২০ ফার্মেসি ঘুরেও মিলছে না স্যানিটাইজার-হেক্সিসল
কুমিল্লা নগরীর প্রায় সব এলাকায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসলের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ২০টি ওষুধের দোকান ঘুরেও মিলছে না এক বোতল হেক্সিসল ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার। একই অবস্থা নগরীর আশপাশের এলাকাতেও। ওষুধের দোকানের পাশাপাশি কোনো সুপারশপেরও মিলছে না এসব হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসল।
বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সরজমিনে নগরীর সদর হাসপাতাল রোড, মেডিকেল কলেজ রোড, বাদশা মিয়ার বাজার, রেইসকোর্স, ঝাউতলা , বাদুড়তলা, রানীর বাজার , স্বপ্ন সুপারশপ, রাজগঞ্জ বাজারে ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।
নগরীর সদর হাসপাতাল রোড এলাকার অন্তত ১০ টি ওষুধের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, কোনো ওষুধের দোকানেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসল নেই।
এই এলাকার সৈয়দ ফার্মেসির সত্ত্বাধিকারী আজিজুল হক মজুমদার জানান, গত ৬ থেকে ৭ দিন থেকে আমাদের কাছে হেক্সিসল ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার নেই। আমরা বেশি দাম দিয়েও এগুলো কিনতে পারছি না। সারাদিন অসংখ্য ক্রেতা এসে হেক্সিসল ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
নগরীর ঝাউতলা এলাকার ইতি ফার্মেসির মালিক রাসেল আহমেদ জানান, গত চার থেকে পাঁচদিন ধরে কুমিল্লা নগরীর বেশিরভাগ ওষুধের দোকানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসল সরবরাহ হচ্ছে না। আমরা প্রতিদিন অন্তত ৫০০ জন ক্রেতাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। সরবরাহ না থাকলে আমরা কিভাবে বিক্রি করবো।
এক বোতল হেক্সিসলের জন্য কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় ও রাজগঞ্জ এলাকার অন্তত ২০টি ফার্মেসিতে ঘুরেছেন চাকরিজীবী আরিফুর রহমান। তবে তিনি ব্যর্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন।
আরিফুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, আমরা যতটুকু জেনেছি একটি সিন্ডিকেট করোনাভাইরাসের এই সময়টাকে পুঁজি করে হেক্সিসল ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্টক করে রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। এরপর সুযোগ বুঝে এগুলো বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রশাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
নগরীর হাউজিং এস্টেট (গোলমার্কেট) এলাকার গৃহিণী মিনু বেগম বলেন, শুধু হেক্সিসল আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার নয়। এখন নতুন করে সিভিটেরও (ভিটামিন সি) সংকট তৈরি হয়েছে ওষুধের দোকানগুলোতে। গত দুইদিন আগে ২ পাতা সিভিট কিনেছিলাম। আজ গিয়ে দেখি কোন দোকানেই হেক্সিসল ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের পাশাপাশি সিভিটও নেই।
এদিকে, অনেক ভোক্তারা অভিযোগ করেছেন, কোথাও কোথাও গোপনে অধিকমূল্যে হেক্সিসল ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এর সংখ্যাও অনেক কম এবং কাজটি চলছে পুরোপুরি গোপনীয়তা রক্ষা করে।
সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি ৫০ মিলির একটি হেক্সিসল কিনেছেন ৮০ টাকা দিয়ে। যদিও এটির কোম্পানি নির্ধারিত মূল্য ৪০ টাকা। তাও দোকানদার তার পরিচিত বলেই কিনতে পেরেছেন বলে জানান তিনি।
আনোয়ার হোসেন নামের আরেকজন জানান, তিনি ১৩০ টাকা মূল্যের ২৫০ এমএল এক বোতল হেক্সিসল কিনেছেন ২০০ টাকা দিয়ে। তাও অনেক রিকোয়েস্ট করার পর অতিরিক্ত টাকার কথা বলায় ফার্মেসির লোকেরা তাকে এটি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আছাদুল ইসলাম এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা এমন অনেক অভিযোগ পাচ্ছি। তবে এসব অভিযোগগুলো সুনির্দিষ্ট নয়। আমরা ভোক্তাদের অনুরোধ জানাবো আপনারা সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ জানান। অবশ্যই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অধিক দামে যারা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসল বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, আমাদের নিজস্ব উদ্যোগেও এসবের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক অসাধু ব্যবসায়ীকে এসব কারণে জরিমানাও করা হয়েছে।