বাম্পার ফলনেও লোকসানে শিম চাষিরা

  • কাজল সরকার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, হবিগঞ্জ, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

শিম ট্রাকে ভরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে ,ছবি: বার্তা২৪

শিম ট্রাকে ভরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে ,ছবি: বার্তা২৪

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় এবার শিমের বাম্পার ফলন হলেও দাম কম হওয়ায় হতাশ কৃষকেরা। গত বছরের তুলনায় এবার শিমের দাম অনেক কম। এতে লাভ হওয়াতো দূরের কথা উৎপাদন খরচই উঠছে না কৃষকদের।

অন্যদিকে, উৎপাদন খরচ না উঠায় শ্রমিকের মজুরি দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে চাষিদের। তবে এ অবস্থার জন্য কৃষকরা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/15/1547548482463.JPG

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র বাহুবল উপজেলাতেই আবাদ হয়েছে ৩ হাজার হেক্টর জমি। ফলনও হয়েছে বাম্পার। এখানে উৎপাদিত শিমে কোন ধরণের ক্যামিকেল ব্যবহার না করায় সারাদেশে এর চাহিদাও ব্যাপক।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, আশ্বিন, কইটা, আদা সুন্দরি, গুতুম, বোয়াল গাধা জাতের শিমের চাহিদা রয়েছে দেশের বাহিরেও। ইউরোপ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে এখানে উৎপাদিত শিম। কিন্তু এ বছর শিমের দাম কম হওয়ায় বাম্পার ফলনেও হাসি ফুটেনি কৃষকের মুখে। লাভতো দূরের কথা উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে শিম চাষিদের।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/15/1547548496377.JPG

কৃষকদের দাবি, এক খের (৩২ শতক) জায়গায় শিম উৎপাদন করতে খরচ হয় ৪৫ হাজার টাকা। অন্যবছর যেখানে খেরপ্রতি ৯০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করা হতো, এবছর সেখানে প্রতি কেজি ৮/১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে উৎপাদন খরচ তোলা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

আশ্বিন, কইটা, আদা সুন্দরি, গুতুম, বোয়াল গাধাসহ অন্তত ৭/৮ জাতের শিম বিদেশে রফতানি হওয়ার পরও দাম বেশি না পাওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ চাষিরা। তাদের দাবি, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে ভালো দাম পাচ্ছেন না তারা (কৃষকরা)।

এ ব্যাপারে বাহুবল উপজেলার কৃষক আলী হোসেন বলেন- ‘অন্যবছর ১৫/২০ টাকা কেজি ধরে শিম বিক্রি করতাম। ফলে আমরা অনেক লাভবান ছিলাম। কিন্তু এ বছর শিম বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮/১০ টাকা কেজি দরে। ফলে আমাদের লাভ হওয়াতো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠবে না।’

একই উপজেলা পুটিজুরি গ্রামের কৃষক পিয়াল রায় বলেন- ‘শিম উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। কিন্তু দাম বাড়াতো দূরের কথা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্য দামই পাচ্ছি না আমরা।’

তিনি বলেন- ‘ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরই সিন্ডিকেট করে শিম চাষিদের বিপদে ফেলেন। এ বছর তারা ভয়ংকর এক সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। যার ফলে আমাদের মাথায় হাত পড়েছে।’

লেখাপড়ার পাশাপাশি শিম চাষ করেন কলেজছাত্র সায়েম আহমেদ। তিনি বলেন- ‘বিভিন্ন কারণে প্রতিনিয়ত আমাদের দেশে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। যার ফলে শিমসহ সব ধরণের সবজি চাষ করতে অতিরিক্ত জমি পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। এতে করে অতিরিক্ত খরচও করতে হয়। কিন্তু প্রতিনিয়ত খরচ বাড়লেও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে শিমের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। এতে আমরা অনেক বিপাকে পড়ে গেছি।’

তিনি বলেন- ‘ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করলেও আমাদের কিছুই করার নাই। তবে যদি সরকার আমাদের এলাকায় একটি হিমাগার তৈরি করে দিতেন তাহলে আমাদের এই দুর্দিন থাকতো না।’

আব্দুল হক মুহিত বলেন- ‘আমাদের বাহুবলে শীতকালীন বিভিন্ন সবজির চাষ হয়। কিন্তু আমরা ভালো দাম পাই না। তাই আমাদের এলাকায় একটি হিমাগার প্রতিষ্ঠা দাবি করছি সরকারের কাছে।

তবে দাম বেশি না পাওয়ার বিশেষ ট্যাকনিক ব্যবহার করতে বললেন হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী।

তিনি বলেন- ‘আগাম অথবা শেষ সময়ে শিম চাষ করলে ভালো দাম পাওয়া যাবে। তাই কৃষকদের আগাম ও শেষ সময়ে শিম চাষ করতে হবে।'