'দেশে নাকি অসুখ আইসে, কেউ ভিক্ষা দেয় না'
ছয় দিন পর বস্তিতে থাকা তাহেরা বেগম ভিক্ষা করতে বের হলেন। যে কয়টি গ্রাম ঘুরেছেন অন্যদিনের তুলনায় মন্দ কথা শুনেছেন বেশি। সকাল গড়িয়ে দুপুর শেষে পড়ন্ত বিকেলে সেই বস্তিতে ফেরার পথে তার সঙ্গে দেখা।
তাহেরা বেগম জানালেন, ছয়দিন জমানো খাবার খেয়েছি। দেশে নাকি কি অসুখ আইছে, আমি কিছু বুঝিনা। ঘরে ঘরে এখন ভিক্ষা দিতে চায় না। এক মুঠো চাল চাইলে বলে দেশের কোনো খবর শোনেন নাই? কেন ভিক্ষা করতে নেমেছেন?-তখন চুপ হয়ে ফিরে আসি।
তাহেরা বেগম লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলায় জন্ম নেন। আত্মীয়-স্বজন কারো কথাই এখন আর মনে নেই। ১৫/১৬ বছর যাবত চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে চলছেন। থাকেন চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের হাজীগঞ্জে রেল স্টেশনের পূর্ব পাশের বস্তিতে। ওই বস্তিতে আরও শতাধিক মানুষ আছেন যারা টোকাই ও ভিক্ষাবৃত্তি করেন।
তাহেরা বেগমের কাছ থেকে জানা গেল, তাদের বস্তিতে কোনো সরকারি সংস্থা বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাহায্যার্থে কেউ এগিয়ে আসেননি।
তাহেরা বেগমের মতো একই অবস্থা যারা ভিক্ষা করে চলেন। হাজীগঞ্জ রেলস্টেশনে ভিক্ষা করে দিনের আহার জোটান এমন ভিক্ষুকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে করোনাভাইরাসের কারণে রেল চলাচল বন্ধ হওয়ায় অনেকেই স্টেশন ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
জানতে চাইলে রেলস্টেশন কর্মকর্তা শিমুল মজুমদার বলেন, হাজীগঞ্জ রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে সপ্তাহখানেক পূর্বেও পাঁচ-ছয়জন মানসিক বিকারগ্রস্ত ও ভিক্ষুকরা রাতে ঘুমিয়ে থাকতেন। ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্টেশন এলাকার অনেক দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। আগে যারা এখানে ভিক্ষা করতেন তাদের অনেককেই এখন আর দেখছি না।
হাজীগঞ্জ উপজেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি রোটারিয়ান আলী আশরাফ দুলাল বলেন, সমাজের বিত্তবান, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, সরকারিভাবে দেশের এই মহামারী দুর্যোগে খুব কষ্টে আছেন এমন মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত।