শিক্ষা-পুষ্টি থেকে বঞ্চিত পীরগাছার চরগুলোর শিশুরা

  • আমিনুল ইসলাম জুয়েল, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পীরগাছা (রংপুর)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পীরগাছার বিভিন্ন চরের শিশুরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

পীরগাছার বিভিন্ন চরের শিশুরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

শিক্ষা ও পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার চরাঞ্চলের শিশুরা। শিক্ষকদের অনুপস্থিতি ও অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে পিছিয়ে পড়ছে চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন অজুহাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়মিত পদচারণা না থাকায় তারা স্বাস্থ্য সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) সরেজমিনে চরাঞ্চল ঘুরে জানা গেছে, বিদ্যালয়গুলোতে কাগজে কলমে শিক্ষার্থী বেশি দেখানো হলেও ক্লাসে উপস্থিতি নেই। চরাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার সবচেয়ে বেশি।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিস্তা নদী বেষ্টিত উপজেলার তাম্বুলপুর ও ছাওলা ইউনিয়নের গাবুড়ার চর, শিবদেব চর, কিশামত ছাওলা, পূর্ব হাগুরিয়া হাশিম, চর ছাওলা, চর কাশিম, রহমতের চর, চর তাম্বুলপুর ও চর রহমত গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চরাঞ্চলে শিক্ষা বিস্তার করতে পারছে না।

অপরদিকে অনুন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে শিক্ষক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা নিয়মিত কর্মস্থলে যাচ্ছেন না। তাই চরাঞ্চলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে দুই ইউনিয়নের চরাঞ্চলে বসবাসকারী পরিবারের শিশুরা শিক্ষা ও পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

গাবুড়ার চরের আব্দুল মতিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘শিক্ষক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ার কথা বলে নিয়মিত আসে না। তাই স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কার্যক্রম দিন দিন নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে।’

চর তাম্বুলপুর গ্রামের শাহাদত হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘চরের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকরা যোগদান করতে চায় না। ফলে প্রায় বিদ্যালয়ে শিক্ষক শূন্যতা দেখা দেয়। কিছু শিক্ষক আসলেও পড়াশোনার মান নেই বললেই চলে। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ভেস্তে যেতে বসেছে।’

দক্ষিণ শিবদেব চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘চরাঞ্চলে দারিদ্রতা ও সচেতনতার অভাব অত্যন্ত বেশি। শিশুরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার পরিবর্তে মাছ ধরা ও কৃষি কাজসহ পরিবারকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে। দরিদ্র ও অসচেতন পরিবারগুলো তাই তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে উৎসাহ দেখাচ্ছে না।’

তাম্বুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান রওশন জমির রবু সরদার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দারিদ্রতা, বাল্যবিয়ে, নদীভাঙনসহ নানা কারণেই চরের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে মানসম্মত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা।’

পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু আল হাজ্জাজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘চরাঞ্চলে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে আমাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার অনুন্নয়নের কারণে অনেক সময় দুর্গম চরাঞ্চলে গিয়ে সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। তবে স্বাস্থ্য কর্মীদের চরাঞ্চলে গিয়ে নিয়মিত সেবা দিতে বলা হয়েছে।’

পীরগাছা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, চরাঞ্চলের শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনতে নিয়মিত মা সমাবেশ করা হচ্ছে। অভিভাবকরা সচেতন হলে শিশু শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়মুখী হবে।