লক্ষ্মীপুরে নিহত ৭: কুয়াশা-বেপরোয়া গতিই দুর্ঘটনার কারণ
চারদিকে ঘন কুয়াশা। তখনো অন্ধকার কাটেনি। আহত ছেলেকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছিল মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনরা। তারা ৫টি সিএনজি চালিত অটোরিকশাযোগে চন্দ্রগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। এর মধ্যে চারটি অটোরিকশা লক্ষ্মীপুরে পৌঁছালেও গন্তব্যে যেতে পারেনি একটি।
পথিমধ্যে ঢাকা-রায়পুর সড়কের মান্দারীর রতনপুর এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের ধাক্কায় ওই অটোরিকশাটি ধুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে পাশে থাকা পুকুরে পড়ে যায়। এ ঘটনায় সিএনজিতে থাকা একই পরিবারের ৬ জন নিহত হন। চালকও প্রাণে বাঁচেননি। মালবাহী ট্রাকটিও রাস্তার পাশে উল্টে পড়ে যায়।
এদিকে দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৬ জনকে হারিয়ে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ বসুদুহিতা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বুধবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে ঘটনাটির বিবরণ দেন অন্য অটোরিকশাতে থাকা শাহাব উদ্দিন। তিনি দুর্ঘটনায় নিহত নাসিমা বেগমের ভাই।
তিনি বলেন, ‘আমার ভাগিনা নাদিম মাহমুদ অন্তর চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। গতরাতে সদর উপজেলার সাদারঘর এলাকায় সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়েছে। আহত অবস্থায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। বুধবার ভোরে অন্তরের বাবা-মাসহ আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছিলাম। পথেই এ দুর্ঘটনায় আমার বোন-দুলাভাই, ভাগিনাসহ ৭ জন মারা যায়।’
সংঘর্ষে নিহতরা হলেন- চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নাদিম মাহমুদ অন্তরের বাবা শাহ আলম (৫০), মা নাসিমা বেগম (৪৫), নানী শামছুন্নাহার (৪২), ভাই অমিদ (৮), খালা রোকেয়া বেগম (৩৫) ও তার ছেলে রুবেল (১২) এবং সিএনজি চালক নুর হোসেন সোহাগ (২৫)।
এই সড়কের কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়ক উন্নয়নের কাজে পাশে থাকা প্রচুর গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এতে সামান্য কুয়াশাতেও সামনে থেকে আসা কিছু দেখা যায় না। গাছগুলো থাকাকালীন এমন সমস্যা কম হতো। গতরাতে প্রচণ্ড কুয়াশা পড়েছিল। এমন অবস্থায় হেডলাইট জ্বালালেও ২০ গজ দূরে কোনো যানবাহন আছে কিনা বোঝা যায় না।
চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক শাহজাহান খান জানান, সাড়ে ৪টার দিকে লক্ষ্মীপুর থেকে একটি মালবাহী ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট ১৪-০৬৭৭৭) মান্দারীর রতনপুর এলাকায় পৌঁছে। এ সময় চন্দ্রগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা লক্ষ্মীপুরমুখী একটি অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয় ট্রাকটি। এতে অটোরিকশাতে থাকা ৭ জন নিহত হন।
দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে তিনি আরও জানান, কুয়াশাচ্ছন্ন রাত ছিল। কুয়াশাচ্ছন্ন পরিস্থিতি ও ট্রাক-অটোরিকশার বেপরোয়া গতির কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটতে পারে।
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুরের এই ৭ জন ও এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ গত এক সপ্তাহে সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ জন মারা গেছে।