সবাই খালি হাত ধুবার কয়, খাবার দেয় না কাইও
যেটে যাও সেটে খালি হাত ধুবার কয়, আর দূরত থাকবার কয় মোক কেউ তো খাবায় দেয় না। অসুখ শরীর নিয়া বাড়িত থাকি বাড়বার পাম না। না খায়া আর ক’দিন থাকোম। সবাই খালি কয় বাড়িত থাকি বাড়া যাবার নয় বড় অসুখ ধরবে। তাইলে ভিক্ষা না করলে কি খায়া বাঁচমো।
বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) দুপুরে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের কাবিলা পাড়া গ্রামের শারীরিকভাবে জীর্ণশীর্ণ সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা মালতী রাণী এসব কথা বলেন।
তিনি বাঁচার আকুতি জানিয়ে বলেন, মোর বুঝি এবার মরণ হয়। তিন দিন থাকি ঘরত খাবার নাই। কাইও (কেউ) একনা খাবার দেয় না।
মালতী রাণীর স্বামী সুটকু দাস ১০ বছর আগে মারা যায়। কান্দির বাজারের পাশে সরকারি পরিত্যক্ত জায়গায় একটি ঝুঁপড়ি ঘর তুলে তিনি থাকেন। ভিক্ষা করে তার জীবন চলে। সরকারি কোন সহযোগিতা পায়নি। এমনকি বয়স্ক বা বিধবা ভাতার কার্ডও তার কপালে জোটেনি।
দুই ছেলে বিবাহ করে পৃথক হয়েছেন। ছেলেদের অভাবের সংসার হওয়ায় মাকে তেমন সহযোগিতা করতে পারেন না। একমাস আগে এক ছেলে অভাবের তাড়নায় বউ বাচ্চা রেখে কাজের সন্ধানে যায়। তারপর থেকে তার কোন সন্ধান পাচ্ছে না পরিবারের লোকজন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে মানুষ যখন সঙ্গরোধ তখন জীবন বাঁচার তাগিদে মালতী রাণী মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন সাড়া পাচ্ছেন না। এক বেলা খাওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন সবার কাছে।
গত এক সপ্তাহ থেকে অঘোষিত লকডাউন থাকায় লোক সমাগম তেমন একটা নেই। ফলে হাত পেতে খাওয়া মানুষগুলোর কষ্টের সীমা নেই। অর্ধাহারে-অনাহারে দিনানিপাত করতে হচ্ছে তাদেরকে। সরকারিভাবে তাদের কপালে জুটছে না কোন সাহায্য সহযোগিতা।
কথা হয় মালতী রানীর প্রতিবেশী নেপেন চন্দ্রের সঙ্গে। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মালতী রানীর ছেলেরাও হতদরিদ্র। তারা দিন আনে দিন খায়। তাদের নিজস্ব কোন জায়গা জমি নাই। সরকারের জমিতে ঝুঁপড়ি ঘর তুলে থাকে। শুধু মালতী রাণী না, তার দুই ছেলেরও অভাবের সংসার।
এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য প্রশান্ত কুমার মিশ্র বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সরকারিভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলেও এই পরিবারটি কোন কিছুই পায়নি। হতদরিদ্র পরিবারটিকে আর্থিক ভাবে সাহায্যের জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।’
উপজেলার কান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাইফুল ইসলাম খান ইকবাল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সরকার প্রতি বছর পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ দেয়। এগুলো প্রকৃত হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা দরকার। সঠিক ভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলে হতদরিদ্ররা পাবে।
কান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান বার্তা২৪.কমকে জানান, ‘সামান্য কিছু বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সেগুলো বিতরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে বরাদ্দ পাওয়া গেলে মালতী রানী ও তার পরিবারকে দেওয়া হবে।