কোটালীপাড়ায় শুঁটকি তৈরিতে স্বাবলম্বী শতাধিক পরিবার

  • মাসুদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, গোপালগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

শুঁটকিখোলায় ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা

শুঁটকিখোলায় ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা

নিম্ন জলাভূমি বেষ্টিত গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় রয়েছে অসংখ্য খাল-বিল। প্রায় বারো মাসই পানি থাকে অধিকাংশ বিলেই । এ কারণে এসব বিলে প্রচুর দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এই মাছকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক শুঁটকিখোলা। পুরো শীতকাল জুড়েই এসব শুঁটকিখোলায় মাছ শুকানো হয়। এলাকার শতশত নারী-পুরুষ এসব শুঁটকিখোলায় কাজ করে তাদের সংসার চালায়। অনেক এলাকায় স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীরাও লেখাপড়ার পাশাপাশি শুঁটকিখোলায় মাছ ধোঁয়া, বাছাই ও শুকানোর কাজ করে।

উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের ধারাবাশাইল, মাচারতারা, তালপুকুরিয়া, ভেন্নাবাড়ি, নয়াকান্দি, গজালিয়া, আমবাড়ি, পিঞ্জুরী ইউনিয়নের দেওপুরা, ছত্রকান্দা, সোনাখালী, কোনের বাড়ি, তারাইল, রামশীল ইউনিয়নের রামশীল, রাজাপুর, মুশুরিয়া, জহরের কান্দি, ত্রিমূখী, সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লাটেঙ্গা, লখন্ডা, নৈয়ারবাড়ি, ভাঙ্গারহাট, কলাবাড়ি ইউনিয়নের কালিগঞ্জ, রামনগর, রুথিয়ারপাড়, মাছপাড়া, বুরুয়া, হিজলবাড়ি, শিমুলবাড়ি, তেতুলবাড়ি, বৈকণ্ঠপুর, কুমুরিয়াসহ প্রায় অর্ধশত গ্রামে ছোটবড় শতাধিক শুঁটকিখোলায় এখন মাছ শুকানোর কাজ শুরু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ সকল এলাকার নিম্ন জলাভূতিতে প্রচুর দেশীয় মাছ পাওয়া যায়। মৎস্যজীবীরা এলাকার নিম্ন জলাভূমি বা বিল থেকে মাছ ধরে ছোট ছোট হাট বাজারে বিক্রি করে। এই মাছ কিনে অনেকে শুকিয়ে উপজেলার বিভিন্ন বাজারের আড়তে বিক্রি করে। অনেক মৎস্যজীবী আবার বিল থেকে মাছ ধরে নিজেরাই বাড়িতে শুকায়।

মিঠা পানির মাছ হওয়ায় কোটালীপাড়ার শুঁটকি খুব সুস্বাদু। তাই এই শুঁটকির দেশে-বিদেশে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে কোটালীপাড়ার শুঁটকি। এমনটাই জানালেন, কালিগঞ্জ বাজারের আড়তদার কৃষ্ণ কান্ত বাড়ৈ।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমরা এখানের বিভিন্ন শুঁটকিখোলার মালিকদের কাছ থেকে শুঁটকি কিনে চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া, সিলেট, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীতে বিক্রি করি। এসব জেলার অনেক ব্যবসায়ী এই শুঁটকি ভারতেসহ বিভিন্ন দেশে পাঠায়।

কলাবাড়ি ইউনিয়নের কুমুরিয়া গ্রামের স্কুল ছাত্র দিপ্র বিশ্বাস বলেন, আমার বাবা বিল থেকে মাছ ধরে বাড়িতে শুকায়। আমি লেখা পড়ার পাশাপাশি বাবাকে মাছ শুকানোর কাজে সহযোগিতা করি।

কলাবাড়ি ইউনিয়নের কালিগঞ্জ গ্রামের শুঁটকিখোলার মালিক গৌতম হাজরা বলেন, আমরা গ্রাম থেকে ৪/৫ হাজার টাকা করে কাঁচা পুঁটির মন ক্রয় করি। এই পুঁটি আমরা শুকিয়ে ১২/১৪ হাজার টাকা করে মন বিক্রি করি। এছাড়াও খৈলশা, শোল, গজাল, টেংরাসহ নানা প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ এখানে শুকিয়ে থাকি।

একই এলাকার শুঁটকিখোলার অপর এক মালিক অজয় হালদার বলেন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও পুঁজির অভাবে আমরা অনেক সময় শুঁটকির ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হই। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরা এই ব্যবসায় আরো লাভবান হতে পারতাম।

উপজেলা মৎস্য অফিসার প্রশান্ত কুমার সরকার বলেন, শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ বা সংরক্ষণের জন্য এ উপজেলায় সরকারি কোন প্রকল্প নেই। সরকার যদি এখানে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করে তা হলে এই এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ী বা প্রস্তুতকারীরা আর্থিক ভাবে লাভবান হবে।