কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেড়িয়েছে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে

  • আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, পাবনা বার্তা২৪.কম 
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পাবনা জেনারেল হাসপাতাল। ছবি: বার্তা২৪.কম

পাবনা জেনারেল হাসপাতাল। ছবি: বার্তা২৪.কম

কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেড়িয়ে এসেছে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ঝটিকা অভিযানে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ৪৯ জনের মধ্যে সহকারী পরিচালকসহ ৩৫ জন চিকিৎসককেই অনুপস্থিত পাওয়া গেছে।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রঞ্জন কুমার দত্ত এই অনুপস্থিতি আকস্মিক দাবি করেছেন। তবে দুদকের অনুসন্ধানে গত ৭ কর্মদিবসের হাজিরা খাতা এবং বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার হাজিরায় অনুপস্থিতির একই চিত্র উঠে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে হাসপাতালে আসা কয়েকজন রোগী ও তার স্বজনরা জানান, সকালেও অনেক ডাক্তার চেম্বার করে হাসপাতালে আসেন। দুপুর হতে না হতেই তারা আবার প্রাইভেট হাসপাতালে চলে যান।

রোগীর স্বজনদের দাবি, হাসপাতাল থেকেও অনেক সময় রোগীদের বিভিন্ন চেম্বার ও ক্লিনিকের ঠিকানা ধরিয়ে দিয়ে বলা হয়, ডাক্তার সাহেব সেখানে আছেন। ওখানে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন।

একাধিক সূত্র দাবি করছে, পাবনা জেনারেল হাসপাতালে বেশিরভাগ চিকিৎসক স্থানীয় হওয়ায় রাজনৈতিক তদবিরসহ ভিন্ন পথে এখানেই পোস্টিং নিচ্ছেন। এতে নির্বিঘ্নে সরকারি চাকরির আড়ালে অফিস চলাকালীন সময়েও প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে যাচ্ছে। অল্প দিনেই তারা বাড়ি-গাড়ির মালিকও হচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

পাবনার সচেতন মহলের দাবি, গরিব-দুস্থসহ জনগণের জন্য সরকারি ভাবে হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা চিকিৎসকদের সঙ্গে কমিশন ভিত্তিক আঁতাত করে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার নামে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা নিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে সর্বশান্ত করছে। এ বিষয়গুলোও দুদকের ঝটিকা অভিযানে কঠোর হস্তে দমনের দাবি তাদের।

দুদকের পাবনাস্থ সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আতিকুর রহমান জানান, দুদকের ডিডি (প্রশাসন) বরারব পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ৩৫ জন চিকিৎসকের অনুপস্থিতির তথ্য-প্রমাণসহ পাঠানো হয়েছে। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পরবর্তী নির্দেশ অনুসারে হাসপাতালে অনুপস্থিত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দুদক সূত্র জানায়, সোমবার (২১ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় দুদকের সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ঝটিকা অভিযানে যায় একটি টিম। সেখানে গিয়ে হাসপাতালের নিবন্ধন অনুযায়ী তারা জানতে পেরেছে, এই হাসপাতালে ৪৯ জন চিকিৎসক নিযুক্ত আছেন। অভিযানের সময় মাত্র ১৪ জন চিকিৎসককে উপস্থিত পেয়েছেন এবং হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রঞ্জন কুমার দত্তসহ ৩৫ জন চিকিৎসক অনুপস্থিত ছিলেন। তবে ঘণ্টাব্যাপী অভিযান পরিচালনার সময় সহকারী পরিচালকসহ কয়েকজন চিকিৎসক দেরিতে অফিসে আসেন। কিন্তু তারা দেরিতে অফিসে আসার যথাযথ কারণ দেখাতে পারেননি।

এদিকে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রঞ্জন কুমার দত্ত দাবি করেন, সকাল সাড়ে ৮টায় চিকিৎসকরা অফিসে উপস্থিত ছিলেন। আর অভিযান চালানো হয়েছে সকাল ৯টায়। অনেক সময় চিকিৎসকরা জরুরি রোগী দেখতে ব্যস্ত থাকেন। চিকিৎসকরা প্রায়ই হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে প্রথমে গুরুতর রোগী দেখতে ছুটে যান। যার কারণে মাঝে মধ্যে চিকিৎসকরা সময় মতো তাদের সরকারি হাজিরা প্রতিপালন করতে পারেন না। আবার অনেকের ব্যক্তিগত কারণেও দেরি হতে পারে। তার মানে এই নয় যে, তারা অনুপস্থিত।

নিজের দেরিতে অফিসে উপস্থিত হওয়ার কারণ হিসেবে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক জানান, অফিস সাড়ে ৮টায় শুরু হলেও ব্যক্তিগত কারণে সোমবার তার কিছুটা দেরি হয়ে গেছে।

আর হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, সহকারী পরিচালক ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট দেরি করে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে হাসপাতালে পৌঁছান।

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দলটি জেলার আটঘরিয়া ও চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। সেখানে বেশিরভাগ চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন। জেলা সিভিল সার্জন অফিসে অফিসিয়াল মিটিংয়ে উপস্থিত থাকায় কয়েকজন চিকিৎসক হাসপাতালে ছিলেন না বলেও জানায় দুদক।