কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে প্রেমিক যুগলের আত্মহত্যা

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, জয়পুরহাট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ইমরানের হাতে লেখা নাবিলার নাম ও নাবিলার লেখা চিরকুট। ছবি: বার্তা২৪.কম

ইমরানের হাতে লেখা নাবিলার নাম ও নাবিলার লেখা চিরকুট। ছবি: বার্তা২৪.কম

‘I am sorry’, মাফ করে দিও আমাকে, আমি তোমাদের ভালো মেয়ে হতে পারলাম না। খোদা হাফেজ। একটি সাদা কাগজে এই বাক্যগুলো লিখে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে নিজ ঘরে আত্মহত্যা করে জয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসনুবা নাবিলা চৌধুরী নীর।

মঙ্গলবার (১০ মার্চ) রাত ৯টায় জয়পুরহাট থানা পুলিশ আরাফাত নগরের একটি বাসা থেকে নাবিলার মরদেহ উদ্ধার করে।

বিজ্ঞাপন

নাবিলার বাবা আব্দুস সামাদ চৌধুরী বগুড়ায় রেশম বোর্ডের একজন পদস্থ কর্মকর্তা। মা মাহমুদা বেগম জয়পুরহাট মোসলিম নগর এলাকার মহিলা কলেজের পরিদর্শক। তাদের গ্রামের বাড়ি আক্কেলপুর উপজেলার চকবিলা গ্রামে।

নাবিলার মৃত্যুর পরের দিন বুধবার (১১ মার্চ) সকাল ৮টায় জয়পুরহাট শহরের ট্রাক টার্মিনাল এলাকার চেতনা মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্রের একটি কক্ষ থেকে ইনজামামুল হক ইমরান নামে এক তরুণের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই কক্ষের ফ্যানের সঙ্গে বিছানার চাদর গলায় পেঁচিয়ে ইমরান আত্মহত্যা করে। সে জয়পুরহাট পৌরসভার মাদারগঞ্জ মহল্লার কলা ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিনের ছোট ছেলে। ইমরান জয়পুরহাট শহীদ জিয়া কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

বিজ্ঞাপন

মৃত্যুর আগে সে বাম হাতে কলম দিয়ে লিখে যায় ‘Imran+ Nabila, আমার জন্য যে চলে......আমিও গেলাম’। মূলত নাবিলার সঙ্গে ইমরানের প্রেম ছিল। নাবিলা আত্মহত্যা করায় একই পথ সেও বেছে নেয়।

ইমরানের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাবিলার সঙ্গে ইমরানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এর মধ্যে ইমরান মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে তাকে জয়পুরহাট ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় চেতনা মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্রে তিন মাস চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ্ করা হয়। তিন ভাইয়ের মধ্যে ইমরান সবার ছোট। তারা দরিদ্র পরিবারের সন্তান।

মঙ্গলবার নাবিলার মৃত্যুর খবর পেয়ে সন্ধ্যায় ইমরান তাকে দেখতে যায়। পরে বাড়ি ফিরে সে জানায়, মৃত্যুর আগে নাবিলা তাকে কয়েকবার ফোন করেছিল। কিন্তু ইমরান রিসিভ করেনি। নাবিলার মৃত্যুর পর ফোন করার বিষয়টি আর ভুলতে পারছে না সে। ওই সময় কান্না জড়িত কণ্ঠে সে জানায়, ‘কি কথা বলতে চেয়েছিল নাবিলা। ফোন রিসিভ না করায় সেটা জানা হলো না’।

ইমরানের বাবা ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলের সঙ্গে নাবিলা নামের মেয়েটির তিন বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আমরা গরিব মানুষ। ছেলেকে অনেক নিষেধ করেছি। কিন্তু কিছুতেই শোনেনি। নাবিলার আত্মহত্যার খবর পাওয়ার পর মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ইমরানও আত্মহত্যার চেষ্টা করে। অনেক বোঝানোর পর বায়না ধরে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে যাবার। বুঝতে পারিনি আমাদের ফাঁকি দিয়ে আত্মহত্যার জন্যই মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে যাবার জন্য বায়না ধরেছিল।’

এ বিষয়ে নাবিলার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য বার বার যোগাযোগ করা হলেও কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।

জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহরিয়ার খাঁন জানান, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে স্কুলছাত্রী নাবিলা এবং কলেজ ছাত্র ইমরানের আত্মহত্যার বিষয়টি প্রেমের কারণেই ঘটেছে। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই দুটি নিষ্পাপ প্রাণ অকালে ঝরে গেল। এ জন্য সন্তানদের বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে এ ঘটনায় পৃথক পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।