বিষমুক্ত টমেটো আবাদেও বিক্রি নিয়ে অনিশ্চয়তা

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নাটোর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভালো টমেটোগুলো আলাদা করা হচ্ছে, ছবি: বার্তা২৪.কম

ভালো টমেটোগুলো আলাদা করা হচ্ছে, ছবি: বার্তা২৪.কম

সবজি আবাদে কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব বালাইনাশকের প্রতি সবসময়ই আগ্রহী নাটোরের চাষিদের। বিষমুক্ত সবজির চাহিদা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে নানা ধরনের জৈব বালাইনাশক ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করেন অনেক সচেতন চাষি। এরই ধারাবাহিকতায় সম্পূর্ণ বিষমুক্ত নিরাপদ পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করছেন জেলার টমেটো চাষিরা। ভালো মুনাফার আশায় পরিবেশবান্ধব এই পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। করোনা পরিস্থিতিতে বাইরের ক্রেতা কমার পাশাপাশি কমেছে স্থানীয় বাজারে টমেটোর চাহিদা। তাই বিক্রির অনিশ্চয়তা নিয়েই জমি খেকে টমেটো তুলছেন চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সদর উপজেলার ছাতনী, ইছলাবাড়ি, বড় হরিশপুর, লক্ষীপুর, নলডাঙ্গা উপজেলার ব্রহ্মপুর, বিপ্রবেলঘড়িয়া, মাধনগর, গুরুদাসপুরের পাঙ্গাশিয়াপাড়া, নাজিরপুর, কাছিকাটা, সিংড়ার মহেশচন্দ্রপুর, খাজুরা ও লালপুর উপজেলার লালপুর চর, কদিমচিলান, শোভ ও হোসেনপুরে কীটনাশকমুক্ত টমেটো চাষ হয়।

বিজ্ঞাপন

লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হোসেনপুর ও কদিমচিলান এলাকায় ৫ হেক্টর জমিতে বিষমুক্ত নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় টমেটোর চাষ করা হয়েছে। এ বছর প্রায় ১২০ টন টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলার চাষিরা বলছেন, কীটনাশক ও জৈব বালাইনাশক উভয় পদ্ধতিতে টমেটো আবাদ হলেও জেলার বাইরে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে কীটনাশকমুক্ত টমেটোর। অপেক্ষাকৃত সচ্ছল ক্রেতাদের জন্য স্থানীয় উৎপাদিত টমেটো বিক্রি হয় রাজধানীর বড় সুপারশপগুলোতে। তাছাড়া বড় কয়েকটি খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান কেচআপ তৈরি জন্য সংগ্রহ করে কীটনাশক ছাড়া উৎপাদিত টমেটো। বাণিজ্যিক চাহিদার নিরিখে জৈব বালাইনাশক ব্যবহারে বিপুল পরিমাণ উৎপাদিত টমেটো এবার অবিক্রীত থাকার শঙ্কা চাষিদের। সম্প্রতি জেলার নলডাঙ্গা হাটে বিক্রি করতে না পারায় এক চাষি তার টমেটো রাস্তায় ফেলে চলে যান।

বিজ্ঞাপন

লালপুরের কলসনগরের চাষি রুপচান আলী জানান, তিনি ২০ শতাংশ জমিতে কীটনাশক ছাড়াই টমেটো চাষ করেছেন। এই টমেটো এপ্রিলের মাঝামাঝি তোলা যাবে। তবে দাম কমে গেলে প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জন করা সম্ভব না।

নলডাঙ্গার মাধনগরের চাষি আফজাল হোসেন জানান, তিনি বিঘা চারেক জমিতে টমেটোর আবাদ করেছেন যার মধ্যে কিছু টমেটোতে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করেছেন। শুরুর দিকে ভালো দাম পেলেও এখন দাম কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৬ টাকায় এসে নেমেছে।

গুরুদাসপুরের কাছিকাটার চাষি আকলিমা বেগম বলেন, একটু ভালো দামের আশায় কীটনাশকমুক্ত টমেটো চাষ করি। করোনার কারণে কীটনাশক আর কীটনাশক ছাড়া চাষ করা টমেটোর দাম সমান হয়ে গেছে। তাই দাম ও বিক্রি নিয়ে চিন্তায় আছি। কম দামের টমেটো শহরে পাঠালে পরিবহন খরচই উঠবে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার বলেন, পরিবেশবান্ধব জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাই দমন ব্যবস্থাপনা ও প্রকল্পের আওতায় টমেটোর চাষ বৃদ্ধিতে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করেছে কৃষি বিভাগ। তবে ভোক্তার রুচি ও সামর্থ্যের ওপর যেহেতু চাহিদার হ্রাস-বৃদ্ধি নির্ভর করে, তাই দামের ভারসাম্যের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বাজার ব্যবস্থাপনাই ভূমিকা রাখে। পচনশীল সবজি সংরক্ষণে একটি হিমাগার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবনা দেয়া আছে যা বাস্তবায়িত হলে নায্যদাম পাবেন চাষিরা।