বেগম রোকেয়ার দুটি চিঠি

  • অনুবাদ: আলমগীর মোহাম্মদ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলঙ্করণ: কাব্য কারিম

অলঙ্করণ: কাব্য কারিম

বেগম রোকেয়ার পত্রগুলো পড়তে গিয়ে মোট ২২টি বাংলায় লিখিত ও ২০টি ইংরেজিতে লিখিত পত্রের সন্ধান পাওয়া যায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত রোকেয়া রচনাবলিতে। বেশিরভাগ চিঠিতে রোকেয়া শিক্ষাসংক্রান্ত তাঁর একান্ত ভাবনাসমূহ, পত্রিকার সম্পাদক ও জমিদার সম্প্রদায়কে তাঁর ব্রত পালনে সহায়তার হাত বাড়ানোর কথা লিখেছেন। মাঝেমধ্যে তাঁর কণ্ঠে রাগ ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল। নারী-শিক্ষার প্রসারে কাজ করতে গিয়ে প্রতিটি স্তরে স্তরে সমাজকর্তৃক কিভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিলেন তারও প্রকাশ আছে রোকেয়া পত্রাবলিতে। সবচেয়ে বেশি চিঠি লিখেছেন মোঃ ইয়াসিনকে যিনি একসময় রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেছিলেন।

বেগম রোকেয়ার লেখা ইংরেজি পত্রাবলি থেকে নিচে দুটি পত্রের অনুবাদ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো—

বিজ্ঞাপন

১৯১১ সালের ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে মুসলমান পত্রিকার সম্পাদক মুজিবর রহমানকে এই পত্রটি লেখেন বেগম রোকেয়া। পত্রে তাঁর মরহুম গুণধর স্বামী সাখাওয়াত হোসেনের রেখে যাওয়া টাকায় নারী-শিক্ষা প্রসারে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইচ্ছে পোষণ করেন রোকেয়া। সম্পাদকের মাধ্যমে স্বচ্ছল মুসলমানদেরকে আর্থিক সহযোগিতা করার আহবানও জানান তিনি।

পত্র ১
ফেব্রুয়ারী ১০, ১৯১১
‘প্রস্তাবিত বালিকা বিদ্যালয়’

বিজ্ঞাপন

জনাব সম্পাদক,
মুসলমান।

আপনার পত্রিকার মাধ্যমে কলকাতার মুসলমান সম্প্রদায়ের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কলকাতায় মেয়েদের জন্য কড়া পর্দাপ্রথা মেনে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি যার প্রয়োজনীয়তা সচেতন নাগরিক মাত্রই উপলব্ধি করতে পারেন।

আমার প্রাণধিক প্রিয় স্বামী মরহুম মৌলভী সাখাওয়াত হোসেন (বিএ), যিনি প্রাদেশিক নির্বাহী চাকুরে ছিলেন, দশ হাজার টাকা রেখে গেছেন নারী শিক্ষার প্রসারে খরচ করার জন্য। বাৎসরিক আয় (আনুমানিক ছয় হাজার টাকা) আমার হাতে আছে। সুতরাং আমি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে এবং একই সাথে বিদ্যালয় পরিচালনায় আমার অর্জিত বিদ্যা কাজে লাগাতে নিজের সময় ও শ্রম উৎসর্গ করতে সদা প্রস্তুত আছি।

কিন্তু আমার হাতে থাকা অর্থ দিয়ে যেহেতু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার যাবতীয় কাজকর্ম সম্পাদন করা সম্ভব নয় তাই আমি সমাজের স্বচ্ছল ও হৃদয়বান ব্যক্তিবর্গের নিকট সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করছি আমাদের এই মহতী উদ্যোগে।

মুসলমান সম্প্রদায়ের সদয় মানুষজন যারা সহযোগিতার হাত বাড়াতে আগ্রহী তাঁদের প্রতি বিনীত নিবেদন আপনারা আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করবেন। মুসলমান বোনদের মধ্যে যারা আমার উদ্যোগে শামিল হতে চান তাঁদেরকে আমার বাসভবনে এসে এ ব্যাপারে আলাপ করার আমন্ত্রণ জানাই, অথবা তাঁদের ঠিকানা পেলে আমি সাগ্রহে তাঁদের বাসভূমে গিয়ে সাক্ষাত করতে পারলে প্রীত হব।

খাতুন।

পত্র ২
মোঃ ইয়াসিনকে লেখা
সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল
১৩, ওয়ালীউল্লাহ লেইন
কলকাতা ১৮ই অক্টোবর, ১৯১২

জনাব,
আপনার বারো তারিখের পত্রের জন্য অশেষ ধন্যবাদ। গতকাল (দশ রুপি) অর্থ আমার কাছে পৌঁছেছে। হিসাব বইতে এই অর্থ কার নামে লিখব দয়া করে জানাবেন।

আপনার মেয়ের দায়িত্ব নিতে পারলে আমি খুশি হব। আমরা একটা প্রস্পেক্টাস প্রস্তুত করেছি যা শীঘ্রই প্রকাশিত হবে। বিলি করার জন্য প্রস্তুত হলে আপনার কাছে এক কপি পাঠিয়ে দিব।

আমাদের আবাসিক স্থাপনার নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। অতএব আপনাকে আরো মাস দুয়েক অপেক্ষা করতে হতে পারে। বর্তমানে শুধু একটা মেয়ে থাকে আমার এখানে; ওর বয়স আট বছর।

আপনার পত্র পেলে দশ রুপির একটা অফিসিয়াল রশিদ পাঠিয়ে দিব। আপনার আন্তরিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন। আমি আশা করি অসহায় ও দুস্থ নারী যারা চিড়িয়াখানার প্রাণীদের মতো বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন তাঁদের কল্যাণে আপনার মতো আরো কিছু সহৃদয় বন্ধুজন এগিয়ে আসবেন।

আশা করি কুশলেই আছেন। সালাম জানবেন।

আপনার একান্ত,
আর . এস. হোসেন।