ধারাবাহিক উপন্যাস 'রংধনু'-১০
[দশম কিস্তি]
নিজের জীবনের কথা, প্রেম ও বিচ্ছেদের কথা, ক্যাভিন বা ম্যাথু কথা ভাবতে ভাবতে ম্যারি নিজের শিকড়ের ইতিবৃত্তে চলে যান প্রায়ই। তাঁর দুই প্রেমিকের মতো তিনিও ভিনদেশ থেকে পূর্বপুরুষের সূত্রে এসেছেন মার্কিন মুলুকে। তাঁর পরিবারের আদি শিকড় প্রোথিত আটলান্টিকের আরেক তীরে, ফ্রান্সে। দেশটির মূল ভূখণ্ডে নয়, প্রান্তিক এলাকা নর্মান্ডি উপকূলে। জীবনের হিসাবপত্র মিলাতে গিয়ে ম্যারি টের পান, ফরাসি ভাষার আলাদা সিনট্যাক্স ও উচ্চারণশৈলীর মতোই স্বাতন্ত্রিক তাঁর জীবনের বিন্যাস।
ম্যারির পিতামহ বলতেন, ফ্রান্সের নর্মান্ডি ছোট্ট এলাকা হয়েও বিশ্ব ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য। নাৎসি জার্মানদের হাত থেকে ফ্রান্সকে মুক্ত করার জন্য মিত্র শক্তির অবতরণ হয়েছিল সেখানে এবং বীরোচিত প্রতিরোধ যুদ্ধের মাধ্যমে ঘুরিয়ে দিয়েছিল যুদ্ধের গতি। যুদ্ধে বীরত্বের জন্য পাওয়া মেডেল কোটের বুকে লাগিয়ে হাজার হাজার 'ওয়ার ভেটেরান'-এর সঙ্গে তিনি নর্মান্ডিতে আয়োজিত 'ডি-ডে' অনুষ্ঠানে যেতেন প্রতিবছর। যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিনই তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকতা পালন করেছেন। ম্যারি আর তাঁর সমবয়সী ভাইবোনদের রূপকথার মতো অতীতের গল্পগুলো শোনাতে ভালোবাসতেন তিনি:
"তোমরা জন্মসূত্রে আমেরিকান হলেও আমি জন্মেছি ন্যার্মান্ডিতে। আটলাণ্টিক বিধৌত ছোট শহর নরমান্ডি হচ্ছে আমার পৈত্রিক নিবাস। আমার পিতা সেখানেই একটি কফিশপ চালাতেন। উপকূলের সাধারণ মানুষ ও সওদাগরদের মতই আমিও ওয়ার্কিং ক্লাসের সন্তান।"
ম্যারি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতেন দাদার জীবনসংগ্রামের আখ্যান। দাদা সময় পেলেই তাঁর অতীতের গল্পগুলো উন্মোচিত করতেন:
"উপকূলীয় অঞ্চলের শ্রমজীবী পরিবারের ছেলে হওয়ায় আমাদের বংশে ছিল সাহস আর ঝুঁকি নেওয়ার শক্তি। একদিন জাহাজে করে সমুদ্রে ভেসে চলে এলাম আমেরিকায়। তখন বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। আমার দেশ বিজয়ী ও স্বাধীন। মহাযুদ্ধের শেষে আমিও আমার আরও স্বাধীনতার সন্ধানে পাড়ি দিলাম মহাসমুদ্র। আমেরিকা তখন নতুন স্বপ্নের দেশ। অবারিত সুযোগের হাতছানি সেখানে। আমি দেশান্তরী হলেও স্বদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করি নি। কিন্তু বিলক্ষণ জানি, তোমরা দিনে দিনে পূর্বপুরুষের দেশ, স্মৃতি, অস্তিত্ব ও আত্মপরিচিতি এক সময় বিস্মৃত হয়ে যাবে।"
