কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১৫)
মালুমঘাট থেকে পলায়ন
[পূর্ব প্রকাশের পর] ২৬শে এপ্রিল, সোমবার
রাষ্ট্রদূত মি. হামেল ও তাঁর স্ত্রী এবং আরো কজন দূতাবাসকর্মী বিমানবন্দরে আসেন আমাদেরকে বিদায় জানাতে। “আপনাদের ব্যাংকক যাত্রা শুভ হোক।” তাঁরা বলেন।
আমাদের আনন্দ ও বিস্ময়কে কল্পনা করতে চেষ্টা করুন, যখন আমরা বিশাল ব্যাংকক বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ জনতার ভিড়ের ভেতর থেকে ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ড অ্যালাইয়েন্স মিশনারি অতিথিনিবাসের ম্যানেজার, রেভারেন্ড বিল কার্লসনকে বেরিয়ে আসতে দেখি! তিনি একটি ট্রাক ও দুটো ভক্সওয়াগন বাস নিয়ে এসেছিলেন আমাদেরকে গেস্ট হাউসে নিয়ে যাবার জন্য।
চমৎকার অতিথিনিবাসটিতে বনি কার্লসন আমাদেরকে নম্রভাবে অভ্যর্থনা করেন এবং আমাদের যার যার ঘরে পৌঁছে দেন। আমরা তখন আর শরণার্থী ছিলাম না, আমরা তখন মার্কিন পর্যটক।
সে-রাতে পরে বনি আমাদেরকে একপাশে ডেকে নিয়ে বলেন, “আমি আরো তিনটা দলকে তাদের দ্বিতীয় স্বদেশ থেকে উদ্ধার করে এনেছি: ভিয়েতনাম, লাউস ও কাম্পুচিয়া থেকে। আমি জানি, তোমরা যতটা না অনুধাবন করতে পারছো, তার চেয়ে অনেক বেশি চাপের মধ্যে রয়েছো। আমি তাই বলব, ব্যাংককের যা কিছু নৈসর্গিক ও সাংস্কৃতিক ঐশ্বর্য রয়েছে সেগুলোর স্বাদ নাও বরং এই সুযোগে।
আমাদের খুব পছন্দ হয় তাঁর পরামর্শ, এবং আমরা সেই অনুযায়ী শহরের দৃশ্যাবলি দেখতে বেরোই ও নানারকম আনন্দ করি। অবশ্য সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল কেনাকাটা করা, বিশেষ করে আমার ও লিনের জন্য। আমাদের একটা ভালো অজুহাতও ছিল: আমরা আসার সময় যেসব জিনিসপত্র আমাদের সেই বিখ্যাত ব্যাগে ভরতে পারিনি, সেগুলোর অভাব পূরণ করা।
কোনো এক কেনাকাটা অভিযান থেকে ফেরার পর আমি একটা আনন্দের খবর পাই যে, আমার বাড়ি থেকে ফোন এসেছিল, এবং তারা আবার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ফোন করবে। তাদেরকে এই নিশ্চয়তা দিতে পারাটা, যে আমরা সবাই নিরাপদে আছি, এর অনুভূতিটাই চমৎকার, কেননা গত কয়েক সপ্তাহে যোগাযোগ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।
কার্লসনেরা আমাদের স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করার জন্য নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়েছিলেন। তাঁরা আমাদের জন্য অসাধারণ সব খাবারের বন্দোবস্ত করেছিলেন এবং সবসময় গাড়ি ও তথ্যাদি দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। একুশটি বাচ্চার চঞ্চলতা তাঁরা সহ্য করেছিলেন, সঙ্গে সম্ভবত সমান অস্থির তেরোজন প্রাপ্তবয়স্কেরও। সত্যি বলতে কি, যেহেতু স্বীকারোক্তি প্রদান অত্মার সুস্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর, আমি স্বীকার করছি যে, আমাদের অতিথিনিবাসে এক সপ্তাহ থাকাকালীন সময়ে একমাত্র যে-জানালাটি ভাঙনের শিকার হয়েছিল, সেটি ভেঙেছিলাম আসলে আমি। আমি বিশুদ্ধ বাতাস ঘরে ঢোকাতে গিয়ে বোধহয় একটু জোরেই তাতে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছিলাম, আর অমনি ফটাস!
