বিয়েতে রাজি না হওয়ায় তরুণীকে চুল কেটে নির্যাতন

  • সাবিত আল হাসান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নারায়ণগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় স্বামী পরিত্যক্তা তরুণীর (১৯) চুল কেটে দিয়েছে কথিত প্রেমিক। ওই তরুণী যাতে অন্য কাউকে বিয়ে করতে না পারে সেই উদ্দেশ্যে জ্বলন্ত কয়েল দিয়ে ছেঁকা দিয়ে শরীরের বেশ কিছু অংশ পুড়িয়ে দিয়েছে পাষণ্ড ওই যুবক। এ ঘটনায় আড়াইহাজার থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করা হলে আপোষের জন্য চাপ দিতে থাকে নির্যাতনকারী ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

ভুক্তভোগী নারী জানায়, প্রায় ২ বছর পূর্বে একটি নাচের অনুষ্ঠানে মামলার আসামি আল আমিনের (৩৫) সাথে পরিচয় হয় তার। ৬ মাস পূর্বে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেলে বিয়ে করার প্রস্তাব দিতে থাকে ২ সন্তানের পিতা আল আমিন। তবে এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ ও হুমকি দিতে থাকে আল আমিন। গত ২১ মার্চ সন্ধ্যায় আড়াইহাজারের কৃষ্ণপুরা মোড় থেকে ঔষধ কিনে ফেরার পথে একটি নোয়া গাড়িতে তুলে নেয় আল আমিন ও তার সঙ্গীরা। পরে তাকে বিভিন্ন ভাবে মারধর ও হুমকি দিয়ে বিয়ে করার চাপ দিতে থাকে। একপর্যায়ে তাকে আল আমিনের বাসায় নিয়ে হাতে ও মুখে কয়েলের আগুনের ছেঁকা দেয় এবং চুল কেটে ফেলে।

বিজ্ঞাপন

ওই দিন রাত ৩টায় ভুক্তভোগীর চেহারা পুড়িয়ে দিতে উপজেলার চামুরকান্দি এলাকার একটি ব্রিজের নিচে নিয়ে এসে গলায় পাড়া দিয়ে এসিডের বোতল বের করে। এসময় আল আমিনের পায়ে কামড় দিয়ে ভুক্তভোগী পালাতে সক্ষম হয়। পরদিন ভুক্তভোগীর মা থানায় আল আমিন ও তার সহযোগীদের নামে নারী নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখিত আসামিরা হলো, আল আমিন (৩৫), কামাল হোসেন (৩০) ও মুছা (৩২)।

ভুক্তভোগী আরও বলেন, মামলা করার পর থেকেই তা তুলে নেওয়ার জন্য বার বার হুমকি দিচ্ছে তারা। এই ঘটনায় পৌরসভার কমিশনারও আমাকে আপোষের প্রস্তাব দেয়। আল আমিন বার বার আমাকে ফোন দিয়ে আপোষের কথা বলে এবং আমার ২ বছরের সকল খরচ বহন করতে চায়। আমি রাজি না হওয়ায় আমার ছোট বোনকেও দেখে নিবে বলে হুমকি দেয়। এতে করে আমি আমার নিরাপত্তার জন্য এখন আড়াইহাজার ছেড়ে রূপগঞ্জে আশ্রয় নিয়েছি।

বিজ্ঞাপন

মামলার প্রধান আসামি আল আমিন বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বার্তা২৪.কম-কে জানায়, মেয়েটির সাথে আমার ৬ মাসের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এসময় আমার প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা এর পেছনে খরচ হয়েছে। আমি তাকে সহ তার ৪ বোন ও মেয়েকে খাবার পাঠাতাম। কিন্তু সে অন্য ছেলেদের সাথে গোপনে সম্পর্কে জড়ায়। আমি সবকিছু জেনেও তাকে নিয়ে এসে প্রস্তাব দেই আমাকে বিয়ে করতে এবং এসব ছেড়ে দিতে। কিন্তু সে আমাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করায় আমি রাগের মাথায় এই কাজ করে ফেলেছি। পরবর্তীতে আমি বিভিন্নভাবে ক্ষমা চেয়ে এবং ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছি। কিন্তু হুমকি দেইনি।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে আড়াইহাজার পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল ইসলাম শুভ বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি যতটুকু জানি সেই অনুযায়ী বলেছিলাম যাতে দুজন মীমাংসা করে ফেলে। কিন্তু আমি কোনো চাপ দেইনি। এখন মামলা হয়ে গেছে। ঘটনাটি আইন আদালত দেখবে। আমি ভুক্তভোগীকে হুমকি বা চাপ দেইনি। এই অভিযোগ যদি করেও থাকে তাহলে মেয়ের মানসিক সমস্যা রয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মঞ্জুর বলেন, মামলায় উল্লেখিত আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। দ্রুতই তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।