জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কি মাঠও থাকবে না?

  • জবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গত জুনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন

গত জুনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন

সম্পূর্ণ অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরই কলেজ আমলের হলগুলো বেদখল হয়ে যায়। এখন একমাত্র খেলার মাঠও চলে যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের হাতে। শত পাওয়া না পাওয়ার ভিড়ে যেখানে একটি মাত্র মাঠ ছিল সেটাও এখন থাকছে না। এদিকে মাঠ রক্ষার দাবিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত আন্দোলন করলেও প্রশাসনিক কোনো অগ্রগতি নেই। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন তাহলে কি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো খেলার মাঠ থাকবে না?

জানা যায়, গত জুনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ১৭ জুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে মার্কেট নির্মাণের আশঙ্কায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে সিটি মেয়রের সঙ্গে দেখা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করার আশ্বাস দেওয়া হয়। সে সময় খেলার মাঠ থেকে খুঁটি সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু রোববার গভীর রাতে আবার পুরো মাঠ ঘিরে রাখা হয়। মাঠের গোলপোস্ট ও সীমানাপ্রাচীরগুলো তুলে ফেলে সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, প্রথমে সিটি করপোরেশন থেকে মাঠে মার্কেট নির্মাণ না করার আশ্বাস দেওয়া হলেও এখন সে কথা রাখছেন না মেয়র। এখন মাঠ রক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হবে। এতেও সমাধান না হলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য নিজস্ব কোনো মাঠ না থাকায় ধূপখোলা খেলার মাঠটি তিন ভাগ করে এক ভাগ তৎকালীন সরকারি জগন্নাথ কলেজকে (বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়) ব্যবহার করার জন্য মৌখিকভাবে অনুমতি দেন। তখন থেকেই মাঠটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।  জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনও এই মাঠেই অনুষ্ঠিত হয়।

একমাত্র খেলার মাঠটি রক্ষার দাবিতে সরব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

এদিকে নিজেদের একমাত্র খেলার মাঠটি রক্ষার দাবিতে সরব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রবিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় সংবাদ সম্মেলন করেন প্রগতিশীল ছাত্রজোট। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রগতিশীল ছাত্রজোটের অন্যতম নেতা ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাসান জাহিন। এসময় তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ হাজার শিক্ষার্থীর একমাত্র খেলার মাঠটিও দখল হওয়ার পথে। আজকের এই পরিস্থিতির পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতাই দায়ী বলে আমরা মনে করি। ১৯৮২ সালে এই মাঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ করা হলেও এখন পর্যন্ত তা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং সুরক্ষার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এতোদিনেও বরাদ্দকৃত সম্পত্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেটের আওতাভুক্ত করতে না পারার দায় অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আছে।

বিজ্ঞাপন

এরপর বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচীতে মাঠ রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান রাজুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া সোমা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভলিবল প্রমিলা দলের খেলোয়াড় আনতাজ হেনা আখি, ফুটবল দলের খেলোয়াড় গাজি মোঃ শামসুল হুদা, একাউন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ফয়সাল, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী কিশোয়ার সাম্য, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস শাকিল সহ আরো অনেকে।

এসময় বক্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ববিদ্যালয় রাখার জন্য হলেও মাঠ পুনরুদ্ধার করতে হবে, মাঠ না থাকলে শিক্ষার্থীরা মাদকের দিকে ঝুঁকবে। যতদিন পর্যন্ত আমরা কেরানীগঞ্জের ক্যাম্পাসে না যাব ততদিন পর্যন্ত আমরা ধুপখোলার মাঠ ব্যবহার করতে চাই। এসময় শিক্ষার্থীরা হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, লুটপাট করার জন্য আপনাদের অনেক জায়গা রয়েছে। মশা মারার ওষুধের টাকাও আপনারা লুটপাট করেন। শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ দখল করে বাণিজ্য করার অশুভ চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন। শিক্ষার্থীরা তাদের মাঠের কর্তৃত্ব রক্ষায় সমুচিত জবাব দিবে।

মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন। মিছিলটি পরবর্তীতে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক, লক্ষ্মীবাজার ও কাঠেরপুল হয়ে ধুপখোলা মাঠে প্রবেশ করে। সেখানে সিটি কর্পোরেশনের চলমান কাজ বন্ধ করে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে।

শিক্ষার্থীরা ধুপখোলা মাঠে অবস্থানকালে সেখানে গেন্ডারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ সাজু মিয়া পরিদর্শনে আসেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা টহলরত অবস্থায় ছিলাম, খবর পেয়ে এখানে আসি। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছে।