আসন্ন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে থেকে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। গণস্বাক্ষর গ্রহণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন তারা।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝালচত্বরে গুচ্ছে থাকার পক্ষে এই গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী ইবিকে গুচ্ছে রাখার পক্ষে স্বাক্ষর করে। পরে বিকেল ৩টায় উপাচার্য বরাবর স্বারকলিপি জমা দেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, ইবি গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের জন্য ভোগান্তির কারণ হবে। প্রতিটি ইউনিটে আলাদা আলাদা আবেদন করতে বিরাট অংকের টাকা লাগবে যা মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের পক্ষে বহন করা সম্ভব না। যেখানে গুচ্ছতে মাত্র ১৫০০ টাকাতেই আবেদন করা যাচ্ছে। এছাড়াও, গুচ্ছের মাধ্যমে পরীক্ষা নিলে দেশের সকল প্রান্তের শিক্ষার্থীরা ইবিতে আসবে যা গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে গেলে সম্ভব না। একজন শিক্ষার্থী তার বাড়ির কাছের কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে পারে এতে তাদের সময় এবং যাতায়াতের ভোগান্তি কম হয়। গুচ্ছ থেকে ইবি বেরিয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের এই ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মির্জা শাহরিয়ার বলেন, গুচ্ছের কারণে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারে। এতে প্রতিযোগিতা বাড়ে, মানসম্মত শিক্ষার্থীদের পাওয়া যায়। একই প্রশ্নের প্যাটার্নে তারা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারে এতে প্রস্তুতি সহজ হয়। যাতায়াত খরচ, আবেদন ফি এগুলোর টাকাও বেচে যায়। গুচ্ছে আসার কারণে সেশনজট বেড়ে যাওয়ার একটা অযৌক্তিক যুক্তি দেওয়া হয়। আমরা বলতে চাই, সেশনজট বেড়েছে করোনার কারণে, গুচ্ছের আগেও ইবিতে সেশনজট ছিলো; আর গুচ্ছের কারণে সেশনজট সৃষ্টি হলে যবিপ্রবি, শাবিপ্রবি, জবি, খুবি এদেরও সেশনজট থাকতো। স্বতন্ত্রতার কথা বলতে যেয়ে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী যে বঞ্চিতের শিকার হচ্ছে, সেবিষয়ে কেও কথা বলছে না। আমরা চাই ইবি গুচ্ছেই থাকুক, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কম হোক।
তবে, গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতেও বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেছে ইবি শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে শতাংশ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করে। সর্বশেষ গত পরশুদিন গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীদের একাংশ। গতকাল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সাথে আলোচনা করেও গুচ্ছে থাকা না থাকার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, গুচ্ছ কর্তৃপক্ষের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের স্বার্থে তিনি আমাদের অনুরোধ করেছেন। এছাড়াও আমি গতকাল এ বিষয়ে বিভিন্ন ধাপে সিরিজ আলোচনা করেছি। যারা গুচ্ছের বাইরে যেতে চায় তাদেরও যুক্তি রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আগে থেকে নিজস্ব পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিতো, তারাও চায় বের হয়ে যেতে। তবে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ আমাদের ভাবতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গুচ্ছের আগের যে অসুবিধাগুলো ছিল সেসব সমাধান করবে বলে তারা কথা দিয়েছে। তোমরা যে যুক্তিগুলো দিয়েছে সেটা রাষ্ট্রীয় যুক্তি। গুচ্ছ থেকে আলাদা হয়ে গেলে সব বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা পরীক্ষা নিলে টাইম ম্যানেজমেন্টে একটা অসুবিধা হবে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবো গুচ্ছের যে ত্রুটিগুলো ছিল সেগুলো যেন সমাধান করা যায়।