমিন।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, ঢাকার হাজারীবাগের নবীপুর লেনের ইকরা দারুল-উলুম মাদ্রাসার ৩য় শ্রেণিতে পড়ত মো. ইব্রাহিম (১০)। ওই এলাকার মো. মনির হোসেনের বড় ছেলে সে। তার আরেক ভাই ও বোন রয়েছে।
রাজধানী নিউ মার্কেট এলাকায় ইব্রাহিমের বাবা মনিরের ক্রোকারিজের দোকান রয়েছে। মামা মনিরের বাসায় থেকে ২০১৬-২০১৮ সাল পর্যন্ত ওই দোকান পরিচালনা করতেন বনি আমিন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মামী মোসা. হালিমা বেগমের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন তিনি। অন্যদিকে প্রেমিকাকে দামি উপহার এবং তাকে নিয়ে হানিমুনে যাওয়ার পয়সা ছিল না তার কাছে।
গত বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে মামাতো ভাই ইব্রাহিমকে তার বাবার অসুস্থতার কথা বলে হাজারীবাগ মাদ্রাসা থেকে নিয়ে আসে বনি। সেখান থেকে গাজীপুর নগরীর সালনায় এসে ইব্রাহিমের কাঁধে থাকা ব্যাগ খুলে মাদ্রাসার আইডি কার্ড ফেলে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সালনা মীরেরগাঁও রেল লাইনের পাশের একটি জঙ্গলে নিয়ে ইব্রাহিমকে গলাটিপে হত্যা করেন বনি। এরপর মরদেহ একটি পুকুরে ফেলে সালনার একটি মসজিদে গিয়ে এশার নামাজ আদায় করেন তিনি।
এরপর মোবাইলে কণ্ঠ নকল করে মামা মনিরকে ফোন করে ইব্রাহিমকে অপহরণের কথা জানান বনি। তখন মুক্তিপণ হিসেবে ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়। ৬ মার্চ বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণের ১ লাখ নিয়ে হাজীবাগে মামার বাসায় ফিরে যান বনি।
র্যাব-১ এর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন আরও জানান, প্রেমিকাকে দামি উপহার দিতে, তাকে নিয়ে হানিমুনে যেতে এবং মামীর উপর দীর্ঘদিনের ক্ষোভের প্রতিশোধ নিতেই শিশু ইব্রাহিমকে অপহরণ ও হত্যা করা হয়। সন্দেহ এড়াতে সব সময় ইব্রাহিমের পরিবারের সঙ্গে ছিলেন বনি। এমনকি ইব্রাহিমের মৃত্যুর খবর পেয়ে মামা-মামীর সঙ্গে কান্নাও করেছিলেন তিনি।