চার বছরেও অধরা তনুর ঘাতকরা, তদন্ত এগোচ্ছে না!

  • আবদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুমিল্লা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের চার বছর পূর্ণ হচ্ছে শুক্রবার (২০ মার্চ)। তবে দেশব্যাপী আলোচিত এই হত্যার চার বছরেও শনাক্ত হয়নি খুনিরা। এছাড়া  মামলার তদন্তেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই বলে দাবি করেছে তনুর পরিবার ।

তনুর পরিবার ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে আর বাসায় ফিরেনি তনু। পরে স্বজনরা অনেক খোঁজাখুঁজি করে রাতে বাসার অদূরে সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গলে তনুর মরদেহ পায়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ও ডিবি’র পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কুমিল্লা। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, ২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ মেলানোর কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা- এ নিয়েও সিআইডি বিস্তারিত কিছু বলছে না।

সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদ করা ব্যক্তিরা তনুর মায়ের সন্দেহ করা আসামি বলেও সিআইডি জানায়। তবে তাদের নাম জানানো হয়নি।

বিজ্ঞাপন

গণজাগরণ মঞ্চের কুমিল্লার মুখপাত্র খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, হত্যাকারীদের সাজার দাবিতে আমাদের কর্মসূচি ছিলো। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে স্থগিত করেছি। তনু হত্যা মামলাটি তদন্তে সিআইডি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা চাই দ্রুত তনু হত্যার আসামি শনাক্ত হোক। নুসরাতের মতো তনুর হত্যাকারীদেরও সাজা হোক।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, সবাই তনুকে ভুলে গেলেও মা হিসেবে আমি তো ভুলতে পারি না। সারা বাসায় মেয়ের স্মৃতি। সে বাসা সাজিয়েছে। যেদিকে তাকাই শুধু তনুকেই দেখি। তাকে ভুলতে পারি না। মেয়ের কাপড়গুলো রেখে দিয়েছি। মাঝে মাঝে বের করে দেখি। কাপড়ে মেয়ের গায়ের ঘ্রাণ নিই। আর চোখের পানি ফেলি। দুই বছর ধরে সিআইডি কোনো যোগাযোগ করছে না।  তনুর বাবা এবং আমি দুজনই খুব অসুস্থ । আগের মতো বিভিন্ন অফিসে যেতে পারি না। মৃত্যুর আগে মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে মেয়ের হত্যার বিচার চাওয়ার সুযোগ পেলে ভালো লাগতো।

তনুর মা আরও বলেন, সার্জেন্ট জাহিদ ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকারীর নাম বেরিয়ে আসবে। কারণ সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনি করতে যাওয়ার পর জঙ্গলে তনুর মরদেহ পাওয়া যায়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমরা তনুর হত্যার বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছি। ডিএনএ পরীক্ষা এবং ম্যাচিং করার বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। ডিএনএ’র রিপোর্ট এখনও হাতে পাইনি। রিপোর্ট পেলে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো।