ওয়ার্ল্ড সামার গেমসে অংশ নিতে আবুধাবি যাচ্ছে ১৫ বাক প্রতিবন্ধী
জন্মগতভাবে ওরা বাক প্রতিবন্ধী। অন্যদের মতো কথা বলতে পারে না। কেউ তাদের ভাষাও বোঝে না। তবুও তারা সমাজের বোঝা নয়, মাথা উচুঁ করে সমাজে অন্য ৫ জনের মতো করে বাঁচতে শিখেছে তারা। এবার তারা প্রস্তুত বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে।
বলছিলাম বাংলাদেশের হয়ে আগামী মার্চে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিতব্য 'ওয়ার্ল্ড সামার গেমস’ এ অংশগ্রহণকারী পাবনার ১৫ জন বাক প্রতিবন্ধী অদম্য খেলোয়াড়ের কথা।
বাক প্রতিবন্ধীদের বিশ্বের বুকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা এবং সমাজে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে শেখানোর নেপথ্যে কারিগর স্পেশাল অলিম্পিকস বাংলাদেশ সাব চেপ্টার, পাবনা।
জন্মগতভাবে বাক প্রতিবন্ধী রোহান, রাজিব, আকাশ, স্বপ্না, চাঁদনী, হাবিয়া, অনিতা, কনক, তামান্না, তানাম, খুশি, জুথি, রাব্বি, বৃষ্টি ও সাদিয়া। তারা অংশ নিতে যাচ্ছে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড সামার গেমসে।
এ উপলক্ষে এই ১৫ প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়কে সংবর্ধনা দিয়েছে স্পেশাল অলিম্পিকস বাংলাদেশ সাব চ্যাপ্টার, পাবনা।
রোববার (১৩ জানুয়ারি) শহীদ অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামের সভাকক্ষে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স। এ সময় প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শারীরিক প্রতিবন্ধী, বাক প্রতিবন্ধীসহ (অটিস্টিক) প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে সোচ্চার। তারা দেশের বোঝা নয়, তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনসম্পদে পরিণত করতে একের পর এক কাজ করে যাচ্ছে এই সরকার।
প্রিন্স আরও বলেন, বিগত সময়ে প্রতিবন্ধীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধীদের নিয়ে নানামুখী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে কাজ করছে সরকার।
অনুষ্ঠানে স্পেশাল অলিম্পিকস বাংলাদেশ সাব চ্যাপ্টার পাবনার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস, স্পেশাল অলিম্পিকস বাংলাদেশ সাব চ্যাপ্টার পাবনার সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হোসেন বাদশা বক্তব্য দেন।
জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, প্রতিবন্ধীরা এখন আর সমাজের বোঝা নয়। তারা তাদের ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পতাকাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বরাবরের মতো পাবনার প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়রা দেশের জন্য সম্মান বয়ে নিয়ে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
স্পেশাল অলিম্পিকস বাংলাদেশ সাব চ্যাপ্টার পাবনার সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হোসেন বাদশা বলেন, প্রতিবন্ধীরা যে পরিবারে, সমাজে এমনকি দেশের কাছে সামগ্রিক অর্থে বোঝ নয়, সেটা তারা বারবার প্রমাণ করেছে। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক গুণ বেশি পরিশ্রম, মেধাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। বাদশা বলেন, প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের সাধারণ খেলোয়াড়ের মতো করেই প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
বাদশা আরও বলেন, এই প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়রা ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ভালো ফলাফল করেছে। এর আগে ১৭১টি দেশের টিমের সঙ্গে খেলে রানার্সআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
অনুষ্ঠানে বাকপ্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের কয়েকজন তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন ইশারা ভাষায়। তারা বলেন, আরও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ এবং যুগোপযোগী সুযোগ-সুবিধা পেলে অবশ্যই আমরা আরও ভালো করব।
সংবর্ধনায় প্রত্যেককে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি সবার হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দেন অতিথিরা।