আমার বাবা ভাবতেন অধিক বইপড়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর: উইলবার স্মিথ



অসীম নন্দন, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট বার্তা ২৪.কম
উইলবার স্মিথ

উইলবার স্মিথ

  • Font increase
  • Font Decrease

গত ১৩ই নভেম্বর মারা গেলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক উইলবার স্মিথ।

ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখায় তাঁর ছিল সিদ্ধহস্ত। তাঁর বইগুলো মূলত অ্যাডভেঞ্চার এবং নেচার জনারের অন্তর্ভুক্ত। সাংবাদিকতা পেশাকে ভালোবেসে তিনি সাংবাদিক হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাবার মন রক্ষা করতে প্রথম জীবনে তিনি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেট হিসেবে পেশা শুরু করেন। অ্যাকাউন্টেট থাকাকালীন সময়ে অফিস ছুটির পর তাঁর হাতে থাকতো প্রচুর সময়। তাই তিনি তাঁর প্রিয় শখের কাজ লেখালেখি করে সন্ধ্যার পরের সময়টা কাটাতে শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে স্টিভেন লরেন্স ছদ্মনামে 'আর্গোসি' ম্যাগাজিনে তাঁর লেখা প্রথম গল্প ‘অন ফ্লিন্ডার্স ফেস’ প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি আরো উৎসাহ বোধ করেন। এবং তিনি তাঁর প্রথম উপন্যাস 'দ্যা গডস ফার্স্ট মেইক ম্যাড' লিখতে শুরু করেন।

এই উপন্যাস ২০ জন প্রকাশকের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়। এতবার প্রত্যাখ্যানের কারণে তিনি দমে যান এবং একজন সাধারণ অ্যাকাউন্টেট হিসেবে জীবনযাপন করতে থাকেন। এরপর একদিন উরসুলা উইলিয়ামস নামে তাঁর লন্ডনের এক এজেন্ট টেলিগ্রাম করেন। টেলিগ্রামে তিনি উইলবার স্মিথের প্রথম উপন্যাস কতটুকু লেখা হলো জানতে চান। এই ঘটনায় উইলবার স্মিথ আবারো উজ্জীবিত হন এবং নতুন আরেক উপন্যাস লিখতে শুরু করেন।

আগের উপন্যাস লেখায় তিনি যে ভুলগুলো করেছিলেন, সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করেন। যেসব বিষয়ে তিনি সবচেয়ে বেশি জানেন, সেইসব অভিজ্ঞতাকে একত্রিত করেই তিনি লিখেন 'হোয়েন দ্যা লায়ন ফিডস'। এই বই সারাবিশ্বে পাঠকপ্রিয়তা পায়। একইসাথে সাউথ আফ্রিকাতে বইটি নিষিদ্ধও হয়। এরপর থেকে তিনি পুরোপুরি লেখালেখিতেই মনোনিবেশ করেন। তাঁর লেখা বই সারাবিশ্বে ১৪০ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর একমাত্র আত্মজীবনীমূলক বই ‘অন দ্যা লিওপার্ড রক: অ্যা লাইফ অফ অ্যাডভেঞ্চার’। সেই বই থেকে কিছু কিছু অংশ পাঠকদের জন্য এইখানে অনুবাদ করা হলো।



আমার কৈশোর কালটা মোটামুটি করুণ সময় ছিল। বইপড়া আমার জন্য একটা গোপন আনন্দের ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল। সেই সময়ে রান্নার কাজে এবং ঘর গরম রাখতে কাঠ ব্যবহার করা হতো, এবং তখন আমার প্রধান কাজ ছিল একদল লোকের সাথে ট্রাক্টর এবং ট্রেলার নিয়ে জঙ্গলে কাঠ কাটতে যাওয়া আর সেই কাঠ বোঝাই গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসা। তখন আমি সবসময়ই একটা বই আমার শার্টের ভিতরে লুকিয়ে নিয়ে যেতাম, এবং মাথায় হ্যাট পরে ট্রাক্টরের উপরে বসে বসে দুপুরবেলাতেও বই পড়তাম। আমার বাবা কোনোদিনই আমাকে ধরতে পারতো না, কারণ তার গাড়ির আওয়াজ পেলেই আমি বই লুকিয়ে ফেলতাম।


