ত্রাণ বিতরণে নেই সামাজিক দূরত্ব, ঝুঁকিতে কর্মহীনরা

  • মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ত্রাণ বিতরণে নেই সামাজিক দূরত্ব, ছবি: বার্তা২৪.কম

ত্রাণ বিতরণে নেই সামাজিক দূরত্ব, ছবি: বার্তা২৪.কম

সামাজিক দূরত্বের তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সমাজের বিত্তবানরা দুস্থ ও কর্মহীনদের মাঝে বিতরণ করছেন ত্রাণ। এতে করে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার কর্মহীনদের মাঝে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলেছে। দ্রুতই এব্যাপারে সতর্ক না হলে সম্ভাবনা রয়েছে বিপর্যয়ের।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে রেহাই পেতে সারাদেশের মত শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন শিল্প কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভোগ্য পণ্যের দোকান ও ওষুধের দোকান ছাড়া বন্ধ রাখা হয়েছে প্রায় সকল দোকান ও গণ-পরিবহন। নির্ধারণ করা হয়েছে সামাজিক দূরত্ব। কর্মহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্য দিনমজুর। ফলে খাদ্য সংকটে পড়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

এসব দিনমজুরদের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সমাজের বিত্তবানরা। দুস্থদের মাঝে বিতরণ করছেন ত্রাণসহ করোনাভাইরাস রোধক সামগ্রী। তবে তারা কোনোরকম সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি না করে জনসমাগমের মাঝেই বিতরণ করছেন এসব ত্রাণ সামগ্রী।

দেখা গেছে একটি ত্রাণের প্যাকেট একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তি ধরে একজন কর্মহীন ব্যক্তিকে বিতরণ করতেও দেখা গেছে। যেখানে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে বাঁচতে ও সঙ্গরোধ ঠেকাতে প্রায় সবকিছুই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে দলবদ্ধভাবে বিতরণ করা হচ্ছে ত্রাণ। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ত্রাণ বিতরণ করার আহবান জানিয়েছেন সচেতন ব্যক্তিবর্গ।

বিজ্ঞাপন

তবে কিছু কিছু স্থানে উল্টো চিত্রও চোখেও পড়েছে৷ কেউ কেউ ত্রাণ দেয়ার সময় চেষ্টা করছেন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে।

এব্যাপারে ত্রাণ বিতরণকারী আশুলিয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার সাথে কথা হলে তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ত্রাণ বিতরণের প্রথম দিন একটু লোক সমাগম হয়েছিলো। এরকম লোক সমাগম হওয়ার পর ত্রাণ বিতরণের ধরণ পরিবর্তন করেছি। এখন দুস্থ ও কর্মহীনদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকা করা হয়। পরে আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এভাবেই ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছি।

ত্রাণ বিতরণ
একটি ত্রাণের প্যাকেট একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তি ধরে একজন কর্মহীন ব্যক্তিকে বিতরণ করছেন

ঘোষবাগ যুবসমাজের প্রতিনিধি সাব্বির বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছি। পাশাপাশি এলাকাবাসীকে সামাজিক দূরত্বের গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু অনেকে এই দূরত্বকে গুরুত্ব না দিয়ে বিতরণ করছে ত্রাণ। আমাদের এলাকা শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা। বেশিরভাগ শ্রমিকরাই করোনাভাইরাসের মহামারি, কিভাবে ছড়ায় এবং সামাজিক দূরত্বের গুরুত্ব সম্পর্কে জানে না। তাই যারা ত্রাণ বিতরণ করছেন তাদের সতর্ক থেকে বিতরণের পাশাপাশি সামাজিক দূরত্বের গুরুত্ব সম্পর্কে জানাতে হবে। আমরা সেটাই করছি।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ ইমাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, যেভাবে দলবদ্ধভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে তাতে করে এই ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি আছে। আমি অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ত্রাণ বিতরণের আহবান জানাই। সেই সাথে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এসব ত্রাণ বিতরণ মনিটরিং করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাই।

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, করোনাভাইরাস রোধে সামাজিক দূরত্বের কোন বিকল্প নেই। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত হলেই কেবল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচা সম্ভব। আমরা সবাইকে সচেতন করার জন্য মাইকিং করেছি, লিফলেট বিতরণ করেছি হ্যান্ড মাইক নিয়ে প্রশাসন থেকে শুরু করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও সতর্কতামূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। করোনা রোধে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। তাই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করেই কেবল সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিৎ। এতে দেশ ও দশের মঙ্গল।