বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম নিয়ে ৭ ফুট দৈর্ঘ্যের বই
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩ ফুট প্রস্থের একটি কবিতার বই তৈরি করেছেন হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের এক দরিদ্র তরুণ। এই বইয়ের প্রস্থ, পৃষ্ঠা এবং ওজন নির্ধারণে করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও তার কর্ম-জীবনী হিসেবে। এমন উদ্যোগে আনন্দিত এলাকাবাসী। তবে বইটি বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতে তুলে দেয়ার স্বপ্ন দেখছেন মুজিবপ্রেমী এই তরুণ।
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের সুনারু গ্রামের তরুণ হিমাদ্রী দাশ রুবেল। বাবার মুখে বঙ্গবন্ধুর কথা ও গল্প শুনে ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি অন্যরকম একটা ভালোবাসা জন্মায় তার মনে। বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন। জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে কিছু একটা করার আগ্রহ জাগে তার। এক পর্যায়ে ব্যতিক্রম এক কবিতার বই তৈরির সিদ্ধান্ত নেন তিনি। জানুয়ারি মাস থেকে শুরু করেন এই বই তৈরির কাজ।
বইটিতে বঙ্গবন্ধু ও তার কর্ম-জীবনীর সঙ্গে রাখা হয়েছে বিশেষ মিল। যেমন বইটি করা হয়েছে ৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩ ফুট প্রস্থ। অর্থাৎ ১৫ থেকে আগস্ট মাস (৮ মাস) বাদ দিয়ে বইয়ের দৈর্ঘ্য করা হয়েছে ৭ ফুট। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের হিসেবে প্রস্থ করা হয় ৩ ফুট। জীবদ্দশার বঙ্গবন্ধু বেঁচে ছিলেন ৫৫ বছর। সে অনুযায়ী বইয়ে ৫৫টি পৃষ্ঠা করা হয়। ১৭ মার্চ জন্মদিনের তারিখ অনুযায়ী বইয়ের ওজন করা হয়েছে ১৭ কেজি। শতবর্ষ স্মরণে বইটিতে কবিতার সংখ্যা ১০০টি। আর বইটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা।
বইটির রচয়িতা হিমাদ্রী দাশ রুবেল বলেন- ‘ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা শুনতাম। যে লোকটি আমাদেরকে একটি পতাকা, একটি দেশ উপহার দিয়েছেন, তার জন্য কিছু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আর্থিক অভাবের কারণে কিছুই করা সম্ভব হয়নি। তাই তার স্বরণে এই বইটি তৈরি করেছি।’
তিনি বলেন- ‘আমার স্বপ্ন এই বইটি বঙ্গবন্ধু কন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে পৌঁছানোর। এজন্য আমি জনপ্রতিনিধিসহ সকলের সহযোগিতা চাই।’
হিমাদ্রী দাশ রুবেলের মা বিভা রাণী দাশ বলেন- ‘সে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বই তৈরির কাজ যখন শুরু করে তখন আমরা বলতাম কি পাগলামি করে সারাদিন। কাগজ আর রং তুলি দিয়ে সারাদিন সময় নষ্ট করছে। পরে বুঝতে পারলাম সে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভালো কিছু করতে চলেছে। তখন আমরাও তাকে সহযোগিতা করেছি।’
তিনি বলেন- ‘আমার সংসার খুব অভাবের। তাই বিভিন্ন সময় রং-কাগজ আনতে টাকা থাকতো না। পরে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার-দেনা করে বইটি তৈরি করেছে সে।’
সুবিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন- ‘সে যে কাজটি করেছে সেটি খুব প্রশংসনীয়। এ কাজের জন্য আমরা এলাকাবাসী হিসেবে গর্ববোধ করছি। অনেক দরিদ্রতার মাঝেও সে নিজে কষ্ট করে টাকা সংগ্রহ করে এই বইটি তৈরি করেছে।’
বানিয়াচং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম চৌধুরী বলেন- ‘ছেলেটির পরিবার খুবই দরিদ্র। তবুও সে বঙ্গবন্ধুর জন্য এত বড় একটি বই তৈরি করেছে। এটা সত্যি প্রশংসনীয়। আমরা চাই তার স্বপ্ন পূরণ হোক। তার কষ্টের ফসল এই বইটি সে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে যেন তুলে দিতে পারে।’
হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান বলেন- ‘দারিদ্রতার মাঝেও বঙ্গবন্ধুর প্রতি এমন ভালোবাসা দেখে আমি মুগ্ধ। এই ছেলেটি দরিদ্র হওয়ার পরও যা করেছে তা প্রশংসনীয়।’