যদিও বাচ্চা ছিলাম তবুও আমি নিজের মতোই থাকতাম, আর সময় পেলেই বই পড়তাম। যখন থেকে আমি পড়তে শিখলাম তখন থেকেই বিগলস এবং উইলিয়াম নামের ছোটদের সিরিজ বই পড়তে শুরু করি। শীঘ্রই আমি সি এস ফরেস্টার'র লেখা 'হোরাসিও হর্নব্লোয়ার' অ্যাডভেঞ্চার সিরিজের দুনিয়ায় নিজেকে হারিয়ে ফেললাম। প্রায় ৮০০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত বুলাওয়েইয়ো শহরের গণগ্রন্থাগারকর্মীর সাথে আমার মায়ের বন্ধুত্ব ছিল, তাই প্রতি মাসেই মালবাহী ট্রেনে আমার জন্য এক প্যাকেট অ্যাডভেঞ্চার সিরিজের বই আসতো। তখন থেকেই আমার সংগ্রহে ভালো ভালো বই থাকতো। মৃত্যু, শঙ্কা, সাহসিকতা এবং বর্বরতার এই মহাদেশের গল্পগুলোতে আমি বুঁদ হয়ে যেতাম। আমি আফ্রিকার রোমাঞ্চকর গল্পগুলোকে ভালোবাসতাম।


ষোল বছর বয়সে আমি একটা ভয়ংকর বোর্ডিং স্কুলে বন্দী হয়ে গিয়েছিলাম। যাই হোক আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম, সেই অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ। আমার বয়স তখন ১৮, সাউথ আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের শহর গ্রাহামস্টোনে অবস্থিত রোডস বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার জন্য স্বর্গের দরজা খুলে গিয়েছিল। হঠাৎই খেয়াল করলাম সেখানকার মেয়েরা জিমস্লিপস পরে আর পরিচ্ছন্নভাবে সরীসৃপের মতন এঁকেবেঁকে গির্জায় যায়। এর আগে আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি মেয়েরা কতটা কমনীয়, উষ্ণ আর মোহনীয় সৃষ্টি।


বোর্ডিং স্কুলে ভালো স্মৃতি বলতে যদি কিছু থেকে থাকে তা হলো একজন প্রভাববিস্তারকারী ইংরেজি শিক্ষকের সাথে আমার সখ্যতা। তিনি সাধারণত আমার সাথে আমার পঠিত বইগুলো নিয়ে আলোচনা করতেন। একটা গল্প লেখার জন্য আমাকে কোন বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিতে হবে তিনি তাই আমাকে বোঝাতেন। তিনি সাধারণত গল্প লেখার ক্ষেত্রে ধ্রুপদী নিয়ম পছন্দ করতেন; যে লেখায় শুরু থাকবে, মধ্যভাগ থাকবে এবং শেষ থাকবে। আইডিয়াটা এরকম, গল্পটা শুরু হবে সাধারণভাবে এবং চলতে থাকবে। এরপর গল্পের মাঝামাঝি পয়েন্টেও একইরকম চলবে। আর গল্পের শেষে উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তা থাকবে। গল্পের প্রথমেই কাহিনিকে বেশি টানা যাবে না। ধীরেধীরে গল্পের চরিত্রগুলোকে গঠন করতে হবে। রহস্যটাকে গল্পের শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে। এটাই ছিল আমার শিক্ষকের ফর্মূলা। অবশ্যই তোমাকে এই পদ্ধতিতেই আগাতে হবে এবং তার পাশাপাশি নিজের সৃজনশীলতা কাজে লাগাতে হবে। এই পদ্ধতির মাঝেই লেখালেখির সকল প্রতিভা লুকিয়ে আছে।


আমি খুবই ভাগ্যবান কারণ আমি অসাধারণ দুইজন বাবা-মা পেয়েছিলাম। আমার বাবা খুবই কর্মঠ লোক ছিলেন আর মা শিল্পমনস্ক ছিলেন; তিনি খুবই নম্র স্বভাবের ছিলেন এবং বই পড়তে আর ছবি আঁকতে খুব ভালোবাসতেন। আমার কাছে এখনও তাঁর আঁকা ছবি আছে। আমার বাবা আমাকে বাস্তব জীবনের শিক্ষা দিয়েছিলেন। আর মা আমাকে সঙ্গীত এবং বইয়ের মাধ্যমে জীবনের আয়নায় অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন। খুব ছোট বয়সে যখন আমি পড়তে পারতাম না তখন মা আমাকে প্রতিরাতে বই থেকে গল্প পড়ে শোনাতেন। আমার বাবা ভাবতেন অধিক বইপড়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বাবা সাধারণত নন-ফিকশন বই পড়তেন; সেই বইগুলোর বেশির ভাগই যন্ত্রপাতি সারাইয়ের ম্যানুয়াল ছিল।


