হার না মানা প্রতিবন্ধী সাহেব এখন জীবনযুদ্ধে পরাজিত
সাহেব উদ্দিন (৫৫)। দুই পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে সরু হয়ে বেঁকে অচল হয়ে গেছে। শারীরিক প্রতিবন্ধিতা তাকে হার মানাতে পারেনি। ব্যাটারি চালিত ভ্যান চালিয়ে পরিবারের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করে আসছিলেন এতোদিন।
এরই মধ্যে প্রাণঘাতী করোনার থাবায় যাত্রীশূন্য ভ্যান নিয়ে থমকে গেছে তার জীবনযাপন। সেই হার না মানা প্রতিবন্ধী সাহেব উদ্দিন এখন যেন জীবনযুদ্ধে পরাজিত।
রোববার (৫ এপ্রিল) দুপুরে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা শহরের চৌমাথা মোড়ে কথা হয় প্রতিবন্ধী সাহেব উদ্দিনের সঙ্গে।
সাহেব উদ্দিনের বাড়ি সাদুল্লাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের কিশামত শেরপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত ফারাজ উদ্দিনের ছেলে।
তার জীবিকার একমাত্র আয়ের উৎস ভ্যানটি। সংক্রমণের ঝুঁকি ভুলে এ বাহনটি নিয়ে যাত্রী বহনের জন্য সাদুল্লাপুর শহরের চৌমাথা মোড়ে অপেক্ষা করছিলেন।
চৈত্রের দাবদাহ আর প্রখর রোদে সকাল থেকে ভ্যানে বসে থাকলেও পাননি কোনো যাত্রী। ফলে সংসারের চিন্তায় তার চোখেমুখে দেখা যায় হতাশা।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশের সবখানে মানুষ ঘরেই অবস্থান করছে। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ। কেউ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাচ্ছে না। গাইবান্ধা জেলার প্রায় ২৪ লাখ মানুষও গৃহবন্দী। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছে দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষেরা। প্রতিবন্ধী ভ্যানচালক সাহেব
উদ্দিনও কর্মহীন হয়ে পড়াদের একজন।
তিনি ভ্যানে যাত্রী বহন করে যে টাকা পান, তা দিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার চলে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাহেব উদ্দিনও বাড়ি থেকে বের হননি কয়েকদিন। কিন্তু এতে থমকে যায় তার পরিবারের জীবনযাত্রা। চরম অর্থাভাবে পেট ভরে খেতে পারছেন না দু’বেলা দু’মুঠো ভাত। তাই বাধ্য হয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি ভুলে ভ্যান নিয়ে রাস্তায় বের হচ্ছেন সাহেব উদ্দিন।
বিধিবাম, রাস্তায়ও নেই যাত্রী। কারণ একটাই, করোনার প্রভাবে কমেছে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল। তবুও আয়-রোজগারের আশায় যাত্রী শূন্য ভ্যান নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন সাহেব উদ্দিন। এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি ও তার
পরিবারের সদস্যরা।
তিনি বার্তা২৪.কমকে জানান, ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ভ্যান নিজে কিনেছেন তিনি। এ দিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলছিল তার। এখন
করোনার প্রভাবে রাস্তা-ঘাটে যাত্রীর দেখা মিলছে না। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। এ দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ চললেও, তার কপালে তা জোটেনি।
এ বিষয়ে বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান (ইউপি) শাহিন সরকার বলেন, চাহিদার চেয়ে বরাদ্দ কম, তারপরও সাহেব উদ্দিনের বিষয়টি দেখা হবে।