এসব কথা বলার সময় বৃদ্ধ পিতামহের চোখ ছলছল করতো। তিনি কখনোই তাঁর অতীতকে ভুলে যেতে চাইতেন না। ম্যারি অনেক পরে দাদার ডায়েরি পড়ে বৃদ্ধের আকুতি টের পেয়েছিলেন। তাঁর লিখন মূলত আত্মজৈবনিক, স্মৃতিকথন, জীবন ও জগতের বয়ান। প্রথম জীবনের ঘটনা নিয়ে কিছু আখ্যানধর্মী লেখা লিখলেও পরে তিনি সরে আসেন স্মৃতিকথায়। একজন অভিবাসী মানুষের বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাওয়া পৃথিবী এবং পরিপার্শ্ব তাঁর লেখায় বার বার ছায়াপাত করছে। ব্যক্তির সঙ্গে নৈর্ব্যক্তিক সমাজ এবং বৃহত্তর জাতীয় পরিসরের গল্পে তিনি তাঁর নিজের পরিবারের প্রথম গর্ভপাতের প্রসঙ্গ যেমন এনেছেন, তেমনি মাতৃবিয়োগ, অ্যালঝাইমার্স বা ক্যানসারের কথা লিখেছেন। এক ফাঁকে মহাযুদ্ধে যোগ দেওয়ার কাহিনীও তিনি সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। স্মৃতিকে মুছে নিয়ে নয়, সঙ্গে নিয়ে যে জীবন তিনি যাপন করেছেন, অকপটে ডায়েরিতে বয়ান করেছেন সেইসব ইতিবৃত্ত।
ম্যারি তাঁর পিতামহের ডায়েরি যতই পড়েন, ততই অবাক হন। নিজের বংশধারার খোঁজ-খবরের পাশাপাশি একজন সংবেদনশীল মানুষের অন্তর্জগত উন্মোচিত হয় তাঁর কাছে। "লোকটি শুধু আমার পূর্বপুরুষই নন, একজন প্রেমিক ও বৈচিত্র্য পিয়াসী মানুষও ছিলেন", ম্যারি তাঁর পিতামহ সম্পর্কে এমনই ধারণা অনুভব করেন। ডায়েরিটি পড়লে যেকোনও পাঠকেরই এমনটি মনে হবে। যৌবনের ঊষালগ্নে পূর্ব ইউরোপীয় এক নারীর সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ও বহুমাত্রিক বর্ণালির ভালবাসাকে উপস্থাপন করেছে পিতামহ। তাঁর ডায়েরিকে মনে একটি 'কালেক্টিভ আত্মজীবনী'। আত্মজীবনী হলেও তিনি নিজেকে দেখেছেন প্রবাহমান সময়ের একটি অংশ হিসবে। পুরো একটি সময়কালেরই অখণ্ড ও ধারাবাহিক বিবরণ যেন তাঁর ডায়েরি, যার প্রতিটি অক্ষরে মরে যাওয়া অতীতের আত্মারা স্মৃতিমন্দিরের বেঁচে থাকে। এবং শুধু বেঁচেই থাকে না, আছড়ও কাটে জীবন্ত অভিঘাতে। স্মৃতির বলয় থেকে বলয়ে উত্তীর্ণ এমন অদ্ভুত সুন্দর গল্প ম্যারি আগে পড়েন নি।
ম্যারির পিতামহের মৃত্যুর পর কমিউনিটি থেকে একটি শোকসভার আয়োজন করা হয়েছিল। পরিবারের তরফে ম্যারি ও তাঁর কিছু আত্মীয়-পরিজন তাতে অংশ নেন। শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন কয়েকজন। শোকসভার শেষে তাঁর সম্পর্কে গৃহীত একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্তে জানানো যে, "সাহস এবং ধৈর্যের সঙ্গে শিকড়ের সন্ধান করেছেন তিনি। ব্যক্তিগত স্মৃতির সঙ্গে মিলন-বিরহের সম্পর্ককে চর্চা করেছেন জীবনভর। একজন ব্যক্তিমানুষের সঙ্গে বছরে পর বছর ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা আর চড়াই–উতরাইয়ের বিবরণ প্রকাশ করেছেন তিনি। তাঁর জীবনের ঘটনাগুলো ব্যক্তির, সমাজের, ইতিহাসের, সমাজবিজ্ঞানের ভাগীদার।"
পিতামহের ডায়েরি পড়তে পড়তে ম্যারির মনে এই প্রশ্ন জাগে যে, আমরা কি আসলেই আমাদের যাপিত বছরগুলোকে চেনার জন্য কোনো স্যুভেনির রেখে এসেছি? কিংবা কোনো চিহ্ন? কোনো দাগ? পেরিয়ে আসা যে পরিসরে আমরা আর থাকবো না সেখান থেকে আমরা কি কিছু বাঁচানোর প্রচেষ্টা করছি?