১৯৬২ সালে আমার বয়স তখন ২৯। একটা ব্যাচেলর বাসায় থাকি। আমার লেখা প্রথম উপন্যাস 'দ্যা গডস ফার্স্ট মেইক ম্যাড'। এই উপন্যাসটাকে আমি আমার সেরা কাজ ভেবেছিলাম। ২০ জন প্রকাশক পান্ডুলিপিটাকে প্রত্যাখ্যান করে। ২০ তম বার প্রত্যাখ্যাত হবার পর আমার বিছানায় বসে বসে প্রত্যাখ্যানপত্রের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সেইটাকে আমি হাতের মুঠোয় দুমড়েমুচড়ে ফেলি। আর মনস্থির করি আমার এজেন্টকে ঐ পান্ডুলিপিটা আর কোনো প্রকাশকের কাছে জমা দিতে না করে দেব। আমি তখন খুবই হতাশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবছিলাম, আমার বাবাই হয়তো সঠিক। বই মানে আসলে সময়ের অপচয়ই। কয়েকবছর পর আমি আবার আমার প্রিয় কাজ লেখালেখি শুরু করি এবং তারপর থেকে আর পিছুপা হইনি।


আমার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস 'হোয়েন দ্যা লায়ন ফিডস' কেউ একজন অপরিচিত পাঠক বসে বসে পড়ছে এমন দৃশ্য আমি দেখেছিলাম; সেই ঘটনা আমার মনে আছে। ১৯৬৪ সালে হিটথ্রো'তে ডিপার্চার লাউঞ্জে বসে আছি। লন্ডনের বেদনাদায়ক ভ্রমণের পর বুঝতে পারলাম মাত্র একটা বই প্রকাশ করে আমার পক্ষে সফলতার লালগালিচা অর্জন করা সম্ভব নয়। সেখানে দেখলাম একজন আকর্ষনীয় মহিলা বসে বসে আমার বই পড়ছে। আমি যারপরনাই খুশি হলাম। এবং তার কাছে গিয়ে বললাম, “এক্সকিউজ মি, আপনি আমার বই পড়ছেন।” সে আমার দিকে তাকিয়ে বইটা নামিয়ে রাখলো এবং বললো, “আমি দুঃখিত, কেউ একজন বইটা এখানে রেখে গিয়েছিল।”


মাঝেমাঝে মনে হয় আমার ১৬ বছর বয়সের আমি যদি বর্তমানের আমাকে দেখে তাহলে হয়তো সে নিজে থেকে ভাববে, এটা কোথা থেকে সম্ভব হলো! আমার এই নিজের নিয়মে লেখার ব্যাপারটা দেখে হয়তো সে খুবই খুশি হবে। সে হয়তো আমার দিকে তাকিয়ে বলবে, তুমি তো ভাগ্যদোষে ভাগ্যবান! আমার জন্যেও কিছু জমিয়ে রেখো!


তরুণ লেখকদের উদ্দেশ্যে আমার একটাই কথা, নিজের স্বপ্নের প্রতি যত্নশীল হও। সফলতাকে বড়শিতে আটকানোর জন্য যদি তোমার কাছে মাংসের টুকরা না থাকে, তাহলে যাও অন্য কারো জন্য কাজ কর। সমালোচনা আর নিজেকে সন্দেহ করার মতন অনিশ্চয়তা তোমাকে গিলে খাবে। আমি অনেক অনেক ভুল করেছি। দূর্ভাগ্যবশত ভুলগুলোই শেখার একমাত্র উপায়। ব্যর্থ হও ; ভালোভাবে ব্যর্থ হও। তারপর আবার শুরু কর; শেখো।

সূত্র: দ্য বিগ ইস্যু


এক নজরে উইলবার স্মিথ
তাঁর পুরো নাম উইলবার এডিসন স্মিথ। জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৩ সালে ৯ জানুয়ারিতে। জন্মস্থান: ব্রোকেন হিল, রোডেশিয়া। তিনি সাউথ আফ্রিকা'র কেপ টাউনে ২০২১ সালের ১৩ নভেম্বরে মারা যান। প্রকাশিত বই ৪৯ টি। উল্লেখযোগ্য বইয়ের নাম দ্যা সানবার্ড, ঈগল ইন দ্যা স্কাই, শাউট এট দ্যা ডেভিল, ডেজার্ট গড, রিভার গড, ওয়্যার লক ইত্যাদি। তাঁর লেখা প্রায় সকল বইই বেস্ট সেলার তকমা পেয়েছে।

