মরণোত্তর স্বীকৃতির অপেক্ষায় মনোগ্রাম প্রণেতা সাহার পরিবার
অনেকে লোক মুখে শুনলে একটু অবাক হয়ে যায়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রীয় যে গুরুত্বপূর্ণ মনোগ্রাম এখন ব্যবহার করা হয় তা চুয়াডাঙ্গার এক ক্ষুদ্র কারিগরের তৈরি। তিনি হলেন এনএন সাহা। স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পার হলেও আজও মরনোত্তর সরকারি কোনো স্বীকৃতি পাননি এ ব্যক্তি।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিবনগর সরকার ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম প্রণেতা এনএন সাহার মৃত্যুর পর পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে একাধিকবার এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েও মেলেনি কোনো উত্তর। সরকারি বিভিন্ন দফতরে ঘোরার পরও কাজ না হওয়ায় বাবার স্বীকৃতির আশা অনেকটা ছেড়ে দিয়েছে এনএন সাহার সন্তানরা।
এনএন সাহার ছেলে চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু জানান, ‘তৎকালীন সময়ে রাষ্ট্রীয় মনোগ্রামটি ভারতের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে তৈরি হয়েছিল। ১৯৭১ সালে ২৮শে মার্চ সেই সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন অর্থ সম্পাদক প্রয়াত মোহাম্মদ আনসারীর মাধ্যমে এনএন সাহা ডাক্তার আসহাব উল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় মুজিবনগর সরকার পরিচালনার জন্য এনএন সাহাকে মনোগ্রামের বানাতে বলা হয়েছিল। ডাক্তার হকের পছন্দেই একটি মনোগ্রাম বাছাই করা হয়। যাতে লেখা ছিল দক্ষিণ পশ্চিম রণাঙ্গনের মাঝে ছিল বাংলাদেশের ম্যাপ। মনোগ্রাম তৈরি তথ্যটি পাক বাহিনীর কাছে ফাঁস হলে তারা এনএন সাহার বাড়িতে হামলা করে। এ সময় তিনি ভীত হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়ে শরণার্থীর তালিকায় নাম লিখান
তিনি আরও জানান, চুয়াডাঙ্গায় বোমা বর্ষণের ফলে মুজিবনগর সরকারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং একটি আঞ্চলিক দফতর ভারতের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে স্থাপন করা হয়। ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে কৃষ্ণনগরের অফিসে যান এনএন সাহা। সে সময় স্বাধীন বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ তাকে বলেন, দক্ষিণ পশ্চিম রণাঙ্গনে এখন আর সিল প্রয়োজন নেই। এখন দরকার রাষ্ট্রীয় মনোগ্রামযুক্ত সিল মোহর। দক্ষিণ পশ্চিম রণাঙ্গনের মনোগ্রামটি সামান্য পরিবর্তন করে এনএন সাহা একটি ডিজাইন করেন। তাতে লেখা ছিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, মধ্যে ছিল বাংলাদেশের ম্যাপ। পরবর্তীতে এটাই বাংলাদেশের সরকারের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম সিল মোহর হিসেবে ব্যবহার করা হয়।’
মৃত্যুর আগে রাষ্টীয় মনোগ্রাম প্রনেতা এনএন সাহা ও তার স্ত্রী চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েও হয়েছেন বঞ্চিত। তবে এনএন সাহার সন্তানরা জানিয়েছেন, তাদের বাবার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ, পৌত্রিক ভিটাবাড়ি উদ্ধার এবং বেঁচে থাকার পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে আজও তাকিয়ে আছেন তারা।
জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাসের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বার্তা২৪কে জানান, ‘এনএন সাহার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানেন না তিনি।