চুনারুঘাটে চা শ্রমিকদের মানবেতর জীবন
বাগান ও শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে ২৪ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্ত ঘেষা রেমা চা বাগানের সকল কার্যক্রম। কাজ করতে না পেরে আর্থিক দুরবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে ওই বাগানের প্রায় সহস্রাধিক শ্রমিককে। তবে বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে- কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি, শ্রমিকরা অকারণে অঘোষিত কর্মবিরতিতে গিয়েছেন।
জানা যায়, চা শ্রমিক শিশুদের একটি খেলার মাঠে চা বাগান করার উদ্যোগ নেয় রেমা চা বাগান কর্তৃপক্ষ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ মার্চ বাগানের একটি ট্রাক্টর সেখানে হালচাষ করতে যায়। এ সময় শ্রমিকরা হালচাষ করতে বাধা প্রদান করে। কিন্তু শ্রমিকদের বাধা উপেক্ষা করে হাল চাষ অব্যাহত রাখলে উত্তেজিত শ্রমিকরা ট্রাক্টরটি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় বাগান ব্যবস্থাপক দিলীপ সরকার চুনারুঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ৫ মার্চ পুলিশ তদন্ত করতে বাগানে গেলে অভিযোগের বিষয়টি জানতে পারেন শ্রমিকরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ৬ মার্চ বাগান ব্যবস্থাপকের সাথে শ্রমিকদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা বাগানের বাংলোতে ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় বাংলো ভাঙচুর ও বাগানের ব্যবস্থাপক দিলীপ রায়, সহকারী ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম, শামীম আহম্মদ ও সুপারভাইজার আব্দুল জলিলকে মারপিটের অভিযোগে ২৪ চা শ্রমিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করে বাগান কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, এ ঘটনায় ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসের দিন সকালে রেমা চা বাগান থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে উপজেলা পরিষদের সামনে বিক্ষোভ করেন নারী শ্রমিকরা। পরে চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান মহালদার ও চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নাজমুল হোসেনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে শ্রমিকদের শান্ত করেন।
চা শ্রমিকদের দাবি- ‘লংকা ভ্যালি’ অন্তর্ভুক্ত রেমা চা বাগানে স্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন ৩শ’ ৮৫ জন এবং অস্থায়ী শ্রমিক আছেন প্রায় ৬শ’। শিশু-বৃদ্ধ মিলিয়ে ওই বাগানে শ্রমিক পরিবারগুলোর সদস্য সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ২শ’র অধিক। ৫ মার্চ থেকে কর্তৃপক্ষ অন্যায়ভাবে বাগানের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখায় বেকার হয়ে পড়ায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। তবে বাগান কর্তৃপক্ষের দাবি- শ্রমিকরা অন্যায়ভাবে বাগানের কর্মকর্তা-কর্মকচারিকে মারপিট করে নিজেরাই অঘোষিত কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে বড় ধরনের লোকসান গুণতে হচ্ছে বাগান কর্তৃপক্ষকে।
রেমা চা বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি তনু মুন্ডা বলেন- ‘অন্যায়ভাবে বাগান কর্তৃপক্ষ আমাদের উপর দুটি মামলা দায়ের করেছে। এছাড়া বাগানের উৎপাদনও বন্ধ করে দেয় তারা। ফলে আমাদের শ্রমিকদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের লোকজন বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কোন সমাধান হয়নি।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন- ‘আমাদের শ্রমিকদের উপর তারা নির্যাতন করেছে। আবার অসহায় শ্রমিকদের শায়েস্তা করতে নিজেরাই বাগানের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও শ্রম অধিদফতর বাগান চালুর জন্য চিঠি দিলেও বাগান কর্তৃপক্ষ কোন কর্ণপাত করছে না।
তিনি বলেন- ‘বাগানে উৎপাদন বন্ধ রেখে মালিকপক্ষ চা বাগান ইজারা নেয়া ও শ্রমিকদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে। তাই আমরা এখন এ বাগানের ইজারা বাতিলের দাবি জানাব।’
এ ব্যাপারে রেমা চা বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে সম্ভব হয়নি।
চুনারুঘাট উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান মহালদার বলেন- ‘আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। তবে জেলা প্রশাসন থেকে রেমা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে ৩ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।’