আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ শিপুর ওপর হামলার প্রতিবাদে জাবিতে মানববন্ধন
গণ-অভ্যুত্থানের সৈনিক ছাত্র-জনতার ওপরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আক্রমণ এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে সরকারের দীর্ঘসূত্রতার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা৷
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বেলা ১টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সম্মুখে (ডেইরি গেট) এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়৷
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী মেহরাব সিফাতের সঞ্চালনায় বক্তারা গতকাল আশুলিয়ার শ্রীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) শিক্ষার্থী রবিউস সানী শিপুর ওপর আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসীদের হামলার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে সাপেক্ষে বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান৷
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও জাবি শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, রবিউস সানী শিপু আন্দোলনের প্রথম সারির একজন নেতৃত্বদানকারী ছাত্র৷ সে আন্দোলনে থেকে গুলি খেয়েছে৷ কিছুদিন আগে তার অপারেশন হয়েছে, এখনো তার পেটে সেই গুলির দাগ রয়ে গেছে৷ আমরা দেখেছি আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসীরা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ২ মাস পরে তার ওপর আক্রমণের সাহস দেখিয়েছে৷ তার গুলিবিদ্ধ পেটে আঘাত করতে করতে রক্তপাত ঘটিয়েছে, যেটা সুস্পষ্ট হত্যা চেষ্টা৷
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের আগে আমরা বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী আওয়ামী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর বিচারের দাবিতে দাঁড়িয়েছি৷ আওয়ামী ফ্যাসিবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পলায়নের প্রায় ২ মাস পর আমাদেরকে আবারো দাঁড়াতে হচ্ছে৷ কিন্তু বর্তমান সরকার যদি তার দায়িত্ব পালনে বারবার এভাবে ব্যর্থ হতে থাকে, দীর্ঘসূত্রিতায় জড়াতে থাকে, তাহলে এই ফ্যাসিবাদ গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে এবং সফল হবে৷ দুই মাস পর তারা এখন আমাদেরকে হত্যার চেষ্টা করছে, অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের এবং তাদের সাংগঠনিক কাঠামো যা ব্যবহার করে তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায় সেই সাংগঠনিক কাঠামো নিষিদ্ধ করতে হবে৷
শিপুর ওপর আক্রমণকারী সন্ত্রাসীদের মামলা দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার আলটিমেটাম দিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের সুস্পষ্ট দাবি রবিউস সানী শিপুর ওপর আক্রমণকারী সন্ত্রাসীদের যথাযথ মামলা দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে এবং বিচারের মুখোমুখি করতে হবে৷ এছাড়াও সাভার আশুলিয়া অঞ্চল ও সারাদেশে আওয়ামী ছাত্রলীগ যুবলীগের সন্ত্রাসী যারা ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার হত্যাকারী ও হামলাকারীদের চিহ্নিত করে যথাযথ তদন্তপূর্বক গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে৷ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ ও নীতিকে শক্তিশালী করতে পারলে নিজেরা টিকে থাকতে পারবে এবং রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠন কার্যক্রম সফল করতে পারে৷
মানববন্ধনে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের প্রথম কাজ নিয়ে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, যে কোনো গণঅভ্যুত্থানের বিপ্লব পরবর্তীতে যে সরকার গঠিত হয় তারা প্রথমেই আত্মত্যাগকারী বা গণঅভ্যুত্থানের সৈনিকদের ক্ষমতাশালী করে তাদেরকে ক্ষমতায়িত করে৷ এবং ফ্যাসিবাদী রেজিমের অত্যাচার এবং শোষণমূলক কাঠামোর সাথে যারা জড়িত সে সকল চক্রকে আটক করে এবং বিচারের মুখোমুখি করে৷ এটা গণঅভ্যুত্থান বিপ্লব পরবর্তী সরকারের প্রথম কাজ৷ অথচ এই দুটি কাজে তাদের সুস্পষ্ট কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি৷ তাদের কাজ দেখে মনে হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনা করা একটা অফিসিয়াল কাজ মাত্র৷
মানববন্ধনে আহত শিফুর মা স্কুল শিক্ষিকা নাদিয়া আফরোজ শিউলি বলেন, এই যে আমরা ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনার নেতৃত্বে ছিলাম বাক স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না৷ ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমাদেরকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, কিন্তু আমরা এই সরকারের তেমন কোনো উন্নতি দেখতে পাইনি গত দুই মাসে৷ বিভিন্ন মেডিকেলে ভর্তি আন্দোলনে আহত ও শহীদ পরিবারের পাশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেভাবে দাঁড়ানোর কথা ছিল, সেভাবে তাদের অবস্থান দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না৷
তিনি বলেন, আমি গত ২৫ বছর ধরে শ্রীপুরের এই এলাকায় আছি৷ এখানে এতোবছর যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল তারাই গতকাল আমার ছেলের ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে৷ তার এক বন্ধুর মাধ্যমে আমাদের বাসার পিছনের দিকে স্কুল মাঠে রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিয়ে গিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি মারধর করে৷ পরে আমি খবর পেয়ে সেখানে গাড়ি নিয়ে উপস্থিত হয়ে আমার ছেলেকে উদ্ধার করে হসপিটালে ভর্তি করি৷ আমরা এ দেশের কোথাও আর এই বিগত ফ্যাসিবাদ সরকারের কর্মকাণ্ড দেখতে চাই নাই৷
এসময় কাঁদতে কাঁদতে আহত শিফুর হতবিহ্বল মা অনেকটা আকুতি জানিয়ে বলেন, শিফু আমার একমাত্র ছেলে৷ সে দেশে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গিয়ে রাজপথে গুলি খেয়েছে৷ কিন্তু সে তার এতো ত্যাগ স্বীকার করেছে এর বিনিময়ে সে কোনো যথাযথ সম্মান বা মর্যাদা পায়নি৷ আমি আমার ছেলেকে নিয়ে এতোদিন ধরে বাড়িতে ছিলাম, পরে এক মাস পর গতকাল ঢাকায় নিয়ে আসছি৷ আসার দুই ঘণ্টা পরেই তাকে হত্যা চেষ্টার উদ্দেশ্যে এমন ঘটনা ঘটে৷ সরকারের কাছে আমার ছেলের ওপর হামলার সুষ্ঠু বিচারের জোর দাবি জানাচ্ছি৷ আমি আর কোথাও ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর কোনো কর্মকাণ্ড দেখতে চাই না৷