একাদশে মন্ত্রিত্বশূন্য পাবনা
প্রাচীন জনপদ খ্যাত পাবনা থেকে ১৯৭১ সালের মুজিবনগর সরকার থেকে শুরু করে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সরকারের মন্ত্রিপরিষদে প্রতিনিধিত্ব ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে এসে প্রথমবারের মত মন্ত্রিত্বশূন্য পাবনা।
স্বাধীনতার পরে এই প্রথম পাবনা থেকে কেউ মন্ত্রিপরিষদে জায়গা না পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক নেতা। পাশাপাশি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।
১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হলে বৃহত্তর পাবনার সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ১৯৭৫ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন মনসুর আলী। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে মন্ত্রী হন পাবনার সুজানগরের মির্জা আব্দুল হালিম।
১৯৮৬ সালে হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সরকারে এ জেলা থেকে মন্ত্রীর দায়িত্ব পান মঞ্জুর কাদের। ১৯৯১ সালে বিএনপির শাসনামলে ওসমান গণি খান (ওজি) মন্ত্রিত্ব লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পাবনার সুজানগর থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব পান এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) এ কে খন্দকার বীরপ্রতিক এবং পাবনার বেড়া থেকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর শিল্পমন্ত্রী এবং পরে কৃষি মন্ত্রীর দায়িত্ব দেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয় পাবনার অ্যাড. শামসুল হক টুকুকে। পরে ঐ মন্ত্রণালয় থেকে বদলিয়ে তাকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী করা হয়। ২০১৪ সালে ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান এই জেলার শামসুর রহমান শরীফ ডিলু।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, স্বাধীনতা পর থেকে পাবনাকে সবসময়ই গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রিপরিষদে জায়গা দিয়েছেন। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা পাবনাকে রাখবেন- এমন আশায় বুক বেঁধেছিলেন পাবনাবাসী। কিন্তু সদ্য ঘোষিত মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর তালিকায় পাবনার পাঁচটি আসনের কোনো সাংসদের নাম না থাকায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
এলাকাবাসী বলছেন, ক্লিন ইমেজ, সততা, নিষ্ঠা, কর্তব্য-দায়িত্বে অবিচল এবং দক্ষ সংগঠক হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন পাবনা-৫ আসনে পরপর তিনবারের সাংসদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোন্দকার প্রিন্স।
এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনা সদর আসনে মন্ত্রিত্ব দেওয়ার বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেবেন এমন ভাবনাই ছিল পাবনাবাসীর। কিন্তু ঘোষিত মন্ত্রিপরিষদ এবং শপথ গ্রহণের পর হতাশার মধ্যে পড়েছেন পাবনাবাসী।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে পাবনা-১ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে তৃতীয়বারের মত এমপি হয়েছেন অ্যাড. শামসুল হক টুকু। পাবনা-২ আসন থেকে প্রথমবারের মতো এমপি হয়েছেন আহমেদ ফিরোজ কবির। পাবনা-৩ আসন থেকে তৃতীয়বারের ন্যায় এমপি হয়েছেন মকবুল হোসেন। পাবনা-৪ আসন থেকে পঞ্চমবারের মতো এমপি হয়েছেন শামসুর রহমান শরীফ ডিলু এবং পাবনা-৫ আসনে টানা তিনবারের এমপি গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স।