আমাদের নিজস্ব মিশন এসোসিয়েশন অভ ব্যাপ্টিস্টস থেকে আসা খবর অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য ব্যাংককে। মিশনের নেতা ও কর্মীরা ছিলেন বিশেষ উৎসাহী। চেরি হিল, নিউ জার্সির সদরদপ্তর থেকে আমাদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে এবং আমাদের জন্য অব্যাহত প্রার্থনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাঠানো অনেক চিঠিপত্র পেয়েছিলাম আমরা। আর বাস্তব চিন্তায়, তাঁরা আমাদের জন্য ক্রেডিট কার্ড এবং অগ্রিম অর্থ উত্তোলনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। পরিবার ও বন্ধুদের কাছে আমাদের সংবাদ ও তথ্যাদি পৌঁছানোর ব্যবস্থাও করেছিলেন।
একদিন অতিথিনিবাসে ফিরে আসার পর বনি কার্লসন জানালেন, “আপনাদের আরো সদস্য আসছেন আজ।”
এই কথা বলা শেষ করতে না করতেই গুর্গানসদের বহন করে একটা ট্যাক্সি এসে ঢোকে। নিজেদের অভিজ্ঞতাগুলো ভাগ করে নিতে উদগ্রীব এবং মার্চের সেই সন্ধ্যায় তাঁদের শেষ দেখার পর কী কী ঘটেছিল জানতে আকুল আমরা সবাই একসঙ্গে কথা বলে উঠি।
জাহাজ তাদেরকে কোলকাতা নিয়ে গিয়েছিল, যেখানে রিপোর্টাররা অবতরণকারী যাত্রীদের পাকড়াও করে তাদের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য। কয়েকজন বিদেশি বাঙালিদেরকে সমর্থন করে, কিন্তু আমাদের মিশনারিরা বলেন, “আমরা কিছু বলতে অস্বীকার করছি, যারা বাংলাদেশে রয়ে গেছেন তাঁদের নিরাপত্তার কথা ভেবে।”
গুর্গানস ব্যাখ্যা করে বলেন, জাহাজের যাত্রীদেরকে তাঁদের যার যার দূতাবাস আতিথেয়তা দেয়, যতদিন না তাঁরা কোলকাতা থেকে অন্যত্র যাত্রা করেন। গুর্গানসরা দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করাচির উদ্দেশে রওনা হন এবং সেখান থেকে উত্তরে যান তাঁদের কন্যার সঙ্গে মিলিত হবার জন্য।
ভিক, ডন ও রিড তখনও পূর্ব পাকিস্তানে রয়ে গিয়েছিলেন। অনেক পরেই কেবল আমরা জানতে পারি, সেই দিনগুলোতে সেখানে থাকার অর্থ আসলে কী ছিল।
তাঁর ব্যক্তিগত ডায়রিতে ডা. ডন কেচাম হৃদয় খুলে বর্ণনা করেন সেইদিনগুলোর কিছু ঘটনা। আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ, সেসবের একটি ঘটনা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য।
“২১শে এপ্রিল, সকাল সাড়ে পাঁচটা”
“সাতসকালেই আমি তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে গিয়ে বাংলাদেশি কর্মচারীদের আমাদের দ্রুত দেশত্যাগের কথা জানাই। এটা তাদের একেবারে কাঁপিয়ে দেয়, এবং তাদেরকে বারবার এই কথা বলে আশ্বস্ত করতে হয় যে, ভিক ও আমি কোথাও যাচ্ছি না। বাড়ি ফিরে এসে শেষ মুহূর্তের কিছু কাজ সারি, তিনটা গাড়ি ও ট্রেলারে মালপত্র ভরি এবং রওনা হয়ে যাই।”
“জে ওয়াল্শ (যে খুব চেয়েছিল রয়ে যেতে কিন্তু দলের সঙ্গে তাকে যেতেই হচ্ছিল ভ্রমণের দাপ্তরিক দায়িত্বাদি পালনের জন্য।) একটা ল্যান্ডরোভার চালাচ্ছিলেন, যেমনটা করেছিলাম আমি ও জো ডিকুক। আমরা একজন দেশি ড্রাইভারকেও সঙ্গে নিয়েছিলাম আমাদের নিজেদের জন্য একটি গাড়িকে ফিরিয়ে আনার কাজে। ঈশ্বর আমাদেরকে একটি মেঘাচ্ছন্ন, বৃষ্টিভেজা দিন উপহার দিয়েছিলেন। যাত্রীবোঝাই গাড়ির ভেতরের গরম কমিয়ে কিছুটা ঠান্ডা করার পাশাপাশি তা বিমান থেকে গুলিবর্ষণের সম্ভাবনাও কমিয়ে দিয়েছিল।”
“স্বাভাবিক অবস্থায় বার্মার সীমান্ত বন্ধই থাকে, তবে বার্মা সরকার পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে দলে দলে শরণার্থী যাওয়াতে চোখ বন্ধ করে রেখেছিল কিছুটা। যুক্তরাষ্ট্র সরকারও তাদেরকে আমাদের আগমনের কথা জানিয়ে রেখেছিল, ফলে সীমান্তে তারও প্রস্তুতি নিতে হচ্ছিল তাদের। বাইবেলের শ্লোক ১০৫ এর কথা না ভেবে পারছিলাম না আমি:
‘যখন সেখানে খুব কম সংখ্যক, হ্যাঁ খুব কম সংখ্যক মানুষ ছিল দলে, এবং তার মধ্যে ছিল অচেনা লোকজনও।
যখন তারা এক দেশ থেকে আরেক দেশে যায়, যখন এক জনগোষ্ঠী থেকে আরেক রাজার দেশে;
তিনি তাদের ক্ষতি করতে দেন না কাউকে, হ্যাঁ তিনি রাজাদেরও ভর্ৎসনা করেন এজন্য;
এই বলে, যে, আমার আপন মানুষকে তুমি স্পর্শ কোরো না, ক্ষতি কোরো না আমার নবির।”
ধন্যবাদ প্রভু।
“জে নৌকার ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। জোয়ার ছিল না, তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত নৌকোয় মাল ভর্তি করা হয় এবং যাত্রীরা তাতে উঠে পড়েন। সবাই ওঠার পর আমি সেখানে গিয়ে পৌঁছাই, যেহেতু আমি টাকা পয়সা ভাঙানোর কাজ করছিলাম বাজারে। ফলত আমি আমার পরিবারের শেষ চুম্বনের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হই। কিট, ঈশ্বর মঙ্গল করুন তাঁর, ছিল খুবই সাহসী। সে কখনোই দমে যায়নি। ডেভিড ও মার্টি বাবাকে ছেড়ে যাবার কষ্ট, আর তিন মাইল চওড়া নদী নৌকায় পাড়ি দেবার উত্তেজনার দোলাচলের মধ্যে দুলছিল। আমার বেকি কেঁদে ফেলেছিল।”
“নুহের নৌকো ধীরে স্রোতে ভেসে গিয়েছিল এবং ভারী বুক নিয়ে আমি তীরে দাঁড়িয়ে ছিলাম একা।”
“আমরা তিনটা গাড়ি নিয়েছিলাম, কিন্তু এখন কেবল দুজন ড্রাইভার থাকাতে আমি আমার গাড়িখানি এক দেশি বন্ধুর কাছে রেখে আসি। ফেরার পথে কীসব দৃশ্যই না চোখে পড়েছিল আমাদের! রাস্তার দুপাশে স্রোতের মতো হেঁটে যাচ্ছিল গরিব হিন্দু শরণার্থীর দল। বাবা বহন করছেন গৃহস্থ সামগ্রী, অন্তঃসত্ত্বা কোনো নারী একটি বাচ্চাকে কোলে ও আরেকটি অনিচ্ছুক শিশুকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল। সবার গতিমুখ দক্ষিণ দিকে, বহুমাইল দূরের কোনো অজানা গন্তব্যের পানে।”
“চমৎকার মেঘেদের অনাগোনা ছিল আকাশে! দিনটা কী করে এমন সুন্দর আর হৃদয় কিভাবে এতখানি ভারী হতে পারে? আমি ভাবি। গ্রামের দিকটা কী শান্তিপূর্ণ... কে বিশ্বাস করবে যে, সেখানে একটা যুদ্ধ চলছিল? একদল সৈন্য, গম্ভীর, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং সামনে কী অপেক্ষমাণ, তা ভেবে খানিকটা উদ্বিগ্ন।”
“সন্ধ্যা ৬টা। হাসপাতালে ফেরত আসা। গাড়িবারান্দায় দেশি কর্মীদের ভিড়, আমাকে ফিরে আসতে দেখে তাদের মুখ উজ্জ্বল। সূর্যাস্তের দিকে শেষ একশত গজ গাড়ি চালানো আমার, আর ঈশ্বর আমার জন্য বিশেষ করে সুন্দর এক সূর্যাস্ত রচনা করেছিলেন। আমি নিজেকে এতক্ষণ চেপে রেখেছিলাম, কিন্তু সেই সূর্যাস্ত আমার সব বাঁধ ভেঙে দিয়েছিল। আমি গাড়ি থামিয়ে কিছুক্ষণ কেঁদে নিই।”
“ডা. কেচামের অবশ্য তাঁর হৃদয়ের সবচেয়ে নিকটবর্তী বিষয় নিয়েও মাথা ঘামানোর মতো সময় ছিল না। বিপদগ্রস্ত দেশি কর্মীদের দায়িত্ব এবং কেবল তাঁর ও ভিক ওল্সেনের ওপর পুরো হাসপাতালের ভার, তাঁকে সারাক্ষণ দখল করে রাখত।”
“এই দুজনকে আরো পুরোপুরিভাবে ঈশ্বরের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার জন্যই বোধ হয় ভিক একটি ফালতু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পড়েন, যার কারণে তাঁর ওপর একটা অস্ত্রোপচার পর্যন্ত করতে হয়।”
“একেবারে পুরোপুরি গলে যাওয়া একটা কনুই,” ডন কেচাম বর্ণনা করেন।
পরে, ভিক আমাদের সবাইকে লেখেন, “আমি খুবই আনন্দিত যে, তোমরা কেচামের থেকে যাওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিলে।”
“পুলের তলা দিয়ে অনেক পানিই বয়ে যাবে, আমরা আমাদের জোরপূর্বক দেশত্যাগের সময় সংঘটিত এই দুর্ঘটনা, এবং মালুমঘাট ও চট্টগামের আরো অনেক সংকট সম্পর্কে জানার আগে।”
“জীবিত কৃতজ্ঞ বাঙালিরা এখনো নিঃস্বার্থ আমেরিকান মিশনারিদের বীরত্বের কথা বলে। অনেক হিন্দুকে আশ্রয় দিয়ে এবং আরো অনেকের জন্য মিলিটারিদের সঙ্গে দেনদরবার করে, মালুমঘাটে ডন কেচাম ও ভিক ওল্সেন, এবং চিটাগাংয়ে রিড মিনিখ ঈশ্বরের কৃপায় সেই দিনগুলোতে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচানোর নায়ক হয়েছিলেন।”
কেবল তাদের প্রাণই বাঁচেনি, অগুণিত ক্ষেত্রে তাদের বিষয়সম্পত্তিও রক্ষা পেয়েছিল বৈকি। আবারও আমি ডা. কেচামের ডায়রি থেকে পড়ছি:
৮ই মে
দিনটা বেশ শান্তিপূর্ণভাবেই শুরু হয়েছিল, কিন্তু শেষের দিকে একেবারে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল। বিকেল চারটার দিকে খবর আসে মিলিটারিরা ডুলাহাজরার দিকে বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছে। আমি আমার মোটরসাইকেলে লাফিয়ে উঠে দ্রুতই সেই গ্রামের ভেতরে গেলাম সেখানে কী হচ্ছে দেখার জন্য। মিলিটারি তখন চলে গেছে, তবে যাওয়ার আগে গ্রামের সবচেয়ে প্রভাবশালী এক হিন্দু পরিবারের বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে যায়। বাঁশের ঘর দুতিনটা পুড়ে একেবারে ছাই হয়ে যায়, তবে কাদা ও সিমেন্ট দিয়ে বানানো মূল বসতভিটাটি তখনও টিকে ছিল। সেটাও জ্বলছিল, তবে তখনও কিছুটা অক্ষত ছিল। আমি সেখানে গিয়ে দেখি অন্তত জনাপঞ্চাশেক লোক বাক্সপ্যাটরার তালা ভেঙে লুটতরাজ চালাচ্ছে।
“কী করা যায়? নীতিগতভাবে আমার কিছু করা উচিত, আমি তাই কিছু লোককে দৈহিকভাবে বাধা দিয়ে, বাকিদেরও তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হই এবং দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে একটা গাড়ি ও কিছু লোকজন নিয়ে আসি যতটা পারি তাদের জিনিসপত্র উদ্ধার করার জন্য। প্রতিবেশি পড়ে গেলে তাকে লাথি মারা বিষয়ে, একটা বাণীও প্রচার করি আমি। তারপর আমি তাদেরকে বলি যে, সব জিনিসপত্র হাসপাতালে তালাবদ্ধ করে রাখা হবে যতদিন না তার বৈধ মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, এই বলে আমি স্থানত্যাগ করি। হাসপাতালের কর্মচারীরা, ঈশ্বরের অশীর্বাদে, অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল সেদিন, যেহেতু আমি তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলাম।”
এটা অনেক ঘটনার একটি মাত্র যেখানে দেশিরা ডন ও ভিকের ওপর অবিশ্বাস্য আস্থা রেখেছেন। তাঁরা তাঁদের মূল্যবান জিনিসপত্র এনে হাসপাতালে রেখেছেন, একটা রশিদ পর্যন্ত চাননি তার জন্য। এঁরা আমেরিকানদের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের বেলায় একেবারে শিশুর মতো ছিল।
অন্য দিকে, ‘থাইল্যান্ডের আমেরিকান পর্যটকেরা’, তাদের সব চিন্তা ছিল পূর্ব পাকিস্তানকে নিয়ে, যে-তিনজন সেখানে পড়ে রয়েছেন তাঁদেরকে নিয়ে, আর কত তাড়াতাড়ি আবার সেখানে ফিরতে পারা যাবে, তা নিয়ে। [চলবে]
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১৪)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১৩)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১২)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১১)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১০)