কোটা বাতিল নয়, সংস্কার চান শিক্ষার্থীরা
‘সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধনের এক দফা দাবিতে 'বাংলা ব্লকেড' এর অংশ হিসেবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক প্রায় ৩৫ মিনিট অবরোধ করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, কোটা বাতিল নয়, সংস্কারের দাবিতে তাদের আন্দোলন।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ হতে একটি বিক্ষোভ-মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিকেল পৌনে ৪টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সমবেত হয়ে উভয়পাশে ব্লক করে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে সড়কের দুপাশেই যানজট তৈরি হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, তারা কোটা বাতিল নয়, সংস্কার চান। আন্দোলনকারীদের একজন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, আমরা কোটা বাতিলের দাবিতে নয়, আমরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি। আমরা চাই সংবিধান অনুযায়ী যারা অনগ্রসর জাতি-গোষ্ঠী রয়েছে তাদের জন্য কোটার ব্যবস্থা বহাল থাকুক কারণ স্বাধীনতার এতো বছর পরেও তারা মৌলিক অধিকার থেকে এখনো বঞ্চিত৷ ১৯৭২ সালে যখন মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রবর্তন করা হয়েছিল তখন সংবিধানে বলা হয়েছিল এটা একটা অন্তর্বর্তীকালীন সিস্টেম। কিন্তু সেই কোটা স্বাধীনতার পরও ৫৪ বছর ধরে পর্যন্ত কিভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সিস্টেম হিসেবে অব্যাহত থাকে সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই আপনি যে দেশজুড়ে সম্মানসূচক মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখতে চান তাতে করে আপনি একদল সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরির মাধ্যমে বৈষম্য আরও প্রগাঢ় করছেন। তাই আমাদের দাবি অতিদ্রুত মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে।
বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব বলেন, আমরা অনগ্রসর জাতি-গোষ্ঠীর জন্য সাংবিধানিক যে কোটা ব্যবস্থা রয়েছে তা আমরা সাপোর্ট করি৷ আমরা চাই মুক্তিযোদ্ধা কোটার নামে যে দ্বিতীয়-তৃতীয় প্রজন্মকে সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে মেধাবীদের স্তিমিত করা হচ্ছে-মেধাবীদের সাথে বৈষম্য তৈরি করা হচ্ছে সেটা বন্ধ হোক। কোটা সংস্কার আন্দোলন কোনো অযৌক্তিক আন্দোলন নয়। বরং সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করে কোটা বহাল রাখাই অযৌক্তিক। আমরা দেখেছি বিপিএসসির বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। তাই আমাদের দাবি সকল প্রকার অন্যায়, অনিয়ম ও বৈষম্য থেকে মুক্তি দিতে হবে। যতদিন না এসকল দাবি পূরণ হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো৷
এদিকে বুধবার (১০ জুলাই) আপিল বিভাগের শুনানি শিক্ষার্থীদের পক্ষে না আসলে লাগাতার অবরোধ ও কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচির মাধ্যমে দেশ অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা।
অবরোধ তুলে নেওয়ার পর ধীরে ধীরে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করতে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি সড়কে কাজ করছে আশুলিয়া থানা পুলিশ।