বাম্পার ফলন ও ভালো দাম, খুশি টমেটো চাষিরা
হবিগঞ্জে টমেটোর বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ায় খুশি চাষিরা। বর্তমানে চাষিরা প্রতি কেজি টমেটো পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন ১০/১২ টাকা করে। যেখানে অন্য বছর বিক্রি হতো মাত্র ৪/৫ টাকায়। ফলে গত বছরের লোকসান এ বছর কাটিয়ে উঠার স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় ২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ হাজার মেট্রিকটন। কিন্তু এ বছর লক্ষ্যমাত্র অতিক্রম করে জেলায় টমেটো উৎপাদন হয়েছে ৬০ হাজার মেট্রিক টনের উপরে।
গেল কয়েক বছরে টমেটো চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন হবিগঞ্জের মাধপুর উপজেলার চাষিরা। এ বছর আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় অন্য বছরের তুলনায় টমেটোর ফলন আরও বেশি হয়েছে। অনেক কৃষক আবার কৃষি অফিসের পরামর্শে পরবর্তীতে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করেন। এ পদ্ধতিতে টমেটো গাছে কোন ধরণের ক্ষতি বা পোকার আক্রমণ না হওয়ার অল্প দিনে বাম্পার ফলন আসে।
যে জমিতে অন্য বছর প্রতি হেক্টরে ১২/১৫ মেট্রিক টন টমেটো পাওয়া যেত। এ বছর গ্রাফটিং পদ্ধতির কারণে প্রতি হেক্টর জমিতে ফলন হয়েছে ২২ মেট্রিক টন।
অন্য বছর শীত মৌসুমের শেষের দিকে এক সাথে বিপুল পরিমাণ টমেটো উৎপাদন হওয়ায় পাইকারি বাজারে টমেটোর চাহিদা কমে যায়। ফলে পাইকরা প্রতি কেজি টমেটো ৪/৫ টার বেশি দামে কিনেন না। এমনকি গত বছর এই সময়টাতে টমেটো বিক্রি হয়ছে মাত্র ১ টাকা কেজি দরে। ফলে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়তে হয় কয়েক হাজার চাষিদের। কিন্তু এবছর চাষিরা বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভালো দামও পাচ্ছেন। প্রতি কেজি টমেটো পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১০/১২টাকা দরে। ফলে এবছর চাষিরা দ্বিগুণ ভাল পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
এ ব্যাপারে কৃষক সোলায়মান মিয়া জানান, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর টমেটোর ফল ভালো হয়েছে। আবার দামও অন্য বছরের তুলনায় দ্বিগুণ পাচ্ছি। ফলে আমাদের লাভও দ্বিগুণ হচ্ছে। তিনি বলেন- শেষ সময় পর্যন্ত যদি এই দাম থাকে আমার গত বছরের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারব।
কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, প্রতি বছরই টমেটোর বাম্পার ফলন হয়। কিন্তু সংরক্ষণ করতে না পারায় ভালো দাম পাওয়া পান না। ক্ষেত থেকে টমেটো তুলেই তাদেরকে বিক্রি করে দিতে হয় পাইকারের কাছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে পাইকারা লাভবান হলেও মাথায় হাত পড়ে উৎপাদনকারী কৃষকদের।
তিনি বলেন, এ বছর এখন পর্যন্ত ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। এখন ষে পর্যন্ত কেমন দাম থাকে সেটা দেখার পালা।
কৃষক বদু মিয়া জানান, এ অঞ্চলে একটি টমেটো সংরক্ষণাগার (হিমাগার) অত্যন্ত প্রয়োজন। আমরা সরকারের কাছে হিমাগারের জন্য আবেদন জানিয়েছি।
তিনি বলেন, একটি হিমাগার হলে এই এলাকার কয়েক হাজার কৃষক বাঁচতে পারবে।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী বলেন, গত বছর অসময়ের বৃষ্টিতে আগাম টমেটোর চাষিদের ব্যপক ক্ষতি হয়। পরে আমরা গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করায় পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিলে চাষিরা বাম্পার ফলন পান। কিন্তু হঠাৎ করেই বাজারে টমেটোর দাম কমে যাওয়ায় কৃকরা লোকসানের মূখে পড়েন। কিন্তু এ বছর কৃষকরা বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভালো দামও পাচ্ছেন। তাই গত বছরের লোকসান এ বছর তারা কাটিয়ে উঠবেন সহজেই।
তিনি বলেন- এই এলাকায় ব্যপক সবজি উৎপাদন হয়। তাই স্থানীয়ভাবে এসব সবজি সংরক্ষণের জন্য একটি সংরক্ষণাগার খুবই জরুরি। সংরক্ষণাগার নির্মাণ করলে এখানকার চাষিদের জীবন বদলে যেতে পারে।