চট করে ম্যারির মনে বাগানের নিঃসঙ্গ পাইন গাছটি দোলা দেয়। তাঁর এবং তাঁকে কেন্দ্র করে আবর্তিত জীবনের কিছুটা স্মৃতি তো গাছটির সঙ্গে আছে। অবশ্যই পাইন গাছের সঙ্গে তাঁর স্মৃতির অনেকটাই মিশে আছে। কিন্তু একদিন যখন গাছটিও মরে যাবে বা ঝড়ে উপড়ে পড়বে, তখন? ম্যারি কিছু ভাবতে পারেন না। চারপাশটা তাঁর কাছে বড্ড ফাঁকা আর অচেনা মনে হয়। আস্ত একটি জীবনকে মনে হয় কর্পূরের মতো উবে যাওয়া রাসায়নিক বস্তু। মনে হয় স্বপ্নের মধ্যে পাশ ফিরলেন তিনি। ঘুমের মধ্যে যেন বুঝলেন, অঝোর বৃষ্টিতে সব ডুবে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ম্যারির মনে হলো, কে যেন কোথাও খুব কষ্ট পাচ্ছে ঠিক তারই মতো।
ক্যাভিনের মুখ ভেসে আসে ম্যারির চোখের পর্দায়। ক্যাভিন বলতো, "লেখালেখি হল রাজনৈতিক কাজ। সমাজে যে বৈষম্য আছে, তা আমাদের নজরে নিয়ে আসবে লেখালেখি। মানুষের দুঃখ-কষ্টের ভাষাচিত্র হয়ে প্রস্ফুটিত হতে হবে প্রতিটি লেখাকেই। সেজন্যই ভাষাকে ছুরির মতো ব্যবহার করতে হবে, যা কল্পনার পর্দা ছিঁড়ে ফেলবে।" লেখালেখির শক্তির স্বতন্ত্রতায় বিশ্বাস করতো ক্যাভিন। তাঁর লেখালেখি কখনও আপস করেনি এবং একেবারে সাধারণ ভাষায় লেখা হয়েছে - একেবারে স্বচ্ছ ভাষায়, যদিও বিষয়গুলো জটিল ও স্পর্শাতীত।" সবাই স্বীকার করছেন যে, ব্যক্তিগত ও ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর পেছনে ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে পড়ে থাকা প্রপঞ্চগুলোকে তুলে এনে ক্যাভিন যেভাবে আখ্যান ও ইতিবৃত্তের কাঠামো বদলে দিয়েছে, তা যুগান্তকারী। ক্যাভিনের সঙ্গে তাঁর পিতামহের অদ্ভুত মিল খুঁজে পান ম্যারি। সবাই যেন একই রকম দুখী মানুষ। বড়ই তাপিত ও পীড়িত একেকটি জীবন।
ম্যারির পিতামহ প্রায়ই আফসোস করতেন, 'ডি-ডে' অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অসম সাহসী বীর যোদ্ধাদের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। তিনি চাইতেন নর্মান্ডি উপকূলে তাঁদের স্মৃতির প্রদীপকে আরও প্রোজ্জ্বল করেছেন। সাহস এবং নিখুঁত তীক্ষ্ণতার মাধ্যমে তিনি ব্যক্তিগত স্মৃতির শিকড়, বিচ্ছিন্নতা এবং সংযমের কথা উন্মোচন করতেন রণাঙ্গনের পটভূমিতে। 'স্মৃতির শিকড়ের সাহসী ও সহজবোধ্য উন্মোচন'-এর স্বীকৃতি তিনি প্রত্যাশা করেন নি। বরং তিনি ও তাঁর আগে-পরের প্রজন্মগুলোর সঙ্গে ঘটা প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে থাকতে চেয়েছিলেন। ডায়েরি লেখার যে চিরাচরিত ঐতিহ্য, তাকে অতীতকালের বন্দিদশা থেকে বর্তমানের চলমানতায় প্রতিস্থাপিত করে ইতিহাসের পুনর্জন্ম দিতে ইচ্ছুক ছিলেন তিনি। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে ও পরের ফরাসি সমাজের চেহারা তুলে ধরে রাখতে চেয়েছিলেন নিজের গল্পের মধ্য দিয়ে। জীবন ও স্মৃতির এমন ঘনিষ্ঠ মেলবন্ধন রচনা এবং শৈল্পিক রূপান্তর ঘটনোর সৃজনশীল কৃতিত্ব অবিকশিত রেখেই মারা যান তিনি।
