লালন মেলায় কুমারখালীর গামছা
ছেঁউড়িয়া থেকে: কুষ্টিয়ার লালন মেলায় এসেছেন আর গামছা কেনেননি এমন ভক্ত ও অনুরাগী খুব কমই পাওয়া যাবে। আবার ‘লালন মেলায় আসবে যে, উত্তরীয় (গামছা) পাবে সে’ এমন প্রবাদ ও রেওয়াজ প্রচলিত আছে স্থানীয়ভাবে। কুষ্টিয়ার তিলের খাজা ও লুঙ্গির মতো তাঁতের গামছার খ্যাতি রয়েছে দেশ জুড়ে। এদিকে লালন মেলার ভক্ত-অনুরাগীদের গামছা প্রীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেন লালন মেলা ও তাঁতের তৈরি বাহারি গামছা একে অপরের পরিপূরক। প্রচলিত প্রবাদ, লালন মেলা ও গামছার সম্পর্ক যেন অবিচ্ছেদ্য। এর সত্যতাও মেলে লালন স্মরণোৎসবে আসা সব বয়সী নারী-পুরুষ ভক্ত-অনুরাগীদের মাথায়, গলায় ও শরীরে জড়ানো গামছা দেখে। এ যেন লালন মেলার স্বাভাবিক ও অবিচ্ছেদ্য চিত্র।
মেলাকে কেন্দ্র করে লালন একাডেমির আশপাশে গড়ে উঠেছে স্থায়ী ও অস্থায়ী কাপড়ের দোকান। এগুলোকে কাপড়ের দোকান বলা হলেও মূলত এদের মূল পণ্য কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে তাঁতের তৈরি বাহারি রংয়ের গামছা। মেলাসহ অন্যান্য সময়েও এই গামছাই এসব দোকানের সব থেকে বেশি বিক্রি হওয়া পণ্য বলে জানা গেছে। একাধিক দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব দোকানে এক হাত থেকে ছয় হাত পর্যন্ত গামছা বিক্রি হয়।
লালন একাডেমির সাথেই লাগোয়া আদি তাঁত ঘর নামের এক দোকানে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন রং ও সাইজের গামছা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। পছন্দ মতো গামছা দামদর করে কিনছেন ক্রেতারা। আদি তাঁত ঘরের মালিক জয়ন্ত মল্লিকের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এক হাত থেকে সাড়ে তিন হাত, চার হাত, পাঁচ হাত এবং ছয় হাতের নানা রঙের তাঁতের গামছা আছে এখানে। সর্বনিম্ন ত্রিশ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত এসব গামছা বিক্রি হয়ে থাকে। এরমধ্যে এক হাত থেকে চার-পাঁচ হাতের গামছাগুলো বেশি বিক্রি হয়। ছয় হাতের গামছাগুলো মূলত সাধু,গুরুরা কিনে থাকেন। তবে অন্যান্য বারের তুলনায় এবারের মেলায় বিক্রি খুবই কম বলে জানিয়েছেন জয়ন্ত। এর কারণ হিসেবে করোনাভাইরাসের ভয়ে মেলায় লোক সমাগম কম হওয়াকে দায়ী করছেন তিনি।
আরেক গামছা বিক্রেতা আনসার আহমেদ বলেন, এখানকার গামছাগুলো সবই তাঁতের তৈরি। এই গামছাগুলো উৎপাদন করতে খরচ ও শ্রম বেশি লাগায় দাম সব সময় বেশি হয়। এবারের মেলায় বিক্রি কম হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়বে গামছা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও পরিবারগুলো।
বিক্রেতারা হতাশা ও লোকসানের কথা শোনালেও, ঢাকা থেকে লালন স্মরণোৎসবে আসা তরুণ সুজন পোদ্দার জানান, আমি বছরে অন্তত একবার আসি সাঁইজির ধামে। ছেঁউড়িয়াতে আসলে আমার অন্যান্য উদ্দেশ্যের মধ্যে একটা থাকে পছন্দ মতো নতুন গামছা কেনা। প্রতিবারই নিজের জন্য তো কিনিই অনেকের অনুরোধে তাদের জন্য গামছা কিনে নিয়ে যাই। এটা প্রতিবারই হয়। কারণ জানতে চাইলে এই তরুণ বলেন, এখানকার গামছার কাপড়, রং,মান ও সাইজ অন্যান্য গামছা বা তোয়ালের থেকে অনেক ভালো। দেখতে সুন্দর ও ব্যতিক্রম হওয়ায় এমন চাহিদা বলে মনে করেন তিনি।
রোববার (৮ মার্চ) থেকে ফকির লালন সাঁইজির দোলপূর্ণিমা উৎসব বা লালন স্মরণোৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা তার বাণিজ্যিক জায়গার অনেকটা দখল করে আছে কুমারখালীর তাঁতের তৈরি এইসব গামছা। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা ও বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্ম পেলে দেশের বস্ত্র বাণিজ্যে এসব গামছা ভালো একটা অবস্থান তৈরি করবে।