অপকর্মের অভিযোগে বহিষ্কার, যুব মহিলা লীগ নেত্রীর প্রতিবাদ
দিনাজপুরের যুব মহিলা লীগের তিন নেত্রীকে অপকর্মের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর এই বহিষ্কারের প্রতিবাদে দিনাজপুর সদর উপজেলার পৌর যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বাবলী আকতার পিংকি মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) এক সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি পদত্যাগ করেছি, বহিষ্কার কেনো ? আমাকে বহিষ্কার করার সুযোগ নেই। আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি, আমাকে যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কারের ঘটনায়।’ পিংকি বলেন, আমি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার।
লিখিত বক্তব্যে পিংকি আরও জানান, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে আমি গত ২০১৯ সালের ৮ অক্টোবর রাজনীতি থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করি। তারপর থেকে আমি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করিনি। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি আমি। প্রায় ৫ মাসের বেশি সময় হলো লিখিতভাবে রাজনীতি থেকে অব্যাহতি চেয়ে দলীয় নেত্রীদের কাছে পত্র দিয়েছি। তারা আমার পত্র গ্রহণও করেছেন। তারপরও আমার বিরুদ্ধে সংগঠনের নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ এনে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ইতোপূর্বে আমাকে কোনো প্রকার নোটিশ প্রদান করা হয়নি। বাবলী আক্তার আরও বলেন, আমি খেলোয়াড়। খেলাধুলা করি। মাত্র ৩ বছর হলো স্থানীয় নেতা-কর্মীদের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছি। বর্তমানে আমি রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে স্বামীর সংসার নিয়ে ভালো আছি। কারো মন জয় করতে না পারায় আমি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি।
উল্লেখ্য, সংগঠন পরিপন্থী অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে দিনাজপুর পৌর যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বাবলী আক্তার পিংকি এবং বিরামপুর উপজেলার পৌর যুব মহিলা লীগের সভাপতি শারমিন আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক উন্মে হাবিবাকে বহিষ্কার করা হয়। এ নিয়ে দিনাজপুরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
যুব মহিলা লীগ দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি ছবি সিনহা ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদা বেগম মুক্তি জানান, কেন্দ্রীয় নির্দেশে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু, বহিস্কৃত দিনাজপুর পৌর যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বাবলী আক্তার পিংকি এবং বিরামপুর উপজেলার পৌর যুব মহিলা লীগের সভাপতি শারমিন আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক উন্মে হাবিবা বলছেন, ভিন্ন কথা। বলছেন, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার তারা। তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ দিনাজপুর শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত সংগঠনের প্যাডে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বহিস্কৃত নেতাদের দ্বারা কোনো অপকর্মের ঘটনা ঘটলে জেলা যুব মহিলা লীগ কোন দায়ভার বহন করবে না।
দিনাজপুর যুব মহিলা লীগের সভাপতি ছবি সিনহা সংবাদমাধ্যমকে জানান, যুব মহিলা লীগের এই তিন নেত্রীর বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের অভিযোগ আমাদের কাছে আছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে তা পাঠিয়েছি। কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বললে তার নির্দেশনা মোতাবেক দিনাজপুর পৌর যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বাবলী আক্তার পিংকি এবং বিরামপুর উপজেলার পৌর যুব মহিলা লীগের সভাপতি শারমিন আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক উন্মে হাবিবাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদা বেগম মুক্তা জানান, যুব মহিলা লীগের গঠনতন্ত্রের ২২ এর (ক) উপধারা মোতাবেক তিন নেত্রীকে বহিষ্কার করা হয়েছে । বহিষ্কারের আদেশ কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে । এখন থেকে তারা আমাদের দলীয় কোনো কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করতে পারবে না।
দিনাজপুরে হঠাৎ যুব মহিলা লীগের ৩ নেত্রীকে বহিষ্কারের ঘটনায় সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। বিশেষ করে ঢাকায় যুব মহিলা লীগের নেত্রী পাপিয়া গ্রেফতার ও রিমান্ডে অনেক চমকপ্রদ ঘটনা বেরিয়ে আসার পর শুধু দেশ ও দেশের বাইরের গণমাধ্যম, সোশাল মিডিয়া ও রাজনৈতিক অঙ্গণে ঝড় উঠে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই অপকর্মের জন্য দিনাজপুরে যুব মহিলা লীগের তিন নেত্রীকে বহিষ্কারের বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। বাস্তবতায় দিনাজপুরে অনেক পাপিয়া বয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতি, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার নামে তথাকথিত নেত্রীরা বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ ও অপকর্ম চালিয়ে আসছে। আর তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন কতিপয় প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের মানুষ।