সাভারে যেভাবে রাতারাতি ‘হিরো’ বনে গেলেন সুইপার রতন শেখ

  • জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সাভারে যেভাবে রাতারাতি ‘হিরো’ বনে গেলেন সুইপার রতন শেখ

সাভারে যেভাবে রাতারাতি ‘হিরো’ বনে গেলেন সুইপার রতন শেখ

সাভারে নেটিজেনদের মাঝে রাতারাতি ‘হিরো’ বনে গেছেন এক মেথর। নিজের সঞ্চয়ের সর্বস্ব দিয়ে দাঁড়িয়েছেন মানবতার পাশে।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি কর্মহীন শতাধিক মানুষের মাঝে নিজেই তুলে দিয়েছেন পরিবার নিয়ে ১০ দিনের চলার মতো - চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ডিম ও হাত ধোয়ার সাবান। সামান্য একজন মেথরের এই মানবিকতাবোধ নজর কেড়েছে সবার ‌।

বিজ্ঞাপন

তিনি মো. রতন শেখ (৪৫)। সবাই তাকে চেনে সুইপার রতন শেখ হিসেবে।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থানার কাটাখালি গ্রামের আলিমুদ্দিন শেখের ছেলে রতন শেখ পরিবার-পরিজন নিয়ে মাত্র আড়াই হাজার টাকায় ভাড়া থাকেন সাভার পৌরসভার জামসিং জয়পাড়া আব্বাস ফরাজীর বাড়িতে।

বিজ্ঞাপন

পেশায় মেথর হলেও আদতে রতন শেখ অফিস ঝাড়ু দেবার মত পরিচ্ছন্নতাকর্মী নয়। দীর্ঘ প্রায় একযুগের বেশি সময় ধরে মানুষের বাসাবাড়ির ড্রেনে কিংবা ল্যাট্রিনে মানববর্জ্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজটিই করে আসছেন তিনি।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় সরকার। পরে ‘শাটডাউনের’ মেয়াদ ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে এই সময় সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েন বেশিরভাগ শ্রমজীবী মানুষ। প্রয়োজনে মানুষের কাছে যেমন ‘সুইপারের’ পেশাটি তাৎক্ষণিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় অপ্রয়োজনে আবার এই পেশার মানুষরাই হয়ে ওঠেন অচ্ছুৎ।

সেই আক্ষেপ থেকেই রতন শেখ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমরা অত্যন্ত নিম্ন আয়ের মানুষ। আমরা বুঝি এসময়টাতে মানুষের কত কষ্ট। আর সেই কষ্ট দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। জমানো ২৫ হাজার টাকা দিয়ে প্রয়োজন মাফিক চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ডিম ও হাত ধোয়ার সাবান নিয়ে ছোট ছোট পরিবার গুলোর পাশে এসে দাঁড়িয়েছি।

রতন শেখ সঞ্চয়ের সর্বস্ব দিয়ে দাঁড়িয়েছেন মানবতার পাশে

শনিবার (৪ এপ্রিল) বিকেল থেকেই সাধ্যমত মানবিক সহায়তা নিয়ে শতাধিক নিম্ন আয়ের মানুষদের বাড়ি বাড়ি যান রতন শেখ। কাজটি গোপনেই করছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত তা আর গোপন থাকেনি। মুখে মুখে রটে যায় সুইপার রতন শেখের এই মানবিকতার কথা।

স্থানীয় সাভার ফ্রেন্ডস সোশ্যাল ক্লাবের সভাপতি মো. শামীম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জীবন হাওলাদার বার্তা২৪.কম-কে জানান, সত্যিই অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন সুইপার রতন শেখ।

সামান্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে যারা মানুষের সঙ্গে তামাশা করেন, নিজেদের সামান্য অবদানকে অনেক বড় জাহির করে প্রচারের আলোয় আসার চেষ্টা করেন তাদের জন্য এক শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত রতন শেখ।

এই যে রতন শেখ এভাবে বাড়ি বাড়ি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন সেটা আমাদের নজরে আসার পর আমরাই বিষয়টি তুলে ধরে ফেসবুকে পোস্ট করি। তারপর থেকেই নেটিজেনদের (ইন্টারনেট জগতের বাসিন্দা) প্রশংসায় ভাসছেন রতন শেখ।

কেউ কেউ মন্তব্য করছেন সময়ের আসল হিরো এই রতন শেখ।

তিন সন্তানের জনক রতন শেখের বড় ছেলে মো. মনির শেখ (১০) ধামরাইয়ের সুঙ্গুরচর এলাকার একটি মাদরাসার শিক্ষার্থী। মেয়ে সুলতানা (৭) জামসিংয়ের একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আরেক কন্যা নদীর বয়স তিন বছর।

পেশায় সুইপার হলেও রতন শেখ এর স্বপ্ন তার সন্তানরা যাতে মানুষের মত মানুষ হয়ে বেড়ে উঠতে পারে এই সমাজে।