মানুষ বোঝাই পিকআপ ঢুকছে ঢাকায়

  • মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পিকআপে করে শ্রমিকেরা ঢাকায় আসছে/ছবি: বার্তা২৪.কম

পিকআপে করে শ্রমিকেরা ঢাকায় আসছে/ছবি: বার্তা২৪.কম

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশে স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধের পাশাপাশি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সারাদেশে কাজ করছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। সঙ্গরোধ ও সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টিতে যখন এতো কড়াকড়ি ঠিক তখন শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার শ্রমিকরা দল বেঁধে ছেড়েছেন ঢাকা আবার ফিরছেনও।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার প্রায় ৯৮ শতাংশ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এই সুযোগে গণপরিবহণ বন্ধ থাকলেও ট্রাক ও পিকআপে গাদাগাদি করে শ্রমিকরা ঢাকা ছেড়েছেন। আবার একইরূপে ফিরছেন ঢাকায়। এরকম ঝুঁকি নিয়ে ভ্রমণ সচেতন শ্রমিকদেরও ঝুঁকিতে ফেলছেন বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকায় অবস্থানরত শ্রমিকরা।

বিজ্ঞাপন
ট্রাক ও পিকআপে গাদাগাদি করে শ্রমিকরা ঢাকায় আসছেন

শনিবার (৪ এপ্রিল) সকালে সাভারের বিভিন্ন মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, চিরচেনা রূপশূন্য মহাসড়ক। নেই গণপরিবহনের সেই তীব্র সংকেত, নেই গাড়ির কোনো শব্দ। কিন্ত হর্নের শব্দ না পাওয়া গেলেও কিছুক্ষণ পরপর পাওয়া যাচ্ছে ট্রাক বা পিকআপের শব্দ। আর এসব যানে পণ্য নয় আসছে মানুষ। একই পিকআপে বা ট্রাকের পেছনে গাদাগাদি করে ঢাকায় ফিরছেন শ্রমিকরা।

পিকআপে করে গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় ফিরছেন নুর মোহাম্মদ। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, করোনার ভয়ে ছুটি পাওয়ার সাথে সাথে গ্রামে গিয়েছি। আজ থেকে ছুটি শেষ হয়েছে। আগামীকাল কারখানা খুলে দেবে। কারখানায় উপস্থিত না হলে কারখানা থেকে চাকরিচ্যুত করা হবে বলে সুপারভাইজার ফোন দিয়েছিলো তাই বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও চাকরি বাঁচানোর জন্য ঢাকায় ফিরলাম। তবে গাড়ি বন্ধ থাকায় আসতে খুব কষ্ট হলো। পিকআপে গাদাগাদির মধ্যেই আসতে হলো।

বিজ্ঞাপন
কারখানায় উপস্থিত না হলে চাকরিচ্যুত করা হবে বলে জানান শ্রমিকেরা

আরেক শ্রমিক বিউটি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা যেখানেই যাই কোনো নিরাপত্তা নাই। সবখানেই ঝুঁকি। কারখানায় কাজ করতেও ঝুঁকি, বাড়ি ও ঢাকায় ফিরতেও ঝুঁকিতে থাকি আমরা। আমাদের জীবনটাই ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে কাটে। এরকম ঝুঁকি নিতে আমরা অভ্যস্ত। তার পরেও ঝুঁকি এড়াতেই মূলত বাড়ি গিয়েছিলাম। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ আর ছুটি বাড়াবে না। তাই ফিরে আসলাম।

ছুটি পেয়েও বাড়ি যান নি রাবেয়া। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, কারখানা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ছুটি দিয়েছিলো। স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তা করে বাসা থেকে বের হই নি। কিন্তু যারা গ্রাম থেকে ঘুরে আসলো এখন তাদের সাথেই ডিউটি করতে হবে। এতো দিন ঘর থেকে না বের হয়ে লাভ কি হলো তাহলে। কোনো লাভ নাই। তাই বাহিরে বের হলাম।

এসব শ্রমিকেরাই কর্মস্থলে ঝুঁকি বাড়াতে পারেন

পিকআপ চালক আরিফ বলেন, আমরা তো গত ১৪ দিন ধরে বসে আছি। ঘরে খাবার নেই, কেউ তো খোঁজ খবর নেয় না। আগে খাবার ব্যবস্থা করেন তার পরে গাড়ি বন্ধ করতে আসেন। খাবার পেলেই আমরা গাড়ি বের করবো না।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার হোসেন বলেন, শ্রমিকদের বাসায় থাকার জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছিলো। যারা গ্রাম ভ্রমণ করেছে তাদের সঙ্গরোধ করে কাজ করানো উচিত। ভ্রমণ করা শ্রমিকেরা সবাই এক ফ্লোরে কাজ করলে ঝুঁকি কমতে পারে।