এ এফ মোরিৎজের কবিতা : মহামারি বিক্ষত সময়ের ভাবনা

  • ভাব-তর্জমা : মঈনুস সুলতান
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

কবি পরিচিতি
কানাডার টরেন্টো নগরীর পোয়েট ল্যারিয়েট হিসাবে যশস্বী কবি আলবার্ট ফ্র্যাংক মোরিৎজ্-এর (১৯৪৭) জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইয়ো অঙ্গরাজ্যে। ১৯৭৫ সাল থেকে তিনি স্থায়ীভাবে বাস করছেন কানাডায়। পেশাগত জীবনে কবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। এছাড়া সম্পাদনা ও প্রকাশনা বিষয়ক কাজেও তিনি সম্পৃক্ত আছেন। নিচে তাঁর সম্প্রতি রচিত মহামারি সংক্রান্ত একটি কবিতার ভাবানুবাদ উপস্থাপিত হচ্ছে। কবিতা ও বায়োর সূত্র হচ্ছে ইন্টারন্যাট।


যাত্রার শুরুতে আমরা জানতাম
সঙ্গী-সাথী.. নিকটজন—অনেকেরই মৃত্যু হবে পথে
তারপরও এ যাত্রা ছিল নিবিড় আনন্দে ভরপুর,
হৃদয়ের নিভৃতে ক্রমাগত বাজছিল ঘরে ফেরার সপ্তসুর;
অতঃপর আমরা যখন নিজস্ব ঘর-বাড়িতে এসে পৌঁছেছিলাম
তখনো সচেতন ছিলাম—
মৃত্যু হবে অনেকের পৈতৃক ভিটেমাটিতে
যেখানে কোনো একদিন আমরা নিয়েছিলাম নিবিড় বিশ্রাম,
শরীর এলিয়ে দিয়ে শীতলপাটিতে;
তাতেও পরিবারিক বাড়িটির প্রতি আমাদের ভালোবাসা হয়নি ক্ষুণ্ণ,
যদি না এসে পৌঁছতে পারতাম—সব কিছু মনে হতো অসম্পূর্ণ।

বিজ্ঞাপন

আমরা যখন পথে নামি
মাইল-কে মাইল পথের প্রতিটি মোড়ে,
আলোর রঙ ও রেখা ছিল ভিন্ন
পৌঁছব গন্তব্যে—সে আবেগের তোড়ে,
গিয়েছি এগিয়ে—মন কখনো হয়নি খিন্ন।
জানালাগুলোর ওপাশে আছে কী রহস্য
কখনো ঝিলিক পেড়েছে আবছায়া দুটি মায়াভরা চোখ
বিরাণ বাগিচায় অংকুরগুলোও হয়ে ছিল উৎসুক।

ফ্যাক্টরিগুলোতে কাজের অজ্ঞাত নিয়ম কানুন
বনানীর গভীরে পাখির কাকলি,
শ্রমজীবীরা রুটিতে ছিটায় নুন
স্মৃতিতটে উঁকি দেয় হারানো দিনের চন্দ্রাবলী।

বিজ্ঞাপন

আমাদের শয়নকক্ষে যখন ফোটে ভোর
দেরিতে ছেড়েছি বিছানা,
রেডিওতে ধ্রুপদি সংগীতের সুর—
খাবারের অপরিচ্ছন্ন টুকরা টাকরায় এলোমেলো রান্নাঘর,
বিয়ারের খালি বোতল—পেয়ালার তলানিতে জমেছে গাঢ় শর।

স্মৃতিতে কিছু একটা পুড়েছে সারাক্ষণ
পুড়ে পুড়ে কেটেছে সময় ঢের,
পুরানো ক্ষত হয়ে ওঠেছে দগদগে ফের
যখন আমরা রোগশয্যার পাশে আতঙ্কে কাঁপি,
আমাদের ভালোবাসা ও মৃত্যুভয়—
বুঝতে পারিনি—আমরা পূণ্যবান না পাপী।

সড়কে ঘুরছি—পিঠের বোঝা নামানোর নেই কোনো জায়গা
নেই কোনো কক্ষ—যেখানে নেয়া যেতে পারে দুদণ্ড বিশ্রাম,
পথ চলি আমরা—চলতে থাকি অবিরাম,
শ্বাস প্রশ্বাসের তুমুল কষ্ট যখন আমরা করি পর্যবেক্ষণ,
আমাদের যেতে হয় কাজে
বিপর্যস্ত হয়—তীব্র তুমুল আমাদের দেহমন।

যখন আমরা শুনতে পাই—
আমাদের অনুপস্থিতিতে মৃত্যু হয়েছে তাদের,
বিষয়টা ভিন্ন কিছু? না, মৃত্যু তো আদতে স্বাভাবিক,
তবে আমরা অবলোকন করেছি কিছু একটা
সবসময়ই জানতাম—অন্ধকারের অবগুণ্ঠিত প্রতীক।

জীবনের শেষ কথা—ব্যর্থতা কিংবা সাফল্য নয়
জমা হবে সব কিছু স্মৃতিপটে
পরিশেষে শুশ্রূষা যেন উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।


আরো পড়ুুন রিচার্ড হেন্ডরিকের কবিতা : লকডাউন