ম্যারির পিতামহের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান স্মৃতি ছিল 'ডি-ডে' ঘিরে আবর্তিত। তিনি মনে করতেন, নর্মান্ডি উপকূলে 'ডি-ডে' ল্যান্ডিং ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের 'টার্নিং পয়েন্ট', যখন ফরাসি, ব্রিটিশ, আমেরিকান, কানাডিয়ান সেনা সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার জার্মান নাৎসি বাহিনীর ওপর আক্রমণ করেছিলেন। 'ডি-ডে' ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির শুরু। মিলিটারি জার্গনে বা পরিভাষায় 'ডি-ডে' হলো এমন একটি দিন, যেদিন 'কমব্যাট অ্যাটাক' বা 'অপারেশন' শুরু করা হয়। সবচেয়ে বিখ্যাত 'ডি-ডে' হলো ১৯৪৪ সালের ৬ জুন- 'দ্য ডে অব নর্মান্ডি ল্যান্ডিং'- নাৎসি দখল থেকে মূল ইউরোপকে মুক্ত করার লক্ষ্যে মিত্রশক্তির সাঁড়াশি আক্রমণ। এটি ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ 'সিবর্ন' বা 'সমুদ্রবাহী আক্রমণ'। মিত্রবাহিনীর এক লাখ ৫৬ হাজার সদস্য ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে নর্মান্ডিতে পৌঁছেছিলেন। এর মধ্যে প্রায় ১২ হাজার হয় নিহত নয়তো আহত হয়েছিলেন প্রথম দিনেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য জার্মান বাহিনীকে প্রচুর আত্মদানের বিনিয়মে পরাজিত করে হটিয়ে দিতে পারার সাফল্য ছিল ঐতিহাসিক। এইসব ‘স্মৃতির শিকড়ের সাহসী উন্মোচন’ করে নর্মান্ডি উপকূল থেকে মার্কিন মুলুকে অভিবাসী লোকটি নিজের আত্মা ও বিবেকের কাছে সৎ থাকতে প্রয়াসী ছিলেন সারা জীবন।
এমন একজন লড়াকু মানুষের অধঃস্থ উত্তর-প্রজন্ম হয়ে হতাশা ও জীবনবিমুখ হতে পারেন না ম্যারি। তিনি বিশ্বাস করেন, আমি কোন পরিবেশ থেকে এসেছি বা কেমন পরিবেশে-পরিস্থিতিতে আছি, তা একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। স্বপ্ন আর লক্ষ্য থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ। আর থাকতে হবে স্বপ্ন-সফল করার পরিকল্পনা। ম্যারি একটি কথা সবসময় মনে রাখেন, জীবন হলো খেলার মাঠের মতো। ময়দানে একজন খেলোয়াড়কে শুধুমাত্র জয় দিয়ে বিচার করা হয়। কিন্তু জীবনের মাঠে জয়ই শেষ কথা নয়। পড়ে গিয়ে কী করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছি, সেটাই মূল কথা।
তাঁর মনে হয় পড়ে যাওয়ার বিষয়টি জীবনে অনেক বেশি ঘটছে। প্রেম-বিরহের যাতনার সঙ্গে মহামারি করোনার ধকল সামলাতে হচ্ছে। এজন্যই সম্ভবত বাড়ি ফিরে অসম্ভব ক্লান্ত লাগছে তাঁর। ভাবছেন আগে তো এত ক্লান্ত লাগত না। এর কারণ হয়ত কিছুই নয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক অভ্যেসই বদলে গিয়েছে। আগের মতো হুল্লোড়ে মেতে যেতেও ইচ্ছে করে না। ম্যারি কয়দিনের ছুটি নিলেন।
খবর পেয়ে পল্লবী তাঁকে দেখতে এসেছে। সে কিছু টোটকা বাতলে দিল। প্রাচ্যদেশীয় সমাজে মানুষ এসব চর্চা করে শরীর ও মন চাঙ্গা রাখে। বয়সের চেয়ে বেশি গাম্ভীর্য নিয়ে পল্লবী বলে:
"তোমাকে রোজ স্নান করতেই হবে। কোথাও বেরোনার আগে এবং ঘুরে এসেও। তোমার বড় চুল। তাই রাতের দিকে, ভাল করে গা ধুয়ে নিলে আরাম পাবে। স্নানের জলে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল ফেলে দিলে তরতাজা লাগবে।"
পল্লবীর কথাগুলো শুনে মনে মনে হাসে ম্যারি। দরদী কেউ এসে দুদণ্ড ভালোমন্দের খোঁজ নিলে বেশ ভালোই লাগে। আজকাল এমন করে আপন হয়ে কেউ পাশে আসে না। সবাই বড় ব্যস্ত। ছেলে টমাসও নিজের পড়াশোনার কাজে মনোযোগী। ম্যারি নিজের সমস্যার কথা বলে ছেলেকে বিব্রত প বিরক্ত করতে চান না। তবু কেন যেন না চাইলেও পল্লবী এসে হাজির হয়। ঘরের টুকটাক কাজে হাত লাগায়। পরামর্শ দেয়। কখনো টমাসের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলাপ করে। পল্লবীর আন্তরিক কথাবার্তা ও আচরণ বেশ লাগে ম্যারির।
একদিন পল্লবী অদ্ভুত এক কাণ্ড করলো। একটা গামলায় হালকা গরম পানিতে একটু ইপসম সল্ট দিয়ে ১৫ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখতে বাধ্য করলো সে। ওই সময়টা চোখ বন্ধ করে রিল্যাক্স মুডে রাখলো ম্যারিকে। তারপর হালকা মিউজ়িক চালিয়ে দিয়ে বললো:
"মিনিট পনেরো পরে তোমার শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগবে। পায়ে জোর পাবে। হাঁটার কষ্ট হবে না।"
"আমার তো হাঁটার কষ্ট হয় না। দিব্যি অনেকক্ষণ চলতে পারি।"
"তা পারো বটে। আমি চাই তোমার আরও ভালো হাঁটার সামর্থ্য হোক।"
"এটা কেন চাইছো?"
"আমি তোমাকে নিয়ে দূরের কোনও এক দেশে ঘুরতে যাবো। তোমার সাথে ঘুরে ঘুরে রংধনু দেখবো।"
পল্লবীর শেষ কথাটা বুকের মধ্যে ঝঙ্কারের মতো অনুভব করেন ম্যারি। তাঁর সারা শরীরে তিনি দুলনি বোধ করেন। অতীত, স্মৃতি, প্রেম, বিরহগুলো রংধনুর নানান রঙের ঘোরে প্রবলভাবে আচ্ছন্ন করে তাঁকে।
[পরবর্তী কিস্তি আগামী শুক্রবার]
আরও পড়ুন: ধারাবাহিক উপন্যাস 'রংধনু'-৯