নিয়ম মানছে না রিকশা চালকরা, তবুও সড়কে ত্রাণ বিতরণ
লক্ষ্মীপুরে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া অন্যসব বন্ধ থাকার কথা থাকলেও রিকশা-অটোরিকশা চালকরা তা মানছে না। এক একটি রিকশায় ৩-৪ জন যাত্রী উঠতে দেখা গেছে । আবার সেই রিকশা চালকদেরকেই নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী দিচ্ছেন পুলিশ প্রশাসন ও রাজনীতিবিদরা। এসময় খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সবাইকে বাড়ি চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার (৩০ মার্চ) দুপুরে সদর উপজেলার দালাল বাজার এলাকায় জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ড. এএইচএম কামরুজ্জামান দিনমজুরদের মাঝে নিত্য পণ্য বিতরণ করেন।
এদিকে লক্ষ্মীপুরে কর্মরত সরকারের শীর্ষ স্থানীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা রোববার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ত্রাণের জোয়ারে সঙ্গরোধ (কোয়ারেন্টাইন) গেল হারিয়ে। এতে অনেকেই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মন্তব্য লিখেন।
সচেতনদের ভাষ্যমতে, দেশের এই সংকট মুহূর্তে প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিরা খাদ্যসামগ্রী ও দায়িত্ব পালনে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন। তবে খাদ্যসামগ্রী বিতরণে গণজমায়েত না করে কষ্ট করে হলেও দিনমজুরদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে দেওয়া গেলে ভালো হতে। এতে সঙ্গরোধ নিশ্চিত হবে।
অন্যদিকে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়ার জন্য লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জন চন্দ্র পাল দিনমজুরদেরকে নিজ কার্যালয় প্রাঙ্গণে তলব করে এনেছেন। রোববার (২৯ মার্চ) দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে ৭৫ জন দিনমজুরের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। যদিও তিনি দিনমজুরদের নির্দিষ্ট দূরে রেখে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিষ্ক্রিয়তার সংবাদে খাদ্যসামগ্রী বিতরণে মাঠে নেমেছে এমপিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের এই ত্রাণ সামগ্রী দিতে গিয়ে জমায়েত সৃষ্টি হচ্ছে। সোমবার সকাল থেকে জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শহরের রাস্তায় সঙ্গরোধের নিয়ম ভাঙা রিকশা চালক ও অসহায় নারীদেরকে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন। কিন্তু মুখে মাস্ক থাকলেও কোনো নেতাকর্মীর হাতেই গ্লাভস দেখা যায়নি। এছাড়া সরকারি বরাদ্দের খাদ্যসামগ্রী দিনমজুরদের দিয়ে নিজ উদ্যোগে দেওয়া হচ্ছে বলে প্রচার করছেন জনপ্রতিনিধিরা।
তিনজন অটোরিকশা চালক জানায়, পেটের তাগিদে তারা বাধ্য হয়েই রাস্তায় নামছেন। কাজে না নামলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। পেট তো আর লকডাউন বুঝে না।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল বলেন, মানুষ সচেতন হলেই জনসমাগম ও অপ্রয়োজনে চলাচল বন্ধ করা সম্ভব। তা না হলে জেলা প্রশাসনের পক্ষে এটি রোধ করা কষ্টকর। তবুও জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন। সার্বক্ষণিক সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ টহল দিচ্ছে। নির্দেশনা অমান্যকারীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তিও দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া বাস, ট্রাক, রিকশা, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলসহ সকল প্রকার যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, মুদি ও ফার্মেসির দোকান ছাড়া হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও চায়ের দোকানসহ অন্যসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টার আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানগুলোও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।