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর সম্মাননা পেলেন ছয় কীর্তিমান



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীতকিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর সম্মাননা পেলেন ছয় কীর্তিমান

ছবি: সংগৃহীতকিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর সম্মাননা পেলেন ছয় কীর্তিমান

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিষ্ঠ চিকিৎসক, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আলহাজ্ব ডা. এ. এ. মাজহারুল হক এবং রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ ছয় কীর্তিমানকে সম্মাননা প্রদান করেছে।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকালে কিশোরগঞ্জ জেলা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান।

এতে সম্মাননা বক্তৃতা করেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ।

বক্তব্য রাখছেন ড. মাহফুজ পারভেজ

অনুষ্ঠানে ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননাপ্রাপ্তদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ পেয়েছেন কিশোরগঞ্জের আইনপেশার কৃতীজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হক।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ পেয়েছেন ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ, মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, প্রবীণ সাংবাদিক মু আ লতিফ ও আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন এবং প্রয়াত শাহ আজিজুল হকের পরিবারের পক্ষে ভাতিজা এডভোকেট শাহ আশরাফ উদ্দিন দুলাল ও মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবীর পক্ষে তার মেয়ে গৌরি রাণী দেবী সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন।

 এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক বাদল রহমান।


অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা দুলু, বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সমাজকর্মী আবদুর রহমান রুমী, সাংবাদিক শেখ মাসুদ ইকবাল, সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

সম্মননা অনুষ্ঠান শেষে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ, দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ২০১৫ সাল থেকে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে।

;

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্য রক্ষায় তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা রয়েছে: ড. মাহফুজ পারভেজ



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বক্তব্য রাখছেন ড. মাহফুজ পারভেজ

বক্তব্য রাখছেন ড. মাহফুজ পারভেজ

  • Font increase
  • Font Decrease

বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ও কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন'র নির্বাহী পরিচালক ড. মাহফুজ পারভেজ বলেছেন, 'বাংলার গৌরবদীপ্ত জনপদ কিশোরগঞ্জের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিকাশ ও রক্ষায় তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা রয়েছে।'

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকালে কিশোরগঞ্জ জেলা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম স্মরণ, দোয়া ও ইফতার মাহফিল এবং আনুষ্ঠানিকভাবে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি সম্মাননা বক্তব্য প্রদানকালে আরো বলেন, 'অবক্ষয়, অন্ধকার ও অজ্ঞানতার বিরুদ্ধে আলোকিত সমাজ গঠনে ইতিহাস-ঐতিহ্যের শিক্ষা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।'

বরিষ্ঠ চিকিৎসক, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আলহাজ্ব ডা. এ. এ. মাজহারুল হক এবং রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ কর্তৃক স্থানীয় ছয় কীর্তিমানকে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার।

মাজহারুন-নূর সম্মাননা অনুষ্ঠান

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান। এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক বাদল রহমান।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা দুলু, কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি আবদুর রহমান রুমী, সাংবাদিক শেখ মাসুদ ইকবাল, সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, মহিলা পরিষদ সম্পাদক আতিয়া রহনান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এতে জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও নানা শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন, মহিলা পরিষদ সভাপতি অ্যাডভোকেট মায়া ভৌমিক, সাহিত্য সম্পাদক বাবুল রেজা, ছড়াকার সামিউল হক মোল্লা, ঈসাখাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান বদরুল হুদা সোহেল, কিশোরগঞ্জ নিউজ প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননাপ্রাপ্তদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ পেয়েছেন কিশোরগঞ্জের আইনপেশার কৃতীজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হক।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ পেয়েছেন ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ, মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, প্রবীণ সাংবাদিক মু আ লতিফ ও আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন এবং প্রয়াত শাহ আজিজুল হকের পরিবারের পক্ষে ভাতিজা এডভোকেট শাহ আশরাফ উদ্দিন দুলাল ও মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবীর পক্ষে তার মেয়ে অধাপিকা গৌরি রাণী দেবী সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন।

সম্মননা অনুষ্ঠান শেষে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে স্মরণ সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ইফতারের পূর্বে দোয়া পরিচালনা করেন জেলা গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, অ্যাডভোকেট গাজি এনায়েতুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন সংস্কৃতিজন লুৎফুন্নেছা চিনু। অনুষ্ঠানে স্পন্সর হিসাবে যুক্ত ছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড।

প্রসঙ্গত, ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ২০১৫ সাল থেকে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

;

কলকাতায় বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠান



কনক জ্যোতি,  কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কলকাতায় বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠান

কলকাতায় বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠান

  • Font increase
  • Font Decrease

আন্তর্জাতিক কবিতা দিবসে ছায়ানট (কলকাতা) এবং লা কাসা দে লোস পলিগ্লোতাস যৌথভাবে আয়োজন করে একটি কবিতা সন্ধ্যার। অনুষ্ঠানটি হয় কলকাতায় অবস্থিত একটি স্প্যানিশ রেস্টুরেন্ট তাপাস্তে - তে। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ছায়ানট (কলকাতা)-এর সভাপতি সোমঋতা মল্লিক এবং পরিকল্পনা করেন  লা কাসা দে লোস পলিগ্লোতাস-এর প্রতিষ্ঠাতা শুভজিৎ রায়।

এই বিশেষ দিনে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করা হয় বাংলা এবং স্প্যানিশে। বিশ্ব কবিতা দিবসে কবিতার ভাষায় এক হয়ে যায় বাংলা এবং স্পেন। এক করলেন কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা এবং স্প্যানিশ দুই ভাষাতে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে এই আয়োজন।

বাংলায় কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করেন সৌভিক শাসমল, তিস্তা দে, দেবলীনা চৌধুরী এবং স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ ও পাঠ করেন শুভজিৎ রায়। অনুষ্ঠানটি দর্শকদের প্রশংসা লাভ করে।

বিশ্ব কবিতা দিবস উপলক্ষ্যে ছায়ানট (কলকাতা) এবং কৃষ্ণপুর নজরুল চর্চা কেন্দ্র যৌথভাবে আরও একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শরৎচন্দ্র বাসভবনে। প্রায় ৫০ জন কবি এবং বাচিক শিল্পী এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম সহ বিভিন্ন কবির কবিতা এই অনুষ্ঠানে শোনা যায়।

;

দারুণ সৌভাগ্য আমাদের



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...

আমি ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া ইতিহাসের
গলিটার দিকে তাকাই।
ওপার থেকে ছিটকে আসে বিগত কালের আলোক,
ইহুদিদের চর্বি দিয়ে সাবান বানিয়েছিল জার্মানরা।
বাথটাবে সেই সাবানের ফেনার মধ্যে ঠেসে ধরে
ওরা ঠাপাতো ইহুদি মেয়েদের।
পাকিস্তানিরা ঐভাবেই ঠাপাতো আমাদের।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
সিন্ধু থেকে আসতো আমাদের জেলা প্রশাসকেরা,
পেশোয়ার থেকে গভর্নরেরা।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডটিচার
প্রিন্সিপাল ভিসি'রা আসতো লাহোর করাচি মুলতান থেকে।
ফ্যালফেলে তাকিয়ে আমরা ভাবতাম,
আহা কবে জন্ম নেবে আমাদের মেসায়া!
নেপথ্যে ভেসে আসতো অদম্য কুচকাওয়াজের শব্দ।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
আমরা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি পরতাম গোড়ালি পর্যন্ত।
ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের গান বাজতো কাওয়ালির সুরে--
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের নাম ভুলে যেতাম
কিন্তু জিন্না'কে ভুলতাম না।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
ঢাকার মাঠে খেলা হতো পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের।
প্রত্যেকটি খেলায় একজন করে সুযোগ পেতো
বাঙালি টুয়েল্ফথৃ ম্যান যারা মূল খেলোয়াড়দের
বিশ্রাম দেবার জন্য প্রচণ্ড দাবদাহের রোদে
প্রাণপণ ফিল্ডিঙয়ের ওস্তাদি দেখাতো।

আমাদের কাজ হতো শুধু
পাকিস্তানিদের চার-ছয়ে উদ্দাম হাততালি দেওয়া,
হাততালি দিতে দিতে তালু ফাটিয়ে ফেলা।
তীব্র হাততালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি
আজ মার্চের সতেরো।
দারুণ সৌভাগ্য আমাদের তুমি জন্ম নিয়েছিলে!
১৭-০৩-২০২৩

;