দেয়াল ভাঙ্গাকে কেন্দ্র করে জাবির দুই হলে দফায় দফায় সংঘর্ষ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শহীদ রফিক-জব্বার হল ও শেখ রাসেল হলের মধ্যবর্তী দেওয়াল অপসারণ নিয়ে দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে শহীদ রফিক জব্বার হলের উত্তর পাশের প্রায় ২০টির অধিক রুম ভাংচুর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। অপরদিকে শেখ রাসেল হলের মসজিদসহ কয়েকটি রুমে ঢিল ছুঁড়ে জানালার কাঁচ ভাংচুর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে শহীদ রফিক জব্বার হলের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাত ৯ টার দিকে দুই হলের মধ্যকার দেয়াল ভাঙ্গাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে দুই হলের উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইট-পাটকেল ও পেট্রোল বোমা আদান-প্রদানের ঘটনা ঘটে। এতে রফিক-জব্বাব হলের প্রায় ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার কথা শোনা গেলেও মোট হতাহতের সংখ্যা এখনো জানা যায় নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও হলগুলোর অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, নবনির্মিত হলগুলোর উদ্বোধনের পর থেকেই বিদ্যমান এ দেয়ালের কারণে শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের অসুবিধা হচ্ছিল। এ নিয়ে দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়৷ এরপর দেয়াল অপসারণের দাবিতে শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শেষে স্মারকলিপি হল প্রভোস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়। তবে মঙ্গলবার রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা সেই দেয়ালে ৭-ই মার্চ উপলক্ষে দেয়ালচিত্র আঁকতে গেলে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এসময় শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা সেখানে গেলে দু'পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। পরে শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা সে দেয়াল ভেঙে ফেলার চেষ্টা করলে তা ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষে রূপ নেয়।
এদিকে, সংঘর্ষের খবর পেয়ে প্রক্টোরিয়ার টিম উপস্থিত হলেও প্রক্টরের উপস্থিতিতেই সংঘর্ষ চলতে থাকে। এসময় প্রক্টরিয়াল টিম দু'পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও সংঘর্ষ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে দুই হলের পার্শ্ববর্তী নবনির্মিত কাজী নজরুল হলের দ্বিতীয় তলা থেকে পেট্রোল বোমা সদৃশ আগুন ছুড়তে দেখা যায়। সংঘর্ষে গণিত বিভাগের ৪৯ ব্যাচের রফিক জব্বার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রেজাউল করিম মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। তাকে এম্বুলেন্সযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে৷ এছাড়া আরও কয়েকজনের গায়ে ইট পড়ায় আহত হওয়ার কথাও শোনা যায়। তবে মোট হতাহতের সংখ্যা এখনো জানা যায় নি।
পরে রাত ১২ টায় সেখানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় আশুলিয়া থানা পুলিশের প্রায় অর্ধশতাধিক সদস্য ঘটনাস্থলে আসে৷ এসময় প্রক্টর রফিক জব্বার হলের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে গেলে শিক্ষার্থীরা তার সাথে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা একপর্যায়ে ভিসির বাসভবন বা ডেইরি গেইটে অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দেয়৷ সর্বশেষ তথ্যমতে, দুই হলের মধ্যবর্তী সড়কে এখনও উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে শেখ রাসেল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক তাজউদ্দীন শিকদার বলেন, 'আমি একটা ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় অবস্থান করছিলাম৷ হলে এসেছি। আমার শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার জন্য বলেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা চেষ্টা করছি।'
শহীদ রফিক জব্বার হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক শাহেদ রানা বলেন, 'আমি হলে অবস্থান করছি। এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারবো না। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।'
হল বন্ধ থাকার পরও হলের ভেতরে ঢুকে শিকার্থীদের ইট পাটকেল ছোঁড়ার বিষয়ে কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রভোস্ট আব্দুল্লাহ হেল কাফি বলেন, 'আমাকে হলের দায়িত্ব এখনো বুঝিয়ে দেওয়া হয় নি। তাই এ বিষয়ে আমি এখন কিছু বলতে পারবো না।'
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, আমি খবর পাওয়ার প্রক্টরিয়াল টিমকে নিয়ে ঘটনাস্থলে চলে এসেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারি মাসে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৬টি হলের মধ্যে মেয়েদের ১ টি ও ছেলেদের ১ টি আবাসিক হল খুলে দেওয়া হয়। এসময় ছেলেদের নতুন হল (শেখ রাসেল হল) সংলগ্ন শহীদ রফিক জব্বার হলের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী কয়েকটি দাবির কথা তুলে প্রশাসনের তোয়াক্কা না করেই দেয়াল তৈরী করে ফেলেন। আর এ বিষয়ে প্রশাসনেরও কোনো সফল ভুমিকা লক্ষ্য করা যায় নি।
এদিকে বিভেদের দেয়ালের বিপাকে পড়ে শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা তাদের অভিযোগ, হল ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে দাবি-দাওয়া তুলে ধরে। কিন্তু এরপরও দেয়াল অপসারণ বা ছোট ফটক তৈরি এর কোনটাই সম্ভব হয় নি।