পকেডে টিয়া নাই, ফেনীর তন আঁডি আঁডি আইছি
‘আঁই ফেনীতে রাজমেস্তুরির কাম করি। হিয়ানে যাই আটকি গেছি। গাড়ি চলে না, হিয়ারলাই আইতেও হাইরতাছি না। ইয়ানদি আঁর ঘরে এক হুডা চাইলও নাই। পকেডেও টিয়া নাই। হোলা-মাইয়া লই আঁর বউ কষ্ট হাইতাছে। হুইনছি, হাওলাত করি চাইল লই আইজ ভাত রাইনছে। এডা হুনি কষ্ট সইতে হারি ন। হিয়ার লাই, হেয় ফেনীর তন আঁডি আঁডি চলি আইছি’।
জানতে চাইলে এভাবেই নিজের অসচ্ছলতার কথাগুলো বলেন করোনার কারণে ফেনীতে আটকা পড়া নির্মাণ শ্রমিক সাইফুল ইসলাম। পকেটে টাকা না থাকায় সোমবার (৩০ মার্চ) ভোরে কর্মস্থল থেকে হেঁটে লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। বিকেলে তিনি লক্ষ্মীপুর চকবাজার এসে পৌঁছান।
চকবাজার এলাকায় লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য একেএম শাহজাহান কামালের প্রতিনিধি বায়েজিদ ভূঁইয়ার সঙ্গে সাইফুলের দেখা হয়। এসময় নির্মাণ শ্রমিক সাইফুলের ঘটনা শুনে বায়েজিদ তাকে এক সপ্তাহের খাদ্যসামগ্রী ও গাড়ি ভাড়া দিয়ে বাড়িতে যেতে পরামর্শ দেন।
সাইফুল সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের সমাসপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গত ৮ দিন আগে কর্মস্থল ফেনীতে যান। কিন্তু মরণব্যাধি করোনার কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে ৫ দিন আগে ফেনীতে সকল ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরপর থেকে আসার চেষ্টা করেও তিনি টাকা না থাকায় লক্ষ্মীপুর আসতে পারেননি। সহকর্মীদের সঙ্গে কোনরকম দিনযাপন করছিলেন।
এদিকে বাড়ি থেকে মোবাইল ফোনে জানতে পেরেছেন ঘরে খাদ্যসামগ্রী নেই। তার সহধর্মিনী ছেলেমেয়েদের মুখে খাবার তুলে দিতে প্রতিবেশীর কাছ থেকে চাল ধার নিয়েছেন। এরপর তিনি আর থাকতে পারেননি। সোমবার ভোরে খালি পকেট নিয়ে বের হয়ে পড়েন বাড়ির উদ্দেশ্যে। গাড়ির আড়াই ঘণ্টার পথ পায়ে হেঁটেই পাড়ি দিয়েছেন তিনি। পকেটে ৫০ টাকা ছিল, ওই টাকা দিয়ে নোয়াখালীর চৌরাস্তা এলাকায় তিনি ভাত খেয়েছেন। কিন্তু খাবারে তিনি তৃপ্তি পাননি। অবশেষে বিকেলে লক্ষ্মীপুরের প্রাণ কেন্দ্র চকবাজার এসে পৌঁছান।
জানতে চাইলে সাইফুল আরও বলেন, টাকা না থাকায় ফেনী থেকে এসে বাড়িতে যায়নি। শুনেছি লক্ষ্মীপুরে কাঁচাবাজার খোলা আছে। যদি সেখানে কোনো কাজ পাই, তাহলে কিছু চাল কিনে বাড়ি ফিরবো। এখন বায়েজিদ স্যার আমার অসচ্ছলতার কথা শুনে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে এমপির প্রতিনিধি ও জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক বায়েজিদ ভূঁইয়া বলেন, করোনা প্রতিরোধে কর্মহীন থাকা দিনমজুরদের মাঝে খাবার বিতরণের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সাইফুল নিজেও দিনমজুর, আর লোকটি অনেক দূর থেকে হেঁটে এসেছেন। তার কথাগুলো শুনে খুব কষ্ট পেয়েছি।
তাই তাকে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে।