করোনায় ছুটি মিলছে না চা শ্রমিকদের
করোনাভাইরাসের সংক্রামণ ঠেকাতে সারাদেশের সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে মাঠে কাজ করছে সেনাবাহীনিসহ স্থানীয় প্রশাসন। অথচ এখনও ছুটি মেলেনি হবিগঞ্জের চা শ্রমিকদের। সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণভাবেই প্রতিদিন উৎপাদন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন অবহেলিত এ শ্রমিকরা। শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করেন- ছুটির জন্য বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার অনুরোধ জানালেও তারা কোনো কর্ণপাত করছে না। আর স্থানীয় প্রশাসন বলছে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি নির্দেশনা না আসায় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না তারা।
জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট, মাধবপুর, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলায় ২৪টি চা বাগান রয়েছে। সেখানে নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় অর্ধলক্ষাধিক। আর শিশু-বৃদ্ধ মিলিয়ে এ জেলায় চা শ্রমিক পরিবারের সদস্য সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাবে। সব সময় অবহেলিত এ শ্রমিকদের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসেও মুক্তি মেলেনি। তাদেরকে কাজ করতে হচ্ছে অন্যদিনের মতোই। স্বাস্থ্য সচেতনহীন এসব চা শ্রমিকদের নেই নূন্যতম নিরাপত্তা। শারীরিক দূরত্ব মানা তো দূরের কথা, মাস্ক ব্যবহারও করছেন না তারা।
শ্রমিকদের দাবি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ঠেকাতে সারাদেশে সব কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর থেকে বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে তারা ছুটির জন্য আবেদন জানিয়ে আসছেন। বাধ্য হয়ে গত ২৭ মার্চ ছুটির দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করে চুনারুঘাট উপজেলার নালুয়া ও আমু বাগানের শ্রমিকরা। অন্যদিকে, দেশের সকল চা বাগানের শ্রমিকদের স্ব-বেতনে ছুটির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন।
এ ব্যাপারে দেওয়ন্দি চা বাগানের শ্রমিক অরুণা সাওতাল বলেন, শুনেছি করোনাবাইরাসে মানুষ মরে যায়। তাই আমরা বাগান মালিকের কাছে ছুটি চেয়েছি। কিন্তু ছুটি না দিলেতো কিছু করার নেই। বাগানে যদি কাজ করতে না আসি তাহলে না খেয়ে মরতে হবে।
বাগান পঞ্চায়েক কমিটির নেতা স্বপন সাওতাল বলেন, আমরা বাগান কর্তৃপক্ষকে স্ব-বেতনে শ্রমিকদের ছুটির জন্য অনুরোধ করে আসছি। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষ আমাদের কথায় কান দিচ্ছে না। এ অবস্থা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে করোনা ঝুঁকি বেড়ে যায়।
গত ২৭ মার্চ ‘বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন’ নেতারা শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে যে চিঠি পাঠিয়েছে তাতে বলা হয়, দেশের এই চরম সংকটময় পরিস্থিতিতে সবাইকে যখন নিজগৃহে নিরাপদে অবস্থান করার কথা বলা হচ্ছে। তখন একই রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে চা শ্রমিকদের জন্য ভিন্ন আইন কিভাবে চালু থাকে?
তবে বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে- ছুটি না দিলেও শ্রমিকদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি বাগানে শ্রমিদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কাজ কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট উপজেলার চন্ডিছড়া চা বাগানের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রেখেছি। একইসঙ্গে আগে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ডিউটি ছিল। কিন্তু এখন দুই ঘণ্টা কমিয়ে বেলা ২টা পর্যন্ত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সত্যজিৎ রায় বলেন, চা বাগান বন্ধ রাখতে এখনও শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তবে শ্রমিকদের সুরক্ষা দিতে প্রতিটি বাগান কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। সেখানে শ্রমিকদের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি মাস্ক বিতরণ করার জন্য প্রতিটি বাগান কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। এছাড়া তাদের ছুটির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
সচেতন মহল বলছেন, স্বাস্থ্য অসচেতন ও ঘনবসতি হওয়ায় চা শ্রমিকদের একজনের মধ্যে করোনা সংক্রামণ দেখা